পর্যালোচনা

শিক্ষা উপবৃত্তি: উপকারভোগীদের স্বার্থ ও পছন্দকে অগ্রাধিকার দিতে হবে

খন্দকার সাখাওয়াত আলী

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর পরই অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রাথমিক শিক্ষার উদ্দেশ্য নিয়ে ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু সরকারের উদ্যোগে দেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয় রাষ্ট্রায়ত্ত করা হয়। পরবর্তী সময়ে তা ধাপে ধাপে মাধ্যমিক পর্যায়ে সম্প্রসারণের প্রচেষ্টা হয়েছে। তার পরিধি বাড়ানোর পরিকল্পনা চলছে। গৃহীত এই জাতীয় নীতি বাস্তবায়নে প্রাথমিক মাধ্যমিক উপবৃত্তি লক্ষ্য অর্জনের অন্যতম একটি মাধ্যম। দুই দশকজুড়ে মাঠ পর্যায়ের চাহিদা, অভিজ্ঞতা সামর্থ্যের ভিত্তিতে উপবৃত্তি কর্মসূচির ধরন আকার-পরিধি বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় ২০২০ সালের প্রাথমিক শিক্ষা উপবৃত্তির আকার দাঁড়িয়েছে হাজার ৮০০ কোটি টাকা মাধ্যমিকে প্রতি বছর ৩১৫ কোটি টাকা উপবৃত্তি দেয়া হচ্ছে। মাধ্যমিকে মূলত দরিদ্র পরিবারগুলোর শিক্ষার্থীদের পারিবারিক খরচ খানিকটা সাশ্রয়ে ঝরে পড়ার হার কমাতে এই উপবৃত্তি দেয়া হয়।

নব্বইয়ের দশককে জাতিসংঘ দশকব্যাপী শিক্ষা দশক ঘোষণা করে। বাংলাদেশ দশকজুড়ে মৌলিক শিক্ষার ওপর গুরুত্ব বিনিয়োগ বাড়ায়। সমাজেও সমান গতিতে শিক্ষার চাহিদা উৎসাহ বাড়ছে। জাতিসংঘ সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি-২০০০-১৫) ঘোষণা করে। এমডিজি বাস্তবায়নে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ভালো ফল করে। শুরুতে ঝরে পড়ার হার কমাতে এবং মেয়েশিশুদের ক্লাসরুমে ধরে রাখার জন্য খাদ্যের বিনিময়ে শিক্ষা কর্মসূচি, পরবর্তী সময়ে উপবৃত্তি হিসেবে নগদ অর্থ প্রদান, পুষ্টিকর বিসু্কট বিতরণ মিড ডে মিলের পাইলটিং চলছে এবং দেশব্যাপী কার্যক্রমে নিয়ে যাওয়ার চিন্তাভাবনা পরিকল্পনা চলছে। এসব কর্মসূচির মধ্যে নগদ উপবৃত্তি সামাজিক সুরক্ষায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে চলেছে।

উল্লেখ্য, প্রবন্ধটি মূলত প্রাথমিক মাধ্যমিক পর্যায়ের উপবৃত্তি নিয়ে লেখা। আর উপকারভোগীরা সবাই প্রাথমিক মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থী। এর বড় অংশটি মেয়ে শিক্ষার্থী। প্রাথমিক মাধ্যমিক পর্যায়ে ঝরে পড়ার হার কমাতে, মেয়ে শিশুদের ক্লাসরুমে ধরে রাখতে এবং নারীর ক্ষমতায়নে কার্যক্রমগুলো বিশেষ অবদান রাখছে।

প্রাথমিক শিক্ষা: কাজের বিনিময়ে শিক্ষা থেকে উপবৃত্তি

১৯৯০ সালে বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা আইন করা হয়। আইন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ১৯৯২ সালে একক বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রাথমিক গণশিক্ষা অধিদপ্তর গঠন করা হয়। একই সঙ্গে ১৯৯৪ সালে পৃথক প্রাথমিক গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় করা হয়। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ চাহিদাভিত্তিক উদ্ভাবনমূলক কৌশল হিসেবে শর্তসাপেক্ষ নগদ প্রদান কর্মসূচি গ্রহণ করে, যা বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে এবং বাংলাদেশের কর্মসূচি থেকে শিক্ষা নিয়ে পৃথিবীর বহু দেশ নিজেদের দেশে তা প্রয়োগ করছে।

