গ্যাস লাইনে লিকেজ জেলাজুড়ে আতঙ্ক

আমির হুসাইন স্মিথ নারায়ণগঞ্জ

নারায়ণগঞ্জে তিতাস গ্যাসের লাইনে লিকেজের কারণে জেলাজুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে। জেলার বিভিন্ন স্থানে গ্যাস লাইনের পাইপ ছিদ্র হয়ে প্রতিনিয়ত নির্গত হচ্ছে গ্যাস। প্রায়ই আগুন লেগে ঘটছে ছোটখাটো দুর্ঘটনাও।

তিতাস কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দিলেও সংস্কার করা হচ্ছে না লিকেজ হওয়া এসব লাইন। নাগরিক কমিটির নেতারা বলছেন, টাকা না দিলে কোনো সেবা মেলে না নারায়ণগঞ্জ তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে। সম্প্রতি পশ্চিম তল্লা বাইতুস সালাত জামে মসজিদে লাইনের লিকেজ দিয়ে গ্যাস নির্গত হয়ে বিদ্যুতের স্পার্ক থেকে আগুন ধরে বিস্ফোরণে ৩১ জন নিহত জন আহত হয়। ঘটনার পর গ্যাস নিয়ে দুর্ঘটনার শঙ্কা বেড়েছে জেলাবাসীর মধ্যে।

সাগরে নিম্নচাপের প্রভাবে কয়েক দিন ধরে নারায়ণগঞ্জে বেশ ভারি বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টির পানি জমে থাকায় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে গ্যাসের লিকেজ। জলাবদ্ধতার পানি ভেদ করে প্রতিনিয়ত বের হচ্ছে বুদ্বুদ। নগরীর চাঁদমারী-সস্তাপুর-সদর উপজেলা সড়ক, সিদ্ধিরগঞ্জের গোদনাইল, পাইনাদী, নতুন মহল্লা, হিরাঝিল, নয়াআটি, ফতুল্লার পাগলা, দেলপাড়া, রসুলপুর, দক্ষিণ সেহাচর, লালখা, রামামারবাগ, কাঠেরপুর, কোতালেরবাগ, লামাপাড়া, ইউনিকম, টেক্সটাইল মোড়, তক্কারমাঠ, পিলকুনি, দাপা, ইদ্রাকপুর, জোড়াপুলসহ বিভিন্ন জায়গায় তিতাস গ্যাসের জরাজীর্ণ পাইপের লিকেজ দিয়ে গ্যাস বের হচ্ছে। কিছুক্ষণ দাঁড়ালেই নাকে এসে গন্ধ লাগছে নির্গত গ্যাসের।

সস্তাপুর সড়কের বাসিন্দা আল-আমিন, ফাতেমা বেগম, রাজিয়া সুলতানা, শেফালী ঘোষসহ কয়েকজন জানালেন, চাঁদমারী থেকে সস্তাপুর পর্যন্ত সড়কটিতে কমপক্ষে ১৫-২০টি পয়েন্ট দিয়ে প্রতিনিয়ত নির্গত হচ্ছে গ্যাস। তিন-চার বছর ধরে পাইপ লিকেজ হয়ে গ্যাস নির্গত হচ্ছে। বিষয়টি তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষকে কয়েকবার জানানো হয়েছে। তিতাস গ্যাসের লোকজন সরেজমিন পরির্দশন করে সত্যতাও পেয়েছেন। কিন্তু গ্যাসলাইনের লিকেজ সংস্কারের জন্য ৫০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেছেন। ঘুষের টাকা না দেয়ায় গ্যাস লাইনের লিকেজ সংস্কার করেনি আজও। দীর্ঘদিন গ্যাসলাইনের লিকেজ মেরামত না করায় তাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে বলে জানান তারা।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ফতুল্লা শিল্পাঞ্চলের অনেক রাস্তা এখন আরসিসি ঢালাই। রাস্তা আরসিসি ঢালাইয়ের কারণে অনেক জায়গায় গ্যাস যে নির্গত হচ্ছে তা দেখা যাচ্ছে না। তবে ছুটির দিনে মিল-কারখানা বন্ধ হলে গ্যাস সরবরাহের লাইনে গ্যাসের চাপ বেড়ে যায়। এতে করে রাস্তা দিয়ে গ্যাস বের হতে না পেরে মাটির স্তর ভেদ করে আশপাশের ড্রেন বা নর্দমা দিয়ে গ্যাস বের হতে দেখা যায়। চলতি বছরের ২৫ মে রাত সাড়ে ১২টার দিকে হাসেম মিয়ার দোকান বাসাবাড়িতে গ্যাসের লিকেজ থেকে আগুন লেগে যায়। তখন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা গিয়ে আগুন নেভায়। পরে গ্যাসের লিকেজ মেরামত করে তিতাস। ঈদুল আজহার সময় পূর্ব সেহাচর এলাকার সুজন নামে একজনের বাসায় গ্যাসের রাইজার লিকেজ থেকে আগুন লাগে। পরে তা মেরামত করা হয়।

পশ্চিম তল্লা এলাকার শিক্ষিকা হোসনে আরা বেগম জানান, তাদের বাড়ির গ্যাসের রাইজার থেকে সব সময় গ্যাস নির্গত হয়। মসজিদে বিস্ফোরণের পর থেকে আতঙ্কে আছেন। তিতাস গ্যাসের কাছে অভিযোগ দেবেন মেরামত করার জন্য।

উল্লেখ্য, সেপ্টেম্বর এশার নামাজের সময় বাইতুস সালাত জামে মসজিদে বিস্ফোরণে ৩১ জন নিহত জন আহত হয়েছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন