কঠোর সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ

২০২০ সালে বৈশ্বিক পর্যটন সংকুচিত হচ্ছে ৫৭%

বণিক বার্তা ডেস্ক

চলতি বছর বৈশ্বিক পর্যটনের চাহিদা ৫৭ শতাংশ সংকুচিত হতে পারে। নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে নেয়া কঠোর সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ কোয়ারেন্টিন পদক্ষেপের কারণে খাতটি বড় ধাক্কা খাচ্ছেএমন শঙ্কা ব্রিটিশ একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের। খবর কিয়োদো।

অক্সফোর্ড ইকোনমিকস সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে জানায়, বৈশ্বিক পর্যটন চাহিদা ২০১৯ সালের পর্যায়ে আসতে ২০২৪ সাল লেগে যেতে পারে। মহামারীর অর্থনৈতিক প্রভাব আন্তর্জাতিক ভ্রমণে অব্যাহত কঠোর বিধিনিষেধের কারণে অবকাশ খাত ব্যবসায় সফরের ওপর যে প্রভাব পড়েছে, তার কারণে এমনটা হচ্ছে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর ১৯৫০-এর দশকের পর থেকেই বৈশ্বিক পর্যটন খাতে বড় উল্লম্ফন দেখা যায়। জাতিসংঘ বিশ্ব পর্যটন সংস্থার (ইউএনডব্লিউটিও) অনুমান ১৯৫০ সালে বৈশ্বিক পর্যটকের সংখ্যা ছিল আড়াই কোটি। তার ৬৮ বছর পর ২০১৮ সালে এটা দাঁড়ায় ১৪০ কোটি। সে সময়ের তুলনায় পর্যটক বেড়েছিল ৫৬ গুণ।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি বলছে, যদিও অনেক দেশ তাদের সীমান্ত খুলছে, তবে ভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখা পর্যটন খাত চাঙ্গা করার মধ্যে ভারসাম্য স্থাপন কঠোর হয়ে দাঁড়াচ্ছে। আন্তর্জাতিক ভ্রমণের চেয়ে অভ্যন্তরীণ ভ্রমণ দ্রুত আরোগ্য লাভ করবে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়। ২০২২ সালের মধ্যেই অভ্যন্তরীণ ভ্রমণ ২০১৯ সালের পর্যায়ে চলে আসবে বলে মনে করছে অক্সফোর্ড ইকোনমিকস।

বৈশ্বিক পর্যটনে ৫৭ শতাংশ পতনের মানে হচ্ছে ৮৪ কোটি ৭০ লাখ কম পর্যটক আগমন। সব অঞ্চলেই পর্যটক আগমন কমবে। তবে উত্তর আমেরিকার গন্তব্যগুলোয় পর্যটক আগমনে সর্বোচ্চ ৭০ শতাংশ পতন হতে পারে। এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে পর্যটক আগমন কমবে ৫৭ শতাংশ। উত্তর-পূর্ব এশীয় গন্তব্যগুলোয় পর্যটক আগমন ৬১ শতাংশ সংকুচিত হতে পারে বলে পূর্বাভাসে বলা হচ্ছে।


গত জুলাইয়ে জাপানে বিদেশী পর্যটক আগমন ৯৯ দশমিক শতাংশ কমেছে। ১৪০টিরও বেশি দেশ অঞ্চলের পর্যটক আগমনে নিষেধাজ্ঞা দেয়ায় নিয়ে টানা চার মাস জাপানে পর্যটন আগমন কমেছে। 

সীমান্ত চালু পর্যটন খাত চাঙ্গায় বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া সত্ত্বেও ইউরোপে আন্তঃসীমান্তীয় ভ্রমণ কমবে ৫৬ শতাংশ বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি।

প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোর তুলনায় প্রধান নগরগুলোয় পর্যটন আগমন বড় আকারে সংকুচিত হচ্ছে। চলতি বছরে ব্যাংককে কোটি ৪৫ লাখ কম পর্যটক আসবে, যা থাইল্যান্ডের বাকি অংশের দুই-তৃতীয়াংশ পর্যটক হ্রাসের প্রায় সমান। 

সাধারণত চীন থেকে সিংহভাগ পর্যটক আসে ব্যাংককে। চলতি বছরের শুরুতে চীনা নববর্ষের ছুটিতে বড় ধাক্কা খেয়েছে থাইল্যান্ডের পর্যটন খাত। গত বছর ওই ছুটিতে চীন থেকেই প্রায় এক কোটি পর্যটক এসেছিল। অঞ্চলটির বিভিন্ন দেশ একে অন্যের জন্য সীমান্ত খুললেও শিগগিরই চীন থাইল্যান্ডের মধ্যে ফ্লাইট শুরু হচ্ছে না। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় থাইল্যান্ডে চার কোটি পর্যটক আগমন করেছে। গত বছর থাইল্যান্ডের মোট জিডিপির ১১ শতাংশেরও বেশি এসেছে পর্যটন থেকে। গত আগস্টে কয়েকটি দেশের সঙ্গে সীমিত আকারে যোগাযোগ চালুর পরিকল্পনা থাকলেও নতুন করে সংক্রমণ দেখা দেখায় ওই সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হটতে হয়েছে।

চীন অভ্যন্তরীণ পর্যটন শুরু করলেও আন্তর্জাতিক পর্যটনের জন্য তাদের সীমান্ত খুলছে না। এমনকি চীনা নাগরিকদেরও বিদেশ ভ্রমণ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছে চীন সরকার। তবে ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য চীনে আগমনের সুযোগ রাখছে তারা। ব্যবসায়ীরা চীনে এলে তাদের ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে যেতে হবে না। তবে তাদের চলাচল ব্যবসায় সংশ্লিষ্ট স্থানেই সীমাবদ্ধ রাখতে হবে।

যে ১০টি বড় শহরে পর্যটক আগমন সর্বোচ্চ কমবে, তার প্রায় সবগুলোই যুক্তরাষ্ট্রের। এর মধ্যে নিউইয়র্কে পর্যটক আগমন সংকুচিত হবে ৭৯ শতাংশ।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন