তুরস্কের প্রেসিডেন্টকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ প্রধানমন্ত্রীর

নিজস্ব প্রতিবেদক

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে তুরস্কের আঙ্কারায় নবনির্মিত বাংলাদেশ চ্যান্সারি কমপ্লেক্সের উদ্বোধনকালে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মাধ্যমে আমন্ত্রণ জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি জেনে আনন্দিত যে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শিগগিরই বাংলাদেশ সফর করবেন। আমি তাকে স্বাগত জানাই। আপনি কখন আসবেন আমরা সেই অপেক্ষায় থাকব। আমি আরো আনন্দিত হব যদি তুর্কি প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ সফর করেন। দয়া করে আমার শুভেচ্ছা আমন্ত্রণের বার্তা প্রেসিডেন্ট ফার্স্ট লেডির কাছে পৌঁছে দেবেন।

তুরস্কের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারে গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, তুরস্কের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের শিকড় অনেক গভীরে। ১৯৭৪ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের সঙ্গে তুরস্কের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের শুরু হয়। যদিও আমাদের সম্পর্কের শুরু ত্রয়োদশ শতাব্দীতে, তুর্কি জেনারেল ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজির বাংলা জয়ের মধ্য দিয়ে। পারস্পরিক আস্থা-বিশ্বাসে ইতিহাস, বিশ্বাস ঐতিহ্যের ওপর ভিত্তি করে দুই দেশের সম্পর্কের শিকড় অনেক গভীরে। দুই দেশের জনগণের সুবিধার জন্য বাংলাদেশ তুরস্কের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে আরো এগিয়ে নিতে আগ্রহী।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেয়া নীতিই আমাদের পররাষ্ট্র নীতির মূলনীতি।

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধু সমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্নই দেখেননি। তিনি ক্ষুধা, দারিদ্র্য, সংঘাতমুক্ত বিশ্বের স্বপ্নও দেখেছেন। মানবকল্যাণে বিশ্ব শান্তি নিরাপত্তার ওপর গুরুত্বারোপ করে গেছেন তিনি।

রোহিঙ্গা সংকটসহ বিভিন্ন ইস্যুতে বাংলাদেশের পাশে থাকার জন্য তুর্কি জনগণ দেশটির সরকারকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। বিশেষ করে তুর্কি প্রেসিডেন্ট তুর্কি ফার্স্ট লেডিকে ধন্যবাদ দেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে সব ধরনের সহায়তার জন্য ধন্যবাদ। আমি মনে করি, প্রায় তিন বছর হতে চলেছে। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর তাদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়া উচিত। আমি মনে করি তুরস্ক ইস্যুতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

আঙ্কারায় বাংলাদেশ দূতাবাস ভবন নির্মাণে তুর্কি কর্তৃপক্ষের সহযোগিতার প্রশংসা করেন শেখ হাসিনা বলেন, আঙ্কারায় স্থায়ী দূতাবাস কমপ্লেক্স তুরস্কের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কোন্নয়নে বাংলাদেশের অগ্রাধিকারকেই প্রকাশ করে। দুই বছরেরও কম সময়ে চ্যান্সারি কমপ্লেক্স নির্মাণ হওয়ায় সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ।

চলমান করোনা সংকটের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কভিড-১৯ মহামারীতে বিশ্ব এক কঠিন সময় পার করছে। মহামারী বিশ্বের অধিকাংশ দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এবং অর্থনীতিকে স্থবির করে দিয়েছে। বাংলাদেশে আমরা সফলতার সঙ্গে নভেল করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে পেরেছি। একই সময়ে আমাদের সময়োপযোগী সঠিক পদক্ষেপ এবং বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ নেয়ার মাধ্যমে প্রাণঘাতী ভাইরাসের ধ্বংসাত্মক প্রভাব কিছুটা মোকাবেলা করতে পেরেছি।  সময় প্রাণঘাতী করোনা মোকাবেলায় সফলতার জন্য তুর্কি নেতৃত্বেরও প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী।

আঙ্কারায় নবনির্মিত বাংলাদেশ চ্যান্সারি কমপ্লেক্স নির্মাণে বরাদ্দ ছিল ৪৫ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। তবে ভবনটি নির্মাণে কোটি ২৬ লাখ টাকা কম ব্যয় হয়েছে। ওই টাকা বাংলাদেশ সরকারের কোষাগারে ফেরত দেয়া হয়েছে।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী . কে আবদুল মোমেন তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত চাভুসগলু, তুরস্কে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম আল্লামা সিদ্দিকী।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন