সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য বেশকিছু কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সরকার। এসব কর্মসূচিতে সুবিধাভোগী হওয়ার কথা ছিল শুধু হতদরিদ্রদের। যদিও সমাজের সচ্ছলরাই এ সুবিধা নিচ্ছেন সবচেয়ে বেশি। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।
‘উত্তর-পশ্চিম জেলাগুলোয় সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি বাস্তবায়নের কার্যকারিতা’ শীর্ষক গতকাল আয়োজিত এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। সভায় গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন সিপিডির রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান। নীলফামারী, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলার প্রায় দেড় হাজার পরিবারের সঙ্গে কথা বলে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ এবং অক্সফাম ইন বাংলাদেশ যৌথভাবে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। সভায় সঞ্চালনা করেন সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবি তাজুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক পারভীন আকতার, সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন প্রমুখ। আলোচনার সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ্য করা হয়, বয়স্ক ভাতা, অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলের উপবৃত্তি ও মাতৃত্বকালীন ভাতা—এ পাঁচ খাতে দরিদ্ররাই বঞ্চিত হচ্ছে বেশি। তাদের পরিবর্তে বেশি সুবিধা পাচ্ছে সচ্ছলরা। এসব কর্মসূচির আওতায় সুবিধাপ্রাপ্তদের মধ্যে দরিদ্র মাত্র ৩৪ দশমিক ৪০ শতাংশ। বাকি ৬৫ দশমিক ৬০ শতাংশই দরিদ্র নয়।
দেখা গিয়েছে, বয়স্ক ভাতা সুবিধাপ্রাপ্তদের মধ্যে দরিদ্র মাত্র ৩২ দশমিক ২০ শতাংশ। বাকি ৬৭ দশমিক ৮০ শতাংশকে দরিদ্র বলা চলে না। একইভাবে মাধ্যমিক স্কুল পর্যায়ে উপবৃত্তিপ্রাপ্তদের ৭২ শতাংশ দরিদ্র নয়। অন্যদিকে প্রাথমিক স্কুল পর্যায়ে উপবৃত্তিপ্রাপ্তদের মধ্যে দরিদ্র নয় এমন সুবিধাভোগীর হার ৬৩ দশমিক ৮০ শতাংশ।
এছাড়া অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও মাতৃত্বকালীন ভাতা—এ দুই কর্মসূচির আওতায়ও দরিদ্রদের বদলে সচ্ছলরাই সুবিধা নিচ্ছে বেশি। এর মধ্যে অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি প্রকল্পের আওতায় সুবিধাপ্রাপ্তদের মধ্যে দরিদ্র ৪৯ দশমিক ৬০ শতাংশ। দরিদ্র নয় এমন সুবিধাপ্রাপ্তের হার ৫০ দশমিক ৪০ শতাংশ। অন্যদিকে মাতৃত্বকালীন ভাতা সুবিধাপ্রাপ্তদের মধ্যে দরিদ্রের হার ৪১ দশমিক ৫০ শতাংশ। সচ্ছল রয়েছে ৫৮ দশমিক ৫০ শতাংশ।
এ বিষয়ে সভার প্রধান অতিথি এবি তাজুল ইসলাম বলেন, গরিব, হতদরিদ্র, বয়স্ক ভাতার তালিকা স্থানীয়ভাবে তৈরি করা হয়। তখন মেম্বার-চেয়ারম্যানদের মধ্যে দেশপ্রেম প্রবাহিত না হলে সঠিক তালিকা হয় না। এখানেও মেম্বার-চেয়ারম্যানরা তাদের স্বজনদের ক্লাস থেকে বেরিয়ে আসতে পারে না। সেজন্য এ তালিকায় অনেক দুর্বলতা আছে। এটাকে আমাদের অ্যাড্রেস (চিহ্নিত) করতে হবে, যাতে করে আমরা একটি পারফেক্ট ডাটাবেজ তৈরি করতে পারি। তাহলে মানুষ ন্যায়বিচার পাবে।
সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, দেশ ও জাতি এখনো যে পরিমাণে দরিদ্র এবং বিভিন্ন ধরনের ভঙ্গুরতার মধ্যে আছে তাদের জন্য আরো বেশি সরকারি সাহায্যের প্রয়োজন। বর্তমানে যে বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে, এটা এখনো পর্যাপ্ত নয়। এখনো অনেক স্থানে সরকারের সাহায্য পৌঁছেনি।
এ সময় তিনি সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমে স্বল্প দক্ষ নারীদের অংশগ্রহণ আরো ব্যাপক হারে বাড়ানোর পাশাপাশি নগর দরিদ্রদের ক্ষেত্র বৃদ্ধি, প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ ও চরম দারিদ্র্যপ্রবণ এলাকায় কর্মসূচির আওতা বাড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।