ভ্যাকসিনের জরুরি অনুমোদন কতটা ফলপ্রসূ হবে?

বণিক বার্তা ডেস্ক

করোনাভাইরাস ভ্যাকসিন দৌড়ে ইমার্জেন্সি ইউজ অথরাইজেশন বা ইইউএ শব্দটির অনেক ব্যবহার দেখা যাচ্ছে। তবে জরুরি ব্যবহারের অনুমোদনের বিষয়টি আসলে কী এবং এটা কীভাবে ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে প্রয়োগ হয়? কোনো ভ্যাকসিন প্রার্থীকে জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দেয়া উচিত কিনা বা শেষ পর্যায়ের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল সম্পন্ন না করে অনুমোদনের বিষয়ে প্রচুর উদ্বেগ বিতর্ক রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রক সংস্থা খাদ্য ওষুধ প্রশাসনের (এফডিএ) ওয়েবসাইট অনুসারে, জনস্বাস্থ্যের জরুরি পরিস্থিতিতে অনুমোদনহীন মেডিকেল পণ্যগুলো যত দ্রুত সম্ভব উপলব্ধ করতে বিকল্প উপায় হলো ইইউএ। সুতরাং ইইউএ হলো স্বাস্থ্য জরুরি পরিস্থিতিতে কঠোর পরীক্ষা তদন্ত ছাড়া নির্দিষ্ট ব্যবহারের জন্য সম্ভাব্য সহায়ক মেডিকেল পণ্য পাওয়ার প্রক্রিয়াটি ত্বরান্বিত করা। এছাড়া জরুরি পরিস্থিতি শেষ হয়ে গেলে ইইউএ আর কার্যকর থাকে না। প্রস্তুতকারকরা তখন নিয়মিত অনুমোদনের জন্য এফডিএতে আবেদন করতে পারে।

কভিড-১৯ মহামারী চলাকালে এফডিএ ভেন্টিলেটর, মাস্কসহ ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম, অ্যান্টিজেন অ্যান্টিবডি টেস্ট, রেমডেসিভির প্লাজমা থেরাপির মতো বিষয়গুলোতে ইইউএ প্রদান করেছে। হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন ক্লোরোকুইনের ক্ষেত্রে পরবর্তী সময়ে ইইউএ বাতিল করা হয়েছে।

অনেক বিশেষজ্ঞ কভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে একটি ভ্যাকসিনকে জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দেয়া সমস্যা হিসেবে দেখছেন। কারণ সুস্থ মানুষদের পছন্দমতো ভ্যাকসিন দেয়া হয়, অন্যদিকে ওষুধগুলো সাধারণত মারাত্মক অসুস্থ রোগীদের দেয়া হয়, যা ব্যতীত তাদের অবস্থা আরো খারাপ হতে পারে। এফডিএ এরই মধ্যে বলেছে, তারা অন্তত ৫০ শতাংশ কার্যকারিতা দেখবে। এর অর্থ হলো কোনো ভ্যাকসিনের বিষয়ে বিবেচনা করার আগে সংক্রমণ বা গুরুতর অসুস্থতার ঝুঁকি অন্তত ৫০ শতাংশ হ্রাস করতে হবে।

মাসের শুরুতে বেইলর কলেজ অব মেডিসিনের ট্রপিক্যাল মেডিসিনের ডিন অধ্যাপক ডা. পিটার হোটেজ টুইটারে উল্লেখ করেন, ইইউএতে নিম্নমানের বা কম পর্যালোচনার মাধ্যমে কাজ সারা হয়। আপনি কীভাবে নিম্নমানের বা কম পর্যালোচনাকে ন্যায়সংগত করতে পারেন? যেখানে লাখ লাখ মানুষ সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকে?

এছাড়া হোটেজ উল্লেখ করেছেন, মডার্না ফাইজার/বায়োএনটেক ভ্যাকসিন দুটিতে এমআরএনএ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। নতুন প্রযুক্তিতে তৈরি কোনো ভ্যাকসিন আগে কখনো অনুমোদন পায়নি। ধরনের ভ্যাকসিনের বিষয়ে আমাদের কোনো ইতিহাস বা অতীত অভিজ্ঞতা নেই। এক্ষেত্রে ইইউএ দেয়া ভয়ংকর হতে পারে।

তিনি আরো বলেন, অত্যন্ত রাজনৈতিক পরিবেশে সরকার ফেডারেল সংস্থাগুলোর ওপর আস্থা বিশ্বাসের অভাব রয়েছে। আমরা দেখেছি ২০২০ সালে হোয়াইট হাউজ কীভাবে ইইউএ প্রক্রিয়াটির অপব্যবহার করেছে। হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইনের ক্ষেত্রে যা হলো তা ভুলে গেছেন?

এখানে আশঙ্কা রয়েছে যে রাজনৈতিক লাভের জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নভেম্বরের আগেই ভ্যাকসিন সহজলভ্য করতে চাইছেন। তিনি বেশ কয়েকবার বলেছেন, নির্বাচনের সময়ে কোনো না কোনো ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে। এফডিএ কমিশনার ডা. স্টিফেন হ্যানও বলেছেন, তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল শেষ হওয়ার আগেই তিনি একটি ভ্যাকসিনকে ইইউএ দেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করবেন।

এদিকে আবার আগস্টে সিএনএনের একটি জরিপে দেখা গেছে, আস্থার অভাবের কারণে ৪০ শতাংশ আমেরিকান ভ্যাকসিন গ্রহণে অনিচ্ছুক। এমন পরিস্থিতিতে ভ্যাকসিনের জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন কতটা কার্যকর হবে, তা দেখার জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।

সিএনএন

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন