নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল

যন্ত্রপাতি ক্রয়ে অনিয়মের অভিযোগ তদন্তে মাঠে দুদক

বণিক বার্তা প্রতিনিধি নোয়াখালী

২৫০ শয্যাবিশিষ্ট নোয়াখালী সরকারি জেনারেল হাসপাতালের ১০ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি ক্রয়ে অনিয়ম, দুর্নীতি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে অ্যাকচুয়াল টেকনোলজি (বিডি) লি. নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অনিয়ম করা হয়। এসব অনিয়মের অনুসন্ধানে মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এরই অংশ হিসেবে দুদকের একটি টিম সম্প্রতি হাসপাতাল পরিদর্শন করে অভিযোগের প্রাথমিক প্রমাণও পেয়েছে।

অনুসন্ধান দুদক কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩-১৪ ২০১৪-১৫ অর্থবছরে যন্ত্রপাতি ক্রয়ের বিজ্ঞপ্তি দেয় ২৫০ শয্যা নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল। টেন্ডার-পরবর্তী যন্ত্রপাতি ক্রয়ের আদেশ পায় অ্যাকচুয়াল টেকনোলজি (বিডি) লি. নামে একটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। চাহিদা অনুযায়ী ৩৫ লাখ টাকা মূল্যের সিআর এক্স-রে মেশিন-৫০০, আড়াই লাখ টাকার অটোমেশন, ৭১ লাখ টাকার দুটি পোর্টেবল ফোর-ডি আল্ট্রাসনোগ্রাফি, সাড়ে লাখ টাকার ১০টি আইসিইউ বেড, ২০ লাখ ৭০ হাজার টাকার ডেন্টাল চেয়ারসহ দুই দফায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওই ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় ১০ কোটি টাকার বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ক্রয় করে।

হাসপাতালের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, শুরু থেকেই এক্স-রে মেশিনটি ব্যবহার করা যায়নি। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান অ্যাকচুয়াল টেকনোলজি (বিডি) লিমিটেড এক্স-রে মেশিন ইনস্টল দিতে গিয়ে তা ইনস্টল দিতে পারেনি। ফলে একদিনের জন্যও ৩৫ লাখ টাকা মূল্যের সিআর এক্স-রে মেশিন-৫০০ ব্যবহার করা যায়নি। একাধিকবার ধরনা দিলেও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মেশিনটি ঠিক করে দেয়নি। পরবর্তী সময়ে কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের যোগসাজশে মেশিনের টাকা উত্তোলন করে নিয়ে যায় তারা। ফলে ছয় বছর ধরে মেশিনটি হাসপাতালে পড়ে রয়েছে। শুধু এক্স-রে মেশিন নয়, ৭১ লাখ টাকার দুটি পোর্টেবল ফোর-ডি আল্ট্রাসনোগ্রাফিও বিকল।

দুদকের একটি সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ১০ কোটি টাকার এসব সরঞ্জামের বেশির ভাগেরই হদিস নেই। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে আড়াই লাখ টাকার অটোমেশন, সাড়ে লাখ টাকার ১০টি আইসিইউ বেড, ২০ লাখ ৭০ হাজার টাকার ডেন্টাল চেয়ার। এছাড়া কয়েকটি পণ্য হাসপাতালে থাকলেও সেগুলো বিকল। ব্যবহার করতে পারেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। অথচ টাকা তুলে নিয়ে গেছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান।

সূত্র জানায়, দুদকের তদন্তের স্বার্থে স্বাস্থ্য বিভাগের কয়েকজন বিশেষজ্ঞ নিয়ে একটি টিম গঠন করে। তার মধ্যে রয়েছেন ঢাকা সিএমএসডির উপপরিচালক ডা. নিজামুদ্দিন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের (হাসপাতাল-) সহকারী পরিচালক ডা. আহসানুল হক, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শহিদুল ইসলাম, ঢাকা নিমিউ অ্যান্ড টিসির সহকারী প্রকৌশলী (ইলেকট্রনিকস) নাশিদ রহমান ঢাকা ডিপিএম হাসপাতালের ডা. সুরঞ্জিত দত্ত। বিশেষজ্ঞ টিমটি দুদক নোয়াখালী জেলা সমন্বিত কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সুবেল আহমদের নেতৃত্বে সম্প্রতি হাসপাতাল পরিদর্শন করেছেন। পরিদর্শনকালে অভিযোগের সত্যতা পেয়ে তারা একটি লিখিত দেন দুদক কার্যালয়ে।

বিষয়ে কথা হয় নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ডা. ফরিদ উদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, তত্কালীন সময় আমি দায়িত্বে ছিলাম না। তার পরও যেহেতু একটি অভিযোগ ওঠেছে, তাই আমি দুদককে সর্বাত্মক সহযোগিতা করছি। দুদক কার্যালয় থেকে যখন যেসব কাগজপত্র চাওয়া হচ্ছে তাও সরবরাহ করা হচ্ছে।

দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত নোয়াখালী জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এখনো পুরো বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। দুর্নীতিতে যে বা যারাই জড়িত থাকুক তা তদন্তপূর্বক সবার সামনে তুলে ধরা হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন