অপরিশোধিত জ্বালানি তেল

২০২১ সালের শেষে ৬০ ডলারে উঠবে ব্যারেল

বণিক বার্তা ডেস্ক

অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক চাহিদা করোনা মহামারী-পূর্ববর্তী অবস্থানে ফিরতে ২০২১ সালের শেষ ভাগ পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। ফলে এর আগে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি পণ্যটির মূল্যবৃদ্ধির সম্ভাবনা ক্ষীণ। ২০২১ সালের শেষ দিকে গিয়ে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের ব্যারেল ৬০ ডলারে উন্নীত হতে পারে বলে মনে করছে নিউইয়র্কভিত্তিক বহুজাতিক বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান সিটি ব্যাংক। সিটি গ্রুপের গ্লোবাল হেড অব কমোডিটিজ এডওয়ার্ড মোজ সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন। খবর ব্লুমবার্গ অয়েলপ্রাইসডটকম।

ব্লুমবার্গের এক সাক্ষাত্কারে সিটি গ্রুপের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বাজারে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ চাহিদা বৃদ্ধি। করোনা মহামারীর শুরুর থেকে জ্বালানি পণ্যটির চাহিদায় যে পতন দেখা দিয়েছে সেটা থেকে উত্তরণের উপায় মেলেনি। এমনকি দেশে দেশে লকডাউন শিথিল হয়েছে, গতি ফিরতে শুরু করেছে অর্থনীতিতে। এর পরও অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক চাহিদায় ভাটার টান কাটেনি। বরং পরিস্থিতি আগামী বছর অবধি অপরিবর্তিত থাকার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে। পরিস্থিতিতে চাহিদায় বড় ধরনের উল্লম্ফন না ঘটলে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম খুব একটা বাড়বে না।

সিটি গ্রুপের এক নোটে বলা হয়েছে, সোমবার আন্তর্জাতিক বাজারে ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ৪০ ডলারের নিচে ছিল। আগামী বছরের শুরুর দিকে জ্বালানি পণ্যটির দাম বেড়ে ৫৫ ডলারে উন্নীত হতে পারে। আর বছরের শেষ নাগাদ প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুডের দাম দাঁড়াতে পারে ৬০ ডলারে। অনেকটা একই চিত্র দেখা যেতে পারে ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের (ডব্লিউটিআই) দামেও। সোমবার আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি ব্যারেল ডব্লিউটিআই ৩৭ ডলারে বেচাকেনা হয়েছে। আগামী বছরের শেষ নাগাদ জ্বালানি পণ্যটির দাম ব্যারেলপ্রতি ৫৮ ডলারে উন্নীত হওয়ার জোরালো সম্ভাবনা দেখছে প্রতিষ্ঠানটি।

শুধু সিটি ব্যাংক নয়, আরেক প্রভাবশালী মার্কিন বিনিয়োগ ব্যাংক গোল্ডম্যান স্যাকসের প্রতিবেদনেও অনেকটা একই ধরনের পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, ২০২১ সালের তৃতীয় প্রান্তিক (জুলাই-সেপ্টেম্বর) নাগাদ আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ৬৫ ডলারে উঠতে পারে। তবে বছরের শেষ দিকে গিয়ে জ্বালানি পণ্যটির দাম ব্যারেলপ্রতি ৫৮ ডলারে নেমে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। ২০২১ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিক নাগাদ আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি ব্যারেল ডব্লিউটিআইয়ের দাম উঠতে পারে ৫৫ ডলার ৮৮ সেন্টে। তবে বছরের শেষ দিকে গিয়ে ডব্লিউটিআইয়ের দাম ব্যারেলপ্রতি ৫১ ডলার ৩৮ সেন্টে নেমে আসার সম্ভাবনা দেখছে প্রতিষ্ঠানটি।

গোল্ডম্যান স্যাকসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী বসন্তে বিশ্বেজুড়ে করোনা ভ্যাকসিন মানুষের হাতের নাগালে আসতে পারে। ভ্যাকসিনের প্রাপ্যতা মানুষ অর্থনীতিতে আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনবে ভূমিকা রাখবে, যা অর্থনীতির গতি চাঙ্গা করার পাশাপাশি বিশ্বজুড়ে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের চাহিদা বাড়িয়ে দেবে। মূলত কারণে আগামী বছরের তৃতীয় প্রান্তিক নাগাদ আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম বাড়তে পারে।

তবে আগামী বছর নাগাদ আশার আলো দেখলেও চলতি বছরটা মন্দার মধ্য দিয়ে পার করবে জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজার এমন সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে সিটি গ্রুপ গোল্ডম্যান স্যাকস। তবে করোনাকালে জ্বালানি তেলের সম্ভাব্য বাজার পরিস্থিতি নিয়ে সবচেয়ে হতাশার কথা জানিয়েছে রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক সেন্ট্রাল ব্যাংক অব রাশিয়া। প্রতিষ্ঠানটির সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী দিনগুলোয় অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বাজারে প্রধানত দুটি বিষয় সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের জন্ম দিতে পারে। প্রথমত, করোনা-পরবর্তী বিশ্বের আর্থিক নীতি। দ্বিতীয়ত, ক্রমবর্ধমান ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা। দুটো ক্ষেত্রেই করোনা-পরিবর্তী বিশ্ব চরম অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে সময় পার করবে, যা দীর্ঘমেয়াদে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দরপতনের কারণ হতে পারে। এর জের ধরে ২০২১-২৩ সালের মধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের ব্যারেল ২৫ ডলারে নেমে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন