প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন

তাগিদ দিয়ে ১৮ ব্যাংককে চিঠি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের

নিজস্ব প্রতিবেদক

বড় ব্যবসায়ীদের জন্য সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ শতভাগ বাস্তবায়নের কঠোর নীতি অনুসরণ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। দেশের সবকটি তফসিলি ব্যাংককে চিঠি দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বৃহৎ শিল্প সেবা খাতের প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন করতে। অন্যথায় ব্যর্থ ব্যাংকের জন্য বরাদ্দকৃত প্রণোদনার অর্থ প্রত্যাহার করে অন্য ব্যাংকের জন্য বরাদ্দ করা হবে।

দেশের বৃহৎ শিল্প সেবা খাতকে সুরক্ষা দিতে প্রথমে ৩০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে সরকার। পরবর্তী সময়ে প্যাকেজের সঙ্গে যুক্ত করা হয় আরো হাজার কোটি টাকা। বড় ব্যবসায়ীদের সুরক্ষায় ঘোষিত প্যাকেজ বাস্তবায়নের অগ্রগতি বেশ ভালো। এরই মধ্যে প্যাকেজের প্রায় ৮০ শতাংশ অর্থ বিতরণ করা হয়েছে। তবে সরকারি, বেসরকারি বিদেশী খাতের ১৮টি ব্যাংকের প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন পরিস্থিতি খুবই খারাপ। অবস্থায় ওই ১৮টি ব্যাংককে মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি নীতি বিভাগ থেকে চিঠি দেয়া হয়েছে।

করোনায় বিধ্বস্ত বৃহৎ শিল্প সেবা খাতের জন্য ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের নীতিমালা দেয়া হয় এপ্রিলের শুরুতে। দেশের তফসিলভুক্ত সবকটি ব্যাংকের অনুকূলে তাদের ঋণ পোর্টফোলিও অনুযায়ী প্যাকেজ থেকে অর্থপ্রাপ্তির পরিমাণ নির্ধারণ করে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্যাকেজ বাস্তবায়নের অগ্রগতি জানতে গত ১৭ জুন বড় ব্যাংকগুলোর শীর্ষ নির্বাহীদের সঙ্গে ভার্চুয়াল মাধ্যমে গভর্নর ফজলে কবির বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীরা জানান, জুলাইয়ের মধ্যেই প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ঋণ বিতরণ সিংহভাগ বাস্তবায়ন হয়ে যাবে। পরিপ্রেক্ষিতে প্রণোদনা প্যাকেজের শতভাগ বাস্তবায়নের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয় ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। কিন্তু আগস্ট শেষে দেখা যায়, ব্যাংকগুলো বৃহৎ শিল্প সেবা খাতের জন্য ঘোষিত প্যাকেজের ৭৫ শতাংশ বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছে। অন্যদিকে সিএসএমই খাতের জন্য ঘোষিত ২০ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজের বাস্তবায়নের হার মাত্র ১৭ শতাংশ। এছাড়া কৃষি নিম্ন আয়ের পেশাজীবীদের জন্য ঘোষিত প্যাকেজের বাস্তবায়ন ছিল ১০ শতাংশেরও কম। অবস্থায় সবকটি প্যাকেজের বাস্তবায়নের জন্য ব্যাংকগুলোকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত সময় দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে বৃহৎ শিল্প সেবা খাতের প্রণোদনা প্যাকেজের শতভাগ বাস্তবায়ন চলতি মাসেই সম্পন্ন করতে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

উদ্যোগের অংশ হিসেবে ব্যাংকগুলোকে দেয়া চিঠিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে পিছিয়ে পড়া ব্যাংকগুলো ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তাদের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের কত শতাংশ বাস্তবায়ন করতে পারবে, তা বাংলাদেশ ব্যাংককে জানাতে হবে। তথ্য জানাতে হবে ২২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে। বৃহৎ শিল্প সেবা খাতের প্যাকেজ ছাড়াও সিএসএমই, কৃষি নিম্ন আয়ের পেশাজীবীদের জন্য ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে তাগিদ দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে চিঠি দেয়া হয়েছে।

বৃহৎ শিল্প সেবা খাতের প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের সঙ্গে যুক্ত একাধিক কর্মকর্তা বণিক বার্তাকে জানান, খেলাপি ঋণ বেশি এমন ব্যাংকগুলোর প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের পরিস্থিতি খারাপ। ব্যাংকগুলো চলতি মাসের মধ্যে বরাদ্দকৃত অর্থ বিতরণ করতে পারবে, এমন সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না। অন্যদিকে কিছু ব্যাংক তাদের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ এরই মধ্যে বিতরণ করে ফেলেছে। আবার নতুন করে তারা অর্থ বরাদ্দের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে আবেদন জানিয়েছে। এজন্যই প্যাকেজ বাস্তবায়নে পিছিয়ে থাকা ব্যাংকগুলোর কাছে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কত টাকা বিতরণ করবে পারবে, সেটি জানতে চাওয়া হয়েছে। ব্যাংকগুলো থেকে তথ্য পাওয়ার পর, ব্যর্থ ব্যাংকের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ প্রত্যাহার করে, চাহিদা সক্ষমতা আছে, এমন ব্যাংকগুলোর অনুকূলে বরাদ্দ দেয়া হবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চিঠি এরই মধ্যে হাতে পেয়েছেন বলে জানান মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান। অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান বণিক বার্তাকে বলেন, চলতি মাসের মধ্যেই বেশির ভাগ ব্যাংক বৃহৎ শিল্প সেবা খাতের বরাদ্দকৃত প্রণোদনা প্যাকেজের অর্থ বিতরণ করতে পারবে। তবে কিছু ব্যাংক বরাদ্দকৃত পুরো অর্থ বিতরণ করার মতো যোগ্য গ্রাহক পাচ্ছে না। কারণ মেয়াদ শেষে ব্যাংকগুলোকেই অর্থ পরিশোধ করতে হবে। অবস্থায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে উদ্যোগ নিয়েছে সেটির দরকার ছিল। যেসব ব্যাংক প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে সক্ষম তাদের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমাণ বাড়িয়ে দুর্বল ব্যাংকের কমানো যায়। ব্যাংকগুলোর মূল চ্যালেঞ্জ হবে সিএসএমই, কৃষি নিম্ন আয়ের পেশাজীবীদের জন্য ঘোষিত প্যাকেজ বাস্তবায়ন করা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন