অননুমোদিত প্রোগ্রামে শিক্ষার্থী ভর্তি নিচ্ছে উত্তরা ইউনিভার্সিটি

সাইফ সুজন

বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে ওঠা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান উত্তরা ইউনিভার্সিটি। ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠা লাভের পর থেকে এমএসসি ইন কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) প্রোগ্রামের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। যদিও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) থেকে প্রোগ্রাম পরিচালনার কোনো অনুমোদনই নেয়া হয়নি। সে হিসেবে ১৭ বছর ধরে অননুমোদিত প্রোগ্রামে শিক্ষার্থী ভর্তি ডিগ্রি দিয়ে আসছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়।

অননুমোদিত প্রোগ্রাম পরিচালনার বিষয়টি নজরে এলে সম্প্রতি বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়ে উত্তরা ইউনিভার্সিটিকে চিঠি দিয়েছে ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগ। প্রসঙ্গে ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের পরিচালক . মো. ফখরুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, সম্প্রতি একটি সনদ যাচাইয়ের কাজ করতে গিয়ে দেখি উত্তরা ইউনিভার্সিটি এমএসসি ইন সিএসই ডিগ্রি প্রদান করছে। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়টিকে প্রোগ্রাম পরিচালনার অনুমোদন দেয়া হয়নি। এমনকি প্রোগ্রামের  জন্য কখনো আবেদনও করেনি তারা। তত্ক্ষণাৎ ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা যুক্তি দেখায়, তাদের এমএসসি ইন (কম্পিউটার সায়েন্স) সিএস প্রোগ্রামের অনুমোদন রয়েছে। সিএস প্রোগ্রামে শিক্ষার্থী না পাওয়ায় তারা সিএসই ডিগ্রি দিচ্ছে। এটা কোনো যুক্তি হতে পারে না। আমরা উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠিও দিয়েছি। খুব দ্রুতই বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়টির ওয়েবসাইটে গিয়েও এমএসসি ইন সিএসই প্রোগ্রামে শিক্ষার্থী ভর্তির প্রমাণ মেলে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়টির বিভিন্ন ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতেও এমএসসি ইন সিএসই প্রোগ্রামে ভর্তির অফার করা হচ্ছে। জানতে চাইলে উত্তরা ইউনিভার্সিটির ডেপুটি রেজিস্ট্রার আবদুর রহিম বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে এমএসসি ইন সিএস নামের প্রোগ্রাম অনুমোদিত ছিল। পরবর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল সিন্ডিকেটের অনুমোদনক্রমে ওই প্রোগ্রামকে এমএসসি ইন সিএসই করা হয়। তবে বিষয়টি ভুলক্রমে ইউজিসিকে জানানো হয়নি।

এদিকে শুধু প্রোগ্রাম নয়; অননুমোদিত ক্যাম্পাস ভবনে শিক্ষার্থী ভর্তির অভিযোগও রয়েছে উত্তরা ইউনিভার্সিটির বিরুদ্ধে। এজন্য ইউজিসির ওয়েবসাইটে উত্তরা ইউনিভার্সিটিকে লাল তারকায় চিহ্নিত করা হয়েছে। ইউজিসি বলছে, ঢাকা ঢাকার বাইরে পরিচালিত বেশকিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে অননুমোদিতভাবে সম্প্রসারিত ক্যাম্পাস বা ভবনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে। এসব ক্যাম্পাস বন্ধে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বিভিন্ন সময় নির্দেশনাও দিয়েছে ইউজিসি। অভিযোগের ভিত্তিতে গত বছর কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অননুমোদিত ক্যাম্পাস নিয়ে অনুসন্ধান চালায় ইউজিসি। অনুসন্ধানে কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অননুমোদিত ক্যাম্পাসের তথ্য উঠে আসে। ওই তালিকায়ও উঠে আসে উত্তরা ইউনিভার্সিটির নাম।

ইউজিসির ওই প্রতিবেদন মতে, উত্তরা ইউনিভার্সিটির অননুমোদিত সম্প্রসারিত ক্যাম্পাস রয়েছে আটটি। এর মধ্যে সাতটিই উত্তরায় অবস্থিত। এগুলো হলো হাউজ-, রোড-১৫, সেক্টর- (ইইই ক্যাম্পাস হিসেবে পরিচিত), হাউজ-, আলাওল এভিনিউ, সেক্টর- (টেক্সটাইল ক্যাম্পাস), হাউজ-১১, রোড-/ডি, সেক্টর- (ফ্যাশন ডিজাইন ক্যাম্পাস), হাউস-, রোড-১২, সেক্টর- ( ক্যাম্পাস), এনজেড সেন্টার, রোড-, সেক্টর-, হাউজ-১০, রবীন্দ্র সরণি, সেক্টর- (সিভিল বিল্ডিং) এবং স্কুল অব বিজনেস হিসেবে পরিচিত ক্যাম্পাসটি রয়েছে উত্তরার নম্বর সেক্টরের ১২ নং সড়কের নম্বর বাড়িতে। এর বাইরে মিরপুর হাউজিং এস্টেটে বিশ্ববিদ্যালয়টির আরেকটি অননুমোদিত সম্প্রসারিত ক্যাম্পাস রয়েছে বলে ইউজিসির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

যদিও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০-এর ১৩ ধারার () উপধারায় অনুমোদিত ক্যাম্পাস বিষয়ে বলা হয়েছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন পরিচালনার জন্য দেয়া সাময়িক অনুমতিপত্রে বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে যে শহর বা স্থানে অনুমোদিত ক্যাম্পাস স্থাপন পরিচালনা করা হবে; তার সুনির্দিষ্ট উল্লেখ থাকতে হবে। আইনের উপধারা ()- বলা হয়েছে, উপধারা ()-এর অধীনে উল্লিখিত শহর বা স্থানে সংশ্লিষ্ট বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদিত ক্যাম্পাস সীমিত রাখতে হবে। অন্য কোনো স্থানে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো কার্যক্রম পরিচালনা বা কোনো ক্যাম্পাস অথবা শাখা স্থাপন পরিচালনা করা যাবে না। অন্য এক উপধারায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদিত ক্যাম্পাসের স্থানে বা শহরে শর্তসাপেক্ষে অনুষদ বা ইনস্টিটিউট পরিচালনার আবেদনের সুযোগ রাখা হয়েছে, যা ইউজিসি পরিদর্শন সাপেক্ষে অনুমোদন দেবে। যদিও কোনো ধরনের অনুমোদন ছাড়াই ক্যাম্পাস সম্প্রসারণ করেছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন