এআরএম অধিগ্রহণ

প্রতিদ্বন্দ্বীদের তীব্র প্রতিক্রিয়ার মুখে এনভিডিয়া

বণিক বার্তা ডেস্ক

যুক্তরাজ্যভিত্তিক চিপ ডিজাইনার কোম্পানি এআরএম হোল্ডিংস কিনছে মার্কিন গ্রাফিকস চিপ নির্মাতা এনভিডিয়া। ৪০ বিলিয়ন বা হাজার কোটি ডলারের অধিগ্রহণ চুক্তি নিয়ে বৈশ্বিক চিপ বাজারের অন্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের তীব্র প্রতিক্রিয়ার মুখে পড়েছে এনভিডিয়া। বিশেষ করে দক্ষিণ কোরিয়া চীনের চিপ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো চুক্তিকে মোটেই ভালোভাবে দেখছে না। কারণ এর ফলে বৈশ্বিক চিপ ইন্ডাস্ট্রিতে একটি জায়ান্ট কোম্পানি সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে, যা অন্যদের জন্য হুমকির অন্যতম কারণ। খবর রয়টার্স।

গত কয়েক বছর ধরে চলা মার্কিন-চীন বাণিজ্যযুদ্ধে টালমাটাল বৈশ্বিক অর্থনীতি। এর মধ্যে নতুন করে দেশ দুটির মধ্যে তৈরি হয়েছে প্রযুক্তি বিরোধ। প্রযুক্তি খাতের বিরোধকে অনেকটাই চিপযুদ্ধও বলা চলে। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী চীনের আধিপত্যের লাগাম টেনে ধরতে মরিয়া হয়ে কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্র। এরই অংশ হিসেবে খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিজেদের দলে ভেড়ানোর মিশনে রয়েছে ওয়াশিংটন। প্রযুক্তি খাতে বিজয়ী হওয়ার বাসনা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি নীলনকশা অনুযায়ী সম্প্রতি এআরএম হোল্ডিংস অধিগ্রহণের চুক্তি করেছে মার্কিন গ্রাফিকস চিপস নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এনভিডিয়া করপোরেশন। তবে এআরএম অধিগ্রহণের জন্য প্যারেন্ট কোম্পানি জাপানভিত্তিক সফটব্যাংক গ্রুপের সঙ্গে চুক্তি এরই মধ্যে বৈশ্বিক চিপ খাতের প্রতিপক্ষ প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে তীব্র নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে।

এআরএম হোল্ডিংস ফোন এবং ট্যাবলেট ডিভাইসের জন্য চিপ প্রযুক্তি সরবরাহ করে আসছে। পাশাপাশি অত্যাধুনিক সব গাড়ি, ডাটা সেন্টার অন্যান্য ডিভাইসের জন্য প্রসেসর সরবরাহের কার্যক্রম জোরদার করেছে। এআরএম নিজে কোনো চিপ তৈরি না করলেও ইন্টেল করপোরেশন, কোয়ালকম ইনকরপোরেশন এবং স্যামসাং ইলেকট্রনিক্সের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোকে সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তি ডিজাইন সরবরাহ করে চিপ তৈরিতে সহায়তা দিয়ে আসছে। যেসব প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে এনভিডিয়ার সঙ্গে তাদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা দ্রুত বৃদ্ধি করছে। যদিও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো বেশ আগে থেকেই এনভিডিয়ার সঙ্গেও ব্যবসা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে এআরএম। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি এখন এনভিডিয়ার সঙ্গে একীভূত হয়ে গেলে সেটি বিরোধী প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য অপূরণীয় ক্ষতির কারণ হবে বলে মনে করা হচ্ছে। আর এতেই ক্ষোভ বেড়েছে এনভিডিয়ার প্রতিপক্ষ স্যামসাং কোয়ালকমের মতো চিপ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে।

বৈশ্বিক সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে এনভিডিয়ার প্রতিপক্ষ প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে এখন চিন্তার ভাঁজ ধরতে শুরু করেছে। কারণ তারা মনে করছে, অধিগ্রহণের ফলে এআরএম এখন পুরোপুরি মার্কিন নিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়বে, যাকে ওয়াশিংটন-বেইজিং প্রযুক্তিযুদ্ধে অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে হোয়াইট হাউজ। কারণ প্রযুক্তি খাতের চীনের একচ্ছত্র আধিপত্য রুখতে যুক্তরাষ্ট্র দেশটির জায়ান্ট প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়েসহ অন্য প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিজ দেশে এবং মিত্র দেশগুলোতে একের পর এক নিষেধাজ্ঞার কবলে ফেলছে। এর পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে নিজস্ব সেমিকন্ডাক্টর শিল্প উন্নত করতেও কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্র। ফলে অধিগ্রহণ এখন যুক্তরাষ্ট্রের বহুমুখী নীলনকশাকে সহজেই বাস্তবায়নে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার হতে পারে।

প্রযুক্তি খাতের বাজারবিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিসিএসের ভাইস প্রেসিডেন্ট জিওফ ব্লাবার মনে করেন, অধিগ্রহণ চুক্তি নিশ্চিতভাবে বিরোধী পক্ষ থেকে আরো বেশি নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি করবে। কারণ অধিগ্রহণ মূলত এআরএমের ইকোসিস্টেমের জন্য ক্ষতির কারণ হবে। এখন প্রতিষ্ঠানটি তার স্বকীয়তা হারাতে পারে। আর সেটি হলে এটির বাজার অবস্থান নষ্ট হতে শুরু করবে।

যদিও প্রতিষ্ঠান দুটোর শীর্ষ নির্বাহীরা বলছেন, তারা এআরএমের স্বকীয়তা ধরে রাখবেন। রয়টার্সকে দেয়া এক সাক্ষাত্কারে এনভিডিয়ার সিইও জেনসেন হুয়াং এবং এআরএমের সিইও সিমন সেগার জানিয়েছেন, এআরএমের যুক্তরাজ্যের প্রধান কার্যালয় ধরে রাখবে এনভিডিয়া, যা যুক্তরাষ্ট্রের রফতানি নিয়ন্ত্রিত আইন থেকে মুক্ত থাকবে। ফলে এটির লাইসেন্স মডেল উন্মুক্ত থাকবে। তবে প্রতিষ্ঠান দুটোর এমন আশ্বাস যে বাস্তবে খুব একটা দৃশ্যমান হবে না চুক্তি গ্রহণের কয়েক ঘণ্টা পর চীন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিষ্ঠানগুলোর তীব্র প্রতিক্রিয়ায় সেটি স্পষ্ট।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন