বছরের শুরু থেকে নভেল করোনাভাইরাসের মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়েছে চীন। ভাইরাস সংক্রমণ কমিয়ে আনা সম্ভব হলেও দেশটির ব্যবসা-বাণিজ্য, আমদানি-রফতানি তথা সামগ্রিক অর্থনীতিতে করোনা মহামারী ও লকডাউন বিরূপ ছাপ ফেলেছে। বাদ যায়নি ইস্পাত শিল্পও। করোনাকালে দেশটি থেকে শিল্প ধাতুটির রফতানিতে রীতিমতো ধস নেমেছে। চলতি বছরের প্রথম আট মাসে (জানুয়ারি-আগস্ট) দেশটি থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে ইস্পাত রফতানি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১৯ শতাংশ কমে পৌনে চার কোটি টনের কাছাকাছি নেমে এসেছে। এর বিপরীতে একই সময়ে চীনের বাজারে শিল্প ধাতুটির আমদানি বেড়েছে প্রায় ৬০ শতাংশ। চীনের জেনারেল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অব কাস্টমসের (জিএসিসি) সর্বশেষ মাসভিত্তিক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। খবর মাইস্টিল গ্লোবাল ও মেটাল বুলেটিন।
চীন বিশ্বের শীর্ষ ইস্পাত উৎপাদনকারী ও রফতানিকারক দেশ। জিএসিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের প্রথম আট মাসে চীন থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে সব মিলিয়ে ৩ কোটি ৬৬ লাখ টন ইস্পাত রফতানি হয়েছে। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় গত জানুয়ারি-আগস্ট সময়ে দেশটি থেকে শিল্প ধাতুটির রফতানি কমেছে ১৮ দশমিক ৬ শতাংশ। এর মধ্যে শুধু আগস্টে দেশটি থেকে ৩৬ লাখ ৮০ হাজার টন ইস্পাত রফতানি হয়েছে। ২০১৩ সালের জানুয়ারির পর এটাই চীন থেকে ইস্পাতের মাসভিত্তিক রফতানির সর্বনিম্ন রেকর্ড।
গত জুন থেকে চীনের বাজারে ইস্পাতের দাম তুলনামূলক বাড়তির দিকে রয়েছে। ওই সময় থেকে দেশটিতে শিল্প ধাতুটির চাহিদা ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করে। কেননা চীন থেকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়লেও সবার আগে করোনা সংক্রমণের লাগাম টানতে সফল হয়েছে দেশটি। লকডাউন উঠে গিয়ে স্থাবির অর্থনীতির গতি ফেরার সঙ্গে সঙ্গে ক্রমান্বয়ে চাঙ্গা হয়ে ওঠে ইস্পাতের চাহিদাও। এ পরিস্থিতি চীনের বাজারে শিল্প ধাতুটির মূল্যবৃদ্ধিতে প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে।
একই সময়ে ইউরোপ, এশিয়া এবং উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলো করোনা মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াই করছিল। কার্যত স্থবির হয়ে পড়ে এসব অঞ্চলের দেশগুলোর আমদানি-রফতানি কার্যক্রম। গতি হারায় সামগ্রিক অর্থনীতি। একদিকে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম শ্লথতা, অন্যদিকে চীনের বাজারে তুলনামূলক বাড়তি দাম—এ দুই কারণে জুনের পর থেকে চীনা ইস্পাতে আগ্রহ হারাতে শুরু করেন বিভিন্ন দেশের আমদানিকারকরা। এ ধারাবাহিকতায় আগস্টে দেশটি থেকে শিল্প ধাতুটির রফতানি ২০১৩ সালের জানুয়ারির পর সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমে এসেছে।
খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিজস্ব ইস্পাতের তুলনামূলক বাড়তি দাম চীনা শিল্প খাতকে আমদানিনির্ভর হতে উৎসাহিত করেছে। জুনের পর থেকে চীনের বাজারে প্রতি টন ইস্পাতের দাম ৪৪০ ডলারের আশপাশে ছিল। অথচ একই সময়ে চীনা আমদানিকারকরা বাইরে থেকে প্রতি টন ইস্পাত ৪২৫-৪৩৫ ডলারের মধ্যে আমদানির সুযোগ পেয়েছেন। ফলে অনেকেই শিল্প ধাতুটি আমদানিতে ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়ার প্রতি ঝুঁকেছেন। এ মূল্য পরিস্থিতি চীনের ইস্পাত রফতানি খাতকেও মন্দার মুখে ফেলেছে।
জিএসিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের জুলাইয়ে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে চীনা আমদানিকারকরা সব মিলিয়ে রেকর্ড ২৬ লাখ টন ইস্পাত আমদানি করেছিলেন। আগস্টে দেশটিতে শিল্প ধাতুটির আমদানি আগের মাসের তুলনায় সামান্য কমে ২২ লাখ ৪০ হাজার টনে নেমেছে। তবে বিশ্বের শীর্ষ ইস্পাত উৎপাদনকারী ও রফতানিকারক দেশ হিসেবে চীনে শিল্প ধাতুটির আমদানির এ পরিমাণ অনেক বেশি বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।
এদিকে চলতি বছরের প্রথম আট মাসে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে চীনা আমদানিকারকরা সব মিলিয়ে ১ কোটি ২২ লাখ টন ইস্পাত আমদানি করেছেন বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছে জিএসিসি। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় গত জানুয়ারি-আগস্ট সময়ে দেশটিতে শিল্প ধাতুটির আমদানি বেড়েছে ৫৯ দশমিক ৬ শতাংশ।
