আগস্টের মূল্যস্ফীতি প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী মূল্যস্ফীতি জুলাইয়ের তুলনায় আগস্টে শূন্য দশমিক ১৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৬৮ শতাংশে। সার্বিক মূল্যস্ফীতি শূন্য দশমিক ১৫ শতাংশ বাড়লেও খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়েছে শূন্য দশমিক ৩৮ শতাংশ। তবে বিবিএসের দেয়া তথ্য অনুযায়ী কমবেশি ৭০ শতাংশ মানুষের আবাসস্থল গ্রামে আগস্টে সার্বিক ও খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি জাতীয় সার্বিক ও খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতির হারকে ছাড়িয়ে গেছে। আগস্টে গ্রামে সার্বিক ও খাদ্যপণ্যের মূলস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে শূন্য দশমিক ১৭ ও শূন্য দশমিক ৪২ শতাংশ। করোনা মহামারীর প্রাদুর্ভাব, ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও জুন-আগস্টের চার দফা বন্যায় দেশের কমবেশি ৯০ শতাংশ মানুষের প্রধান খাদ্য চালসহ শাকসবজি, হাঁস-মুরগি, মাছ ইত্যাদি খাদ্যপণ্যের বিপুল পরিমাণ ক্ষতি এবং বিশ্বজুড়ে চাল, গমসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের মূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে দেশে আমন ধান কাটা মৌসুম শুরু হওয়া ও বাজারে শীতকালীন শাকসবজি আসার সময় পর্যন্ত দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী থাকবে বললে বোধহয় অত্যুক্তি করা হবে না। এটা এমন এক সময়ে ঘটছে যখন উপর্যুক্ত কারণে মানুষের আয় উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। আয় হ্রাসের সময় মূল্যস্ফীতি, বিশেষ করে খাদ্য মূল্যস্ফীতিতে কীভাবে সাধারণ মানুষের খাদ্যনিরাপত্তা হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে, তা আলোচনা করাই এ নিবন্ধের উদ্দেশ্য।
পত্রপত্রিকার খবর ও ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়, দেশের প্রধান খাদ্য চালসহ প্রায় সব ধরনের শাকসবজি, ডাল, গরুর মাংস, মুরগি, ডিম, ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ, আদা, রসুন, কাঁচামরিচ ইত্যাদির দামে ঊর্ধ্বগতি। ‘নাভিশ্বাস ভোক্তাসাধারণের: নিত্যপণ্যের অসহনীয় উত্তাপ’ শিরোনামে ১০ সেপ্টেম্বর যুগান্তরের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এক মাস আগের ৪২-৪৪ টাকার এক কেজি মোটা চালের দাম এখন ৪৮-৫০ টাকা। ১১৫-১২০ টাকার এক কেজি ব্রয়লার মুরগি এখন বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৩০ টাকায়। ডিম প্রতি ডজন ১০০-১০৫ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১১৫ টাকা। এক মাস আগের ৩৫-৪০ টাকার এক কেজি পেঁয়াজের বর্তমান দাম ৯০-১০০ টাকা। আদা প্রতি কেজি ২৪০ টাকা। ১৮০-২২০ টাকার প্রতি কেজি কাঁচামরিচ এখন বিক্রি হচ্ছে ২৪০ টাকায়। আলু ও পেঁপে ছাড়া ৫০ টাকার নিচে কোনো সবজি নেই। কোনো কোনো সবজি কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ১২০-১২৫ টাকায়। প্রথম আলোর ১১ সেপ্টেম্বরের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খুচরা বাজারে মোটা চাল প্রতি কেজি ৪৪ থেকে ৪৮ টাকা, মাঝারি চাল ৫০ থেকে ৫৩ টাকা এবং সরু চাল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। বেশির ভাগ সবজির কেজিপ্রতি দাম ৫০ থেকে ৮০ টাকা। আলু এক কেজি ৩৬ থেকে ৪০ টাকা। কাঁচামরিচ প্রতি কেজি ১৬০ থেকে ২০০ টাকা। খুচরা বাজারে দেশী পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৬৫-৭০ এবং ভারতীয় পেঁয়াজ ৫০-৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি রসুন বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৪০ টাকা। আদা প্রতি কেজি ২০০ থেকে ২৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ১২ সেপ্টেম্বর বণিক বার্তার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাইকারিতে ভোজ্যতেল ও চিনির অস্বাভাবিক দর বেড়েছে। পাইকারি বাজারের এক সপ্তাহের ব্যবধানে পাম অয়েলের দাম বেড়েছে মণে ১০০ টাকা। একই সময়ে মণপ্রতি ৫০ টাকা করে দাম বেড়েছে চিনির। পাইকারি বাজারের উত্তাপ যে খুচরা বাজারে দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে, তা বলাই বাহুল্য।
এদিকে খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) প্রাইস ইনডেক্স অনুযায়ী বিশ্বজুড়ে খাদ্যের দাম বেড়ে ছয় মাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। সংস্থাটি বলেছে, জুলাইয়ের তুলনায় ১ দশমিক ৯ শতাংশ বেড়ে আগস্টে খাদ্যশস্যের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক দাঁড়িয়েছে ৯৮ দশমিক ৭ পয়েন্টে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে ৭ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে চাল, গম, যব ও ভুট্টার দাম।
বাংলাদেশের প্রধান খাদ্য চালের মূল্যবৃদ্ধি বিশেষ তাত্পর্য বহন করে। শুধু পরিবারের ক্ষেত্রেই নয়, দেশের রাজনীতিতেও রয়েছে এর বিশেষ প্রভাব। তাই দেশের সব সরকারই চেয়েছে চালের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে। বর্তমানে চালের দাম বাড়ার কারণগুলোর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো: এক. ২০১৭-১৮ ও ২০১৮-১৯ অর্থবছরের তুলনায় সদ্য সমাপ্ত ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশে চাল উৎপাদন হ্রাস। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা অনুযায়ী ২০১৭-১৮ ও ২০১৮-১৯ অর্থবছরে যখন দেশে চাল উৎপাদন দাঁড়ায় ৩ কোটি ৬২ লাখ ৭৯ হাজার টন এবং ৩ কোটি ৬৪ লাখ টনে, তখন মে মাসে মার্কিন কৃষি বিভাগের (ইউএসডিএ) পূর্বাভাসে বলা হয়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশে মোট চাল উৎপাদন দাঁড়াবে ৩ কোটি ৬০ লাখ টনে। সরকার একদিকে যেমন সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে চাল উৎপাদনের হিসাব প্রকাশ করেনি, তেমনি অন্যদিকে ইউএসডিএর প্রাক্কলনকে এখন পর্যন্ত চ্যালেঞ্জ করেছে বলে জানা যায়নি। দুই. দেশে চাল উৎপাদনে শীর্ষস্থানে থাকা বোরো ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্য অর্জনে সরকারের ব্যর্থতা। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটের তথ্য মোতাবেক, সদ্য সমাপ্ত বোরো মৌসুমে কৃষকদের কাছ থেকে আট লাখ টন বোরো ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সংগৃহীত হয়েছে মাত্র দুই লাখ ১৩ হাজার ৩৭৪ টন। আর সাড়ে ১১ লাখ টন বোরো চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ওই তারিখ পর্যন্ত সংগ্রহ হয়েছে ৬ লাখ ৯২ হাজার ৭৬৮ হাজার টন। এদিকে ৯ সেপ্টেম্বর সরকারি খাদ্যগুদামে চাল ও গমের মজুদ দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখ ১৯ হাজার টন, যার মধ্যে চাল ১১ লাখ ৪৮ হাজার টন ও গম ২ লাখ ৭১ হাজার টন। অথচ সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরের মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে সরকারি গুদামে চাল ও গমের মজুদ ছিল ১৮ লাখ ৮৪ হাজার টন। সংগ্রহ বৃদ্ধির আশায় সরকার ৩১ আগস্ট থেকে ১৫ সেপ্টেম্ব পর্যন্ত বোরো সংগ্রহ অভিযানের সময় বৃদ্ধি করেছে। সরকারি গুদামে খাদ্যশস্যের অপর্যাপ্ত মজুদের সুযোগ নিয়ে চালকল মালিক ও চাল ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেশনের মাধ্যমে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে মুনাফা লুটছে। তিন. ২০১৯-২০ অর্থবছরে চাল উৎপাদনে প্রবৃদ্ধির হার যখন ঋণাত্মক, তখন আগের দুই বছরে জনসংখ্যা বেড়েছে কমপক্ষে ৪০ লাখ (প্রতি বছর ২০ লাখ)। এদিকে বৈশ্বিক করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে ১ এপ্রিল থেকে ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১ লাখ ১১ হাজার ১১১ জন প্রবাসী বাংলাদেশী দেশে ফিরেছেন বলে সম্প্রতি জাতীয় সংসদকে জানিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী। একটি বিদেশী মিডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক করোনার প্রাদুর্ভাব দীর্ঘায়িত হলে বাংলাদেশে ফেরত আসা প্রবাসীর সংখ্যা হতে পারে সাত লাখ। এদের জন্য দরকার অতিরিক্ত খাদ্যের। তিন. বৈশ্বিক করোনা মহামারীর কারণে বিশ্বজুড়ে খাদ্যের দাম, বিশেষ করে চাল ও গমের দামে সর্বোচ্চ বৃদ্ধি। বাংলাদেশ থেকে চাল আমদানির পরিমাণ কয়েক লাখ টনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও দ্বিতীয় খাদ্যশস্য গমের ক্ষেত্রে আমরা মূলত আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বর্তমানে বছরে গমের চাহিদা ৭০ লাখ টনের ওপরে হলেও আমাদের উৎপাদিত গমের পরিমাণ মাত্র ১২-১৩ লাখ টন। বাকিটা আমদানি করতে হয়। সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে আমদানীকৃত গমের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৪ লাখ ৩৪ হাজার টন (খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট)।
প্রধান খাদ্য চালের মূল্যবৃদ্ধি একাধিক কারণে সাধারণ মানুষের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এক. বিবিএসের সর্বশেষ হাউজহোল্ড ইনকাম অ্যান্ড এক্সপেন্ডিচার সার্ভে (হায়েস) ২০১৬ (চূড়ান্ত প্রতিবেদন ২০১৯ সালে প্রকাশিত) মোতাবেক জাতীয় পর্যায়ে একটি পরিবারের মাসিক মোট ব্যয়ের ৪৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ খরচ হয় খাদ্যে। আবার মাসিক মোট খাদ্য বাবদ খরচের ২৫ দশমিক ৯৩ শতাংশ ব্যয় হয় খাদ্যশস্য (চাল, গম) ক্রয়ে। দুই. চালের, বিশেষ করে মোটা চালের মূল্যবৃদ্ধির ক্ষতিকর প্রভাব ওই চালের সব শ্রেণীর ভোক্তার ওপর পড়লেও সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় দরিদ্র ও হতদরিদ্র পরিবারগুলো। হায়েস ২০১৬ মোতাবেক দেশের ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ অর্থাৎ কমবেশি চার কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। এদিকে একাধিক বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান যথা পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি), ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) এবং সিপিডির গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, করোনা মহামারীর প্রাদুর্ভাবে মে-জুনে দেশে দারিদ্র্যের হার দাঁড়ায় ৩৫-৪৩ শতাংশে। এতে দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ছয় কোটিতে। তবে পিপিআরসি ও বিআইজিডির সাম্প্রতিক এক নতুন গবেষণা অনুযায়ী সরকার অর্থনীতির প্রায় সব সেক্টরে স্বাভাবিক কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেয়ায় করোনা মহামারীর প্রাদুর্ভাবের কারণে এপ্রিলের ‘নতুন’ গরিবের সংখ্যা ২২ দশমিক ৯ শতাংশ থেকে ১ দশমিক ১ শতাংশ কমে ২১ দশমিক ৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এতে আরো বলা হয়েছে, করোনা মহামারী-পূর্বাবস্থার তুলনায় গরিব মানুষের আয় ৪২ শতাংশের নিচে রয়েছে। দারিদ্র্য হার উল্লম্ফনে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর এসব তথ্যকে সরকার চ্যালেঞ্জ করেছে বলে জানা নেই। তিন. শুধু দরিদ্র ও হতদরিদ্ররা নয়, চালের মূল্যবৃদ্ধিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্তরাও, বিশেষ করে যাদের আয় নির্দিষ্ট। চালের দামের ঊর্ধ্বগতির কারণে মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্তদের মাছ-মাংস, ডিম, দুধ অর্থাৎ আমিষজাতীয় খাবার কেনা অনেকটা কমিয়ে দিতে হবে। এতে তাদের পরিবারে, বিশেষ করে শিশু ও নারীদের মধ্যে পুষ্টির অভাব ঘটবে। খাদ্যে পুষ্টিমানের অভাবের কারণে বৈশ্বিক খাদ্যনিরাপত্তা তালিকায় বাংলাদেশের দুর্বল অবস্থান আরো দুর্বল হয়ে পড়বে।
খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি এমন এক সময়ে ঘটছে যখন মানুষের আয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমেছে। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি) ও অস্ট্রেলিয়ার ওয়াল্টার এলিজা হল ইনস্টিটিউটের সাম্প্রতিক এক যৌথ গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মহামারী করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে ৩০ মে পর্যন্ত সময়ে বাংলাদেশ সরকার ঘোষিত ছুটিতে ৯৬ শতাংশ পরিবারের গড় মাসিক উপার্জন কমেছে, ৯১ শতাংশ নিজেদের অর্থনৈতিকভাবে অস্থিতিশীল মনে করেছে এবং ৪৭ শতাংশ পরিবারের আয় দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গেছে। পরিবারগুলোর ৭০ শতাংশ ভুগেছে খাদ্যনিরাপত্তাহীনতায়। ১৫ শতাংশ খাদ্য সংকটে বা কোনো এক বেলা না খেয়ে থেকেছে। এ অবস্থার উল্লেখযোগ্য কোনো উন্নতি হয়নি। এর অন্যতম কারণ হলো, দেশে ৯০ শতাংশের বেশি কর্মসংস্থানের জোগানদাতা বেসরকারি খাতে কর্মসংস্থান এবং/অথবা বেতন হ্রাস। উল্লেখ্য, ‘এশিয়া-প্যাসিফিক এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সোস্যাল আউটলুক ২০১৮’-এর হিসাবে বাংলাদেশে মোট কর্মসংস্থানে সরকারি খাতের অবদান মাত্র ৩ দশমিক ২ শতাংশ। কর্মসংস্থানের ব্যাপারে মার্চ-মে সময়ের অবস্থার খুব একটা উন্নতি হয়নি। তৈরি পোশাক শিল্প খাত ছাড়া বেসরকারি খাতের অন্য সব প্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে স্বল্প মূলধনের প্রতিষ্ঠান এখন পর্যন্ত মাথা তুলে দাঁড়াতে সক্ষম হয়নি। ফলে কাজ হারানো অধিকাংশ কর্মীকে পুনরায় কাজ দেয়া তাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। মিডিয়ায় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী সরকারি প্রণোদনা গ্রহণ করার পরও অনেক পোশাক তৈরির কারখানায় কর্মী ছাঁটাই চলছে। এদিকে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের এক সাম্প্রতিক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, করোনা মহামারীর কারণে কারখানা বন্ধ, চাকরিচ্যুতি, বেতন বন্ধ বা আংশিক বেতনসহ নানা কারণে ৫২ শতাংশ শ্রমজীবী নারী আর্থিক সংকটে রয়েছেন।
এদিকে সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় বৃহৎ শিল্প ও সেবা খাতের ৩৩ হাজার কোটি এবং রফতানিমুখী শিল্পের বেতন-ভাতা খাতের ৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকার বিতরণ যথাক্রমে ৭০ দশমিক ৯০ এবং ১০০ শতাংশ নির্ধারিত সময়ে (৩১ আগস্ট) বাস্তবায়ন হলেও কৃষি খাতের (পোলট্রি, মত্স্য, প্রাণিসম্পদ, মৌসুমভিত্তিক ফুল ও ফল চাষ) পুনঃঅর্থায়ন ৫ হাজার কোটি টাকার স্কিমে বাস্তবায়নের হার ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ। নিম্নআয়ের পেশাজীবী, কৃষক ও ব্যবসায়ীর ৩ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা প্যাকেজের বাস্তবায়নের হার মাত্র ৯ দশমিক ৫৩ শতাংশ (বণিক বার্তা, ২ সেপ্টেম্বর)।
মোট কথা, যখন সাধারণ মানুষের আয় উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে, তখন খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি তাদের খাদ্যনিরাপত্তাকে হুমকির সম্মুখীন করেছে। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত খাদ্যনিরাপত্তার সংজ্ঞানুযায়ী তখনই খাদ্যনিরাপত্তা বিরাজমান, যখন সবার কর্মক্ষম, স্বাস্থ্যকর ও উৎপাদনমুখী জীবনযাপনের জন্য সবসময় পর্যাপ্ত পরিমাণে নিরাপদ ও পুষ্টি মানসম্পন্ন খাদ্যের লভ্যতা ও প্রাপ্তির ক্ষমতা বিদ্যমান থাকে। তাই এ মুহূর্তে যা প্রয়োজন তা হলো, যেকোনোভাবে সাধারণ মানুষের আয় বৃদ্ধির ব্যবস্থা করা। সাধারণ মানুষের, বিশেষ করে দরিদ্র ও নিম্নবিত্তদের আয় বৃদ্ধির ব্যবস্থা করা গেলে তাদের ক্রয়ক্ষমতা বাড়বে, যা তাদের খাদ্যনিরাপত্তা ঝুঁকি থেকে রক্ষা পেতে এবং জীবনধারণের মৌলিক উপকরণ জোগাড়ে সহায়তা করবে।
মো. আবদুল লতিফ মন্ডল: সাবেক খাদ্য সচিব