প্রথম খাদ্যের বিনিময়ে শিক্ষা (এমএফই) কর্মসূচি প্রাথমিক শিক্ষায় ঝরে পড়ার হার কমানোর জন্য উদ্ভাবনমূলক কৌশল শুরু করা হয় ১৯৯৩ সালে। কর্মসূচির আওতায় দেশের ২৭ শতাংশ এলাকা এবং প্রাথমিক শিক্ষার ৪০ শতাংশ দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীদের কাভার করা হতো। ২০০২-০৩ অর্থবছরে খাদ্যের বিনিময়ে শিক্ষা শর্তসাপেক্ষ অর্থসহায়তা উভয় কৌশল থেকে দেশব্যাপী প্রাথমিক শিক্ষা উপবৃত্তি চালু করা হয়। ১৯৯৬ সাল থেকে পাঁচ বছর প্রকল্প মেয়াদে কর্মসূচি চালু হয়। ২০২১ সালে চতুর্থ মেয়াদে পাঁচ বছরের প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হতে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে প্রকল্পটি বর্তমানে সম্পূর্ণ রাজস্ব খরচে আনার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। 

এমএফএসের মাধ্যমে শিক্ষা উপবৃত্তি

গত এক দশকে (২০০৯-১৯) ব্যাপক বড় ধরনের অবকাঠামোগত উন্নয়নের বাইরে দুটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশের উন্নয়ন সাধারণ চোখে দৃশ্যমান। প্রথমটি বিদ্যুৎ খাত এবং দ্বিতীয়টি ডিজিটাইজেশন। এই দুই খাতের উপকারভোগী সারা দেশের সাধারণ মানুষ। ২০০৯ সালের আওয়ামী লীগ সরকার বিদ্যুৎ তথ্যপ্রযুক্তির ওপর বিশেষ মনোযোগ দিয়েছিল। এই দুই খাতের উন্নয়ন এমএফএস খাতের অবকাঠামোগত ভিত্তিটি গড়ে দিয়েছে। তাই অতিমারীকালীন অনলাইন শিক্ষা, টিভি রেডিও ক্লাস উপবৃত্তি প্রদানে এই দুই অবকাঠামো নিয়ামক ভূমিকা পালন করেছে। সেই সঙ্গে এই দশকে দেশে দারিদ্র্য বিমোচনে সামাজিক সুরক্ষা খাতে উল্লেখযোগ্য হারে বিনিয়োগ বেড়েছে। ডিজিটাইজেশনের এই সাফল্য সর্বত্র দৃশ্যমান। বিশেষত আর্থিক অন্তর্ভুক্তি খাতে।

দেশের দুই শিক্ষা মন্ত্রণালয় (প্রাথমিক গণশিক্ষা এবং শিক্ষা) ২০১৪ সাল থেকে এমএফএস খাত ব্যবহার করে উপবৃত্তির টাকা দিয়েছে। উল্লেখ্য, এর আগে উভয় মন্ত্রণালয়ের উপবৃত্তির টাকা শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে পাঠাতে হতো। বর্তমানে তা এমএফএস অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে পাঠানো হচ্ছে। প্রসঙ্গত, সরকারের অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের লক্ষ্যে অর্থ মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে সামাজিক নিরাপত্তা জাল কর্মসূচির জন্য একটি একক গাইডলাইন দিয়েছে। যে গাইডলাইনে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, উপকারভোগীদের নিজেদের এমএফএস অপারেটর পছন্দের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে।

এমএফএস খাতে অভিজ্ঞতা অর্জন

বর্তমানে প্রাথমিক উপবৃত্তির টাকা গত বছরগুলোয় একটি এফএফএস অপারেটরের মাধ্যমে দেয়া হয়েছে। পরপর দুবার তারা প্রকল্পের জন্য কাজ করেছে। আগামী বছরের জুনে প্রাথমিক শিক্ষার উপবৃত্তি প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে। মেয়াদ শেষ হওয়ার পর প্রাথমিক শিক্ষার উপবৃত্তি, সরকারের রাজস্ব ব্যয়ের অন্তর্ভুক্তি হচ্ছে।

মাধ্যমিক পর্যায়ের উপবৃত্তির অভিজ্ঞতাটি মিশ্র। প্রথম দফায় মাধ্যমিক উপবৃত্তির টাকা পাঠানোর দায়িত্ব একটি এমএফএসকে দেয়া হয়। বর্তমানে আরেকটি এমএফএস সেবাদাতা সামাজিক দায়বদ্ধতার আওতায় বিনা খরচে মাধ্যমিকের উপবৃত্তির টাকা পৌঁছে দিচ্ছে। মাধ্যমিক পর্যায়ের এই উপবৃত্তির বিপুল পরিমাণ অর্থ মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস উপকারভোগীদের কাছে সরকার প্রদত্ত উপবৃত্তির অর্থ দ্রুততার সঙ্গে পৌঁছে দিচ্ছে।

নিচে গম-আটা পরবর্তী সময়ে শর্তসাপেক্ষ নগদ অর্থাৎ শিক্ষা উপবৃত্তির টাকা প্রদানের সার্বিক অভিজ্ঞতা অর্জনগুলোকে সংক্ষেপে উপস্থাপন করা হলো:

প্রথম স্তর: চাল-আটা যখন দেয়া হতো, তখন দুটি সমস্যা বা অভিযোগের কথা শোনা যেত। প্রথমত, ওজনে কম দেয়া হতো। দ্বিতীয়ত, দরিদ্র ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থীকে এই সহায়তা দেয়া হতো।

দ্বিতীয় স্তর: চাল-আটা থেকে শিক্ষা উপবৃত্তি, প্রাইমারি মাধ্যমিক পর্যায়ে চালু হয়েছে। শতভাগ শিশুকে এই উপবৃত্তির আওতায় আনা হচ্ছে। ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর এই স্তরে দুটো প্রধান চ্যালেঞ্জ দেখা যায়। প্রথমত, ব্যাংক থেকে ত্রৈমাসিক উপবৃত্তির টাকা সংগ্রহ করতে শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের প্রায় এক কর্মদিবস সময় নষ্ট হতো এবং প্রাপ্ত অর্থের এক-তৃতীয়াংশ খরচ হয়ে যেত। দ্বিতীয়ত, স্থানীয় ব্যাংকের কাছ থেকে উপকারভোগীরা রিয়েল টাইম সেবা পেতেন না। ব্যাংকে এই সেবা প্রদানের জন্য ১০ শতাংশ ওভার হেড হিসেবে খরচ হতো।

তৃতীয় স্তর: ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে সরে এসে এমএফএস অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে শিক্ষা উপবৃত্তি দেয়া হয়। ফলে বেশকিছু ইতিবাচক প্রভাব দেখা গেছে। ইতিবাচক এই পরিবর্তনগুলো দৃশ্যমান, যা নিচে তুলে ধরা হলো:

প্রথমত, এমএফএসের মাধ্যমে উপবৃত্তির টাকা দেয়ার ফলে শিক্ষার্থীরা রিয়েল টাইম সেবা পাচ্ছে। অর্থাৎ এমএফএসের মাধ্যমে টাকা প্রদানের সঙ্গে সঙ্গে উপকারভোগী এমএফএস অ্যাকাউন্টে সরাসরি চলে আসে।

দ্বিতীয়ত, এফএসএস অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে উপবৃত্তির টাকা  দেয়ার পরিপ্রেক্ষিতে উপবৃত্তির টাকা পাঠানোর জন্য ওভার হেড খরচ শতকরা ১০ টাকা থেকে কমে টাকা দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতি সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সামাজিক নিরাপত্তা জাল কর্মসূচির টাকা পাঠানোর জন্য একটি একক খরচ নির্ধারণ করা হয়েছে শূন্য দশমিক ৭০ শতাংশ, যা সামাজিক নিরাপত্তা জাল কর্মসূচির নগদ অর্থ প্রদানের ক্ষেত্রে একটি বড় অগ্রগতি।

তৃতীয়ত, এমএফএমের মাধ্যমে টাকা প্রদানের মাধ্যমে ব্যাপকভাবে গভর্ন্যান্সের উন্নয়ন হয়েছে। ব্যবস্থায় জাতীয় পরিচয়পত্রের ভিত্তিতে এমএফএস অপারেটররা কেইসির মাধ্যমে তাদের অ্যাকাউন্ট খুলে থাকে। কাজেই সবসময় উপকারভোগী নিশ্চিত হওয়ার একটি সুযোগ পায়।

চতুর্থত, উপবৃত্তির টাকা যখন ম্যানুয়ালি দেয়া হতো তখন শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবকদের বেশ সমস্যায় পড়তে হতো। কিন্তু এখন এমএফএস অপারেটরদের মাধ্যমে উপবৃত্তি দেয়ায় ঝামেলাবিহীনভাবে সবকিছু স্বচ্ছতার সঙ্গে করা সম্ভব হচ্ছে।

পঞ্চমত, দেশব্যাপী ছাত্রছাত্রীদের হাতে উপবৃত্তির টাকা পৌঁছানোর ব্যাপারটি প্রশাসনের দিক থেকে সহজ হয়েছে। ফলে এর মাধ্যমে লাভবান হচ্ছে সরকারও। মূল্যবান সময় রাষ্ট্রীয় অর্থের সাশ্রয় হয়েছে। বিভিন্ন দপ্তরের জটিলতা কমে পুরো প্রক্রিয়াটি হয়েছে আরো দ্রুত নিরাপদ।

ষষ্ঠত, এরই মধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয় সামাজিক নিরাপত্তা জাল কর্মসূচির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে সরকার বিভিন্ন সামাজিক গ্রুপ নগদ যে ভাতা প্রদান করে, তা অবশ্যই এমএফএসের মাধ্যমে প্রদান করতে হবে। সেই সঙ্গে এসব কর্মসূচির উপকারভোগীদের নিজেদের অপারেটর বাছাই করার স্বাধীনতা থাকবে।

সপ্তমত, এমএফএসের মাধ্যমে উপবৃত্তির টাকা বিতরণ করায় উপবৃত্তির সুবিধাভোগীদের টাকা তুলতে ব্যাংকের শাখায় যেতে হয় না। ফলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম অর্থাৎ ছাত্রছাত্রীরা ডিজিটাল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস সম্পর্কে বাস্তব ধারণা নিয়ে বেড়ে উঠছে। সেই সঙ্গে কভিড অতিমারীর সময় স্বচ্ছতা যথাযথভাবে উপবৃত্তির টাকা শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দেয়া সম্ভব।

এমএফএসের মাধ্যমে শিক্ষা উপবৃত্তি প্রদানের ব্যাপক উপকারের পাশাপাশি নতুন কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। বিভিন্ন সময়ে প্রশাসন চ্যালেঞ্জগুলোর ব্যাপারে নিজেরাও সচেতন। নিচে চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরা হলো:

এক. ২০১৪ সালে প্রাথমিক শিক্ষা উপবৃত্তির টাকা প্রদানের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের টেন্ডার ছাড়া একক বাছাই প্রক্রিয়ায় নতুন একটি এমএফএস সেবাদাতাকে নির্বাচন করা হয়। অন্যদিকে ম্যাধ্যমিক পর্যায়ে টেন্ডার করে এমএফএস অপারেটর বাছাই করা হয়েছিল। প্রথম বছর একটি পরের বছর আরেকটি এমএফএস অপারেটর সেবা প্রদানের সুযোগ পেয়েছে।

দুই. বিগত সময়ে এমএফএস অপারেটর বাছাইয়ের ক্ষেত্রে দুটি পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে। প্রথমটি হচ্ছে সাবজেক্টিভ বাছাই প্রক্রিয়া। সেখানে গভর্ন্যান্স ইস্যু নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ থেকে যায় এবং যা সরকারি ক্রয় নীতিমালাবিরোধী। দ্বিতীয়টি টেন্ডার প্রক্রিয়া, যা অধিকতর স্বচ্ছ। তবে প্রক্রিয়ায়ও গ্রাহক বা উপকারভোগীদের মূল স্টেকহোল্ডার হিসেবে নিজেদের মতামত দেয়ার কোনো সুযোগ পায় না।

তিন. বিগত দিনের অভিজ্ঞতা থেকে সরকারি কর্মসূচির সফল বাস্তবায়ন উপকারভোগীদের স্বার্থে এমএফএস অপারেটরদের বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কয়েকটি প্রধান বিষয় বা সূচক বিবেচনায় রাখা দরকার। . সহজলভ্যতা অর্থাৎ হাঁটা পথের দূরত্বে যেন এজেন্ট পাওয়া যায়, . বাংলাদেশ ব্যাংকের এমএফএসের রেগুলেটরি বিধিমালা সব বিধিনিষেধ মেনে চলে শুধু এমন প্রতিষ্ঠান, . প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা স্বচ্ছতা, . রিয়েল টাইমে উপকারভোগীদের টাকা উত্তোলনের সুযোগ প্রদানের সক্ষমতা, . সাইবার সিকিউরিটি মানি লন্ডারিংয়ের ব্যাপারে সর্্বোচ্চ উদ্যোগী সার্বক্ষণিক সর্তকতা। এই পাঁচটি সূচক প্রাথমিক বাছাইয়ের মানদণ্ড হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।

চার. শিক্ষা উপবৃত্তির টাকা এমএফএসের মাধ্যমে দেয়ার ক্ষেত্রে কোন এমএফএস অপারেটর উপকারভোগী ব্যবহার করবেন, তা পছন্দ বা বাছাই করার তার সুযোগ থাকতে হবে প্রথম। এটা করা হলে তিনটি ক্ষেত্রে স্পষ্টভাবে সরকারের কর্মসূচির সাফল্যে উপকারভোগীদের স্বার্থ সংরক্ষণে সহায়তা করবে। বিষয় তিনটি যথাক্রমে . উপকারভোগীদের পছন্দের সুযোগ দিলে ব্যবহারকারীরা ক্ষমতায়িত হবে। দোষারোপের সুযোগ কমে যাবে। সেবা নিয়ে অসুবিধা হলে উপকারভোগী এমএফএস অপারেটর পরিবর্তন করবে; . এমএফএস অপারেটররা প্রতিযোগিতাপূর্ণ বাজার ব্যবস্থায় সেবার মান উন্নত করতে বাধ্য হবে; . এমএফএস অপারেটররা বাজারে প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে টিকে থাকার জন্য মানসম্মত বিনিয়োগ, উন্নত প্রযুক্তি, ডিস্ট্রিবিউশন নেটওর্য়াক, মানসম্মত ব্যবস্থাপনাসহ প্রাতিষ্ঠানিকতার দিকে গুরুত্ব দিতে বাধ্য হবে।

পরিশেষে বলব, সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিকে অধিকতর কার্যকর করার লক্ষ্যে সরকার অধিকতর এমএফএস খাতকে ব্যবহারের কর্মপরিকল্পনা নিয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ব্যাপারে পথিকৃৎ ভূমিকা পালন করছে উপবৃত্তির মাধ্যমে। সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য চাই ডিজিটাল দৃষ্টিভঙ্গি দক্ষতা। অ্যানালগ আচার-দৃষ্টিভঙ্গি দক্ষতা দিয়ে আগামী দিনের অর্থনীতি সামাজিক খাত পরিচালনা করা সম্ভব নয়। তাই নেতৃত্বস্থানীয় নীতিনির্ধারকদের অবশ্যই সৃজনশীল উদ্যোক্তা, দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সাধারণের স্বার্থে সাহসী সিদ্ধান্ত নেয়ার দক্ষতা সামর্থ্যের পরিচয় দিতে হবে। সামাজিক সুরক্ষা খাতে উপকারভোগীদের স্বার্থ, অংশগ্রহণ পছন্দকে প্রথমে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

[পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) পরিচালিত  বাংলাদেশ পলিসি অ্যাডভোকেসি ইনিসিয়েটিভ (পিএআই)-এর অধীন প্রকাশিত]

খন্দকার সাখাওয়াত আলী: সমাজতাত্ত্বিক গবেষক
প্রতিষ্ঠাতা নলেজ অ্যালায়েন্স

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন