ভ্যাকসিন নিয়ে পাশার দান

বণিক বার্তা ডেস্ক

যুক্তরাজ্য বিকাশের পর্যায়ে থাকা করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন সম্ভাব্য ছয়টি প্রস্তুতকারক কোম্পানি থেকে সব মিলিয়ে ৩৪০ মিলিয়ন ডোজ অর্ডার করে রেখেছে।

বলা হচ্ছে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন একটি প্রস্তুতকারকের সঙ্গে চুক্তি করেছে . বিলিয়ন মূল্যের, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র চুক্তি করেছে ছয়টি কোম্পানি থেকে ৮০০ মিলিয়ন ডোজের। ধনী দেশগুলো এমন কিছু জিনিসের জন্য অর্থ প্রদান করছে, যার কার্যকারিতা এখন পর্যন্ত প্রমাণিত হয়নি। নিজেদের অর্থনীতিকে পুনরায় জাগ্রত করতে যা কিছু করা দরকার তা তারা করতে ইচ্ছুক।

এমনও হতে পারে যে তারা বাজে ঘোড়ার ওপর বাজি ধরেছে। এটি একটি নজিরবিহীন লটারির মতো।

তারা যদিও পাশা ঘুরিয়েছে কিন্তু জানে না তাতে আদৌ কোনো লাভ হবে কিনা। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাজ্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্ডার করা অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনের বিকাশ আটকে গেছে একজন স্বেচ্ছাসেবক অসুস্থ হয়ে পড়ায়। যদিও সম্ভবত তা ভ্যাকসিন-সম্পর্কিত নয়। কিন্তু এমন কিছু হতেই পারে।

যদি ধনী দেশগুলো তাদের বাজিতে হেরে যায়, তখন তারা হয়তো কোভ্যাক্সের দরজায় কড়া নাড়বে। এটি মূলত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি উদ্যোগ, যাতে সবাই ভ্যাকসিনের বিকাশের ঝুঁকি ভাগ করবে, কিন্তু একটি বা একাধিক ভ্যাকসিন সামনে এলে তবে সবাই যেন উপকৃত হয়।

বর্তমানে অবিশ্বাস্যভাবে ৩২১টি সম্ভাব্য ভ্যাকসিন বিশ্বব্যাপী বিকাশের পর্যায়ে আছে, যেখানে ৩২টি ক্লিনিকাল ট্রায়ালে আছে। যার মুষ্টিমেয়ই আছে শেষ ধাপে। অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন ছাড়াও ইইউ বাজি ধরেছে বায়োএনটেক-পিফিজার, ভ্যালনেভা, জিএসকে-সানোফি, নোভাভ্যাক্স জানসেনের ওপর।

এক্ষেত্রে বাজি ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে, চারটা আলাদা আলাদা প্রযুক্তিতে তৈরি ভ্যাকসিন অর্ডার করা হয়েছে। কিন্তু ওয়েলকামের ডিরেক্টর স্যার জেরেমি ফারার বলেন, আমরা জানি না কোথা থেকে সেরা ভ্যাকসিনটি আসবে, যা কিনা নিরাপদ কার্যকর। এটি অন্তর্নিহিতভাবে ঝুঁকিপূর্ণ প্রচেষ্টা। আপনি কেবল একটি নির্দিষ্ট ভ্যাকসিনকে সমর্থন করতে পারেন না। আপনার হাতে পোর্টফোলিও থাকতে হবে, আপনাকে বাস্তববাদী হতে হবে যে শেষ ধাপে থাকা প্রতিটি ভ্যাকসিন কার্যকারিতা প্রমাণ করে সামনে আসতে পারবে না।

বিশ্বের বৃহত্তম পোর্টফোলিওটি কোভ্যাক্সের হাতে রয়েছে, যা কিনা দরিদ্র দেশগুলোকে একটি লাইফলাইন দিয়েছে, যারা অর্থ খরচ করতে পারে না জনগণের জন্য নতুন ভ্যাকসিন কেনার জন্য। অন্যদিকে ধনী দেশগুলোর জন্য কোভ্যাক্স হচ্ছে ইনস্যুরেন্স পলিসি।

ইউনিসেফ দরিদ্র দেশগুলোর জন্য বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে ভ্যাকসিন সংগ্রহ করে। জাতিসংঘে শিশুদের দাতব্য সংস্থাও কভিড-১৯ মহামারীতে একই ধরনের ভূমিকা রাখছে।

ইউনিসেফ কোভ্যাক্সের সমন্বয়ক গিয়ান গান্ধি বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগগুলোর মতো করে নিকটবর্তী কিছু করার ক্ষমতা কেবল যুক্তরাষ্ট্রের রয়েছে।

তিনি বলেন, কিন্তু এর মানে কি এটাই যে অন্য কোনো দেশ দ্বিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে কোভ্যাক্সে যুক্ত হওয়ার পরও সুবিধাপ্রাপ্ত হবে কিনা নিশ্চিত নয়, কারণ আমরা জানি না লাইসেন্স পাওয়ার ক্ষেত্রে এবং ব্যবহারের জন্য প্রস্তাবিত হওয়ার ক্ষেত্রে কোন প্রার্থী কেমন কার্যকারিতা দেখাবে। এর ফলে কোভ্যাক্স সুবিধা মূলত বিকল্প হিসেবে পরিচালিত হবে। যা অনেক দেশের ইনস্যুরেন্স পলিসির মতো। এখন পর্যন্ত ৭৮টি ধনী দেশ ইন্স্যুরেন্স পলিসিতে যুক্ত হয়েছে।

চুক্তিটা হচ্ছে তারা কোভ্যাক্সকে টাকা দেবে, যা চলে যাবে ভ্যাকসিন উৎপাদনকারীদের কাছে। ফলে কোভ্যাক্স উন্নত দেশগুলোকে সুযোগ দেবে কার্যকর ভ্যাকসিন পাওয়ার জন্য চুক্তি করতে, ফলে তারা যেগুলোতে বাজি ধরেছে তা যদি ব্যর্থ হয় তার পরও তাদের সামনে পথ থাকবে। কিন্তু তাদের এজন্য পুরো মূল্য পরিশোধ করতে হবে।

দ্য গার্ডিয়ান থেকে সংক্ষেপে অনূদিত

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন