গিয়েরমো দেল তোরোর সাক্ষাৎকার

‘অবাধ্যতা নিয়ে কথা বলার জন্য পিনোকিও একটা দারুণ চরিত্র’

অস্কারজয়ী মেক্সিকান পরিচালক গিয়েরমো দেল তোরোর একটি উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে সম্প্রতি, নেটফ্লিক্সে বের হয়েছে অ্যানিমেশন সিরিজ, পাইপলাইনে আছে দুটো ছবি। এর মধ্যেও লকডাউনে দিনে তিনটি করে ছবি দেখেছেন।

ফ্যান্টাসি আর সুপারন্যাচারাল জনরার বিশিষ্ট পরিচালক জন্মেছিলেন ১৯৬৪ সালে, মেক্সিকোয়। ১৯৯৩ সালে পরিচালক হিসেবে অভিষেকের আগে কাজ করেছেন স্পেশাল এফেক্ট মেকআপ ডিজাইনার হিসেবে। স্পেনে তিনি বহুল প্রশংসিত দুটো সুপারন্যাচারাল সিনেমা নির্মাণ করেন দ্য ডেভিল ব্যাকবোন এবং প্যান ল্যাবিরিন্থ। স্বৈরশাসক ফ্রাংকোর শাসনকে তুলে ধরে তিনি ছবি দুটোতে ফ্যান্টাসি, মিথকে ব্যবহার করেছিলেন।

হলিউডে তার উল্লেখযোগ্য কাজগুলো মধ্যে আছে দুটো হেলবয় ফিল্ম। রোবট বনাম দানবের এপিক প্যাসিফিক রিম, গথিক ড্রামা ক্রিমসন পিক, দ্য শেপ অব ওয়াটার (২০১৭) শেষেরটি ছিল এক মানবী উভচর সৃষ্টির মধ্যে প্রেম। ছবিটি সেরা পরিচালক সেরা ছবিসহ আরো বেশ কয়েকটি বিভাগে অস্কার জিতে নেয়। এছাড়া ভেনিস ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে গোল্ডেন লায়নও জেতে।

দেল তোরো প্রস্তুতি নিচ্ছেন বিখ্যাত শিশুতোষ ফ্যান্টাসি উপন্যাস পিনোকিওর একটি স্টপ-মোশন সংস্করণ নির্মাণের। অন্যদিকে সম্প্রতি নেটফ্লিক্সে মুক্তি পেয়েছে শিশুদের জন্য তার টেলস অব আর্কেডিয়া ট্রিলজির তৃতীয় ছবি ওয়াইজার্ড। এটি সিজিআই অ্যানিমেশন সিরিজ। চাক হোগানের সঙ্গে লেখা ফ্যান্টাসি উপন্যাস দ্য হলো ওয়ানস প্রকাশিত হয়েছে সম্প্রতি।

টরন্টো থেকে দেল তোরো সম্প্রতি কথা বলেছেন দ্য গার্ডিয়ানের জোনাথন রমনির সঙ্গে। সেখানে তিনি এখন তার নতুন ছবি নাইটমেয়ার অ্যালাইয়ের কাজ শুরু করেছেন। মার্চে করোনাভাইরাসের কারণে ছবির কাজ থেমে গিয়েছিল। ছবিতে অভিনয় করছেন উইলেম ডিফো, ব্রাডলি কুপার কেট ব্লানেচেট।

আপনি টুইটারে বেশ সক্রিয়। আপনার মন্তব্যগুলোতে সাংস্কৃতিক রাজনৈতিক মতামত থাকে। যেমন সম্প্রতি জালিসকো রাজ্যে মাস্ক না পরার কারণে গ্রেফতার পরে হত্যাকাণ্ডের শিকার জিওভান্নি লোপেজের কথা উল্লেখ করেছেন।

দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, এটা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। মেক্সিকোর অন্যান্য রাজ্যেও এমনটা ঘটছে। এসব ঘটনা একটি ট্র্যাজিক সত্যকে তুলে ধরে, যার মধ্যে আমরা প্রতিদিন মেক্সিকোয় বসবাস করি। ব্যাপারটা হলো পুলিশ আর অপরাধীদের মধ্যে কোনো পার্থক্য না থাকা। মেক্সিকোয় পুলিশকে নিয়ে আপনার প্রতিক্রিয়া হবে অবিশ্বাসের, অনাস্থার উদ্বেগের।

সোস্যাল মিডিয়ার কোন বিষয়টি আপনি উপভোগ করেন?

আপনাকে এটা সতর্কতার সঙ্গে ব্যবহার করতে হবে। আমি আমার জীবনে আমি যেসব জিনিস ভালোবাসি সেগুলোকে আমার রাজনৈতিক ধারণার সঙ্গে শৈল্পিকভাবে মিশিয়ে ফেলেছি। এটা আমার সিনেমার ক্ষেত্রে সত্য, আমার টুইটার অ্যাকাউন্টের জন্য সত্য। এমনকি আমার নিত্যদিনের জীবনটাও এমনই।

আমি মনে করি সোস্যাল মিডিয়ায় মানুষকে নাটক, সিনেমা, ইমেজ কিংবা ইমেজের স্রস্টাদের দিকে নির্দেশ করতে পারি যা তাদের সমৃদ্ধ করবে। সেসব হয়তো সাধারণ মানুষের কাছে খুব পরিচিত নয়। আমি চেষ্টা করি স্ক্যান্ডাল বা বিভক্তিমূলক উপদান নিয়ে কচকচ না করতে। আমি এটাকে পজিটিভ, ঋদ্ধ হওয়ার প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্যবহারের চেষ্টা করি।

সম্প্রতি আপনি পুনরায় মুক্তিপ্রাপ্ত নির্বাক ছবি, নতুন মেক্সিকান ছবি নিয়ে টুইট করেছেন...অনেক ছবি দেখছেন?

দিনে আমি ২০টা টুইট করতে পারি, কিন্তু সচেতনভাবেই সেটা করি না। কারণ আপনার জীবনে একটা অংশ আছে যা শুধু নিজের জন্যই থাকা উচিত।

কয়েকদিন আগে জিন কেলির জন্মদিনে আমি তার চারটি ছবি দেখেছি। আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না যে কোনগুলো দেখেছি, দ্য পাইরেট, ফর মি অ্যান্ড মাই গ্যাল...আমার বেশির ভাগ সময় কাটে বিভিন্ন ছবি আবার দেখে।

মহামারীতে দিনে তিনটা করে ছবি দেখার অভ্যাস হয়ে গেছে।

প্রথমে টরন্টোতে আমি বেশ কয়েক সপ্তাহ লকডাউনে ছিলাম। একেবারে বিচ্ছিন্ন, সামজিক দূরত্বে। এরপর একই অবস্থা হলো ক্যালিফোর্নিয়ায়।

অফিসে যেতে না হওয়ায় দিনে ঘুম বাদে পাওয়া যায় ১৮ ঘণ্টা। ঘণ্টা কাজ করে বাকি ঘণ্টায় তিনটা ছবি দেখা যায়। এর পরও নিজের ব্যক্তিগত দরকারি কাজ সেরে নেয়া যায়। পর্যাপ্ত সময় থাকাটা আশীর্বাদের মতো। ঘরে থেকে কাজ করার সুযোগটা আমার জন্য সৌভাগ্যের মতো। আমি এটা অপচয় না করার চেষ্টা করি।

আপনার অ্যানিমেশন সিরিজ টেলস অব আর্কেডিয়া নিয়ে শুনতে চাই। জনরায় কেন কাজ শুরু করলেন?

আমি পারিবারিক সিনেমা দেখার পরিবেশটা তৈরি করতে চাই। শিশু বয়সে আমার পরিবারে ঠিক যেমনটা ছিল। আমি ষাটের দশকে মেক্সিকোয় বড় হয়েছি ওসামা তেজুকার অ্যানিমেশন দেখে। আমাদের দেশে জাপানের অ্যানিমেশনের বিরাট প্রভাব ছিল। অ্যাস্ট্রো বয় দেখার স্মৃতি আমার এখনো মনে আছে, খুবই বেদনার্ত গল্প।

আপনি পিনোকিওর স্টপ মোশন তৈরি করবেন। সবাই জানে আপনি ফ্র্যাংকেনস্টাইন নিয়ে দারুণ আগ্রহী। আপনার পিনোকিও কি এক রকমের ফ্র্যাংকেনস্টাইন গল্প হবে?

আমার কাছে দুটো ঠিক এক রকম নয়। তবে একই ধরনের, তাদের মধ্যে সাদৃশ্য আছে। তারা উভয়ই সৃষ্টি, তাদের সৃষ্টি করে দুনিয়ায় ছুড়ে দেয়া হয়েছে, তাদের টিকে থাকার পথ তাদেরই তৈরি করতে হয়েছে। তাদের দুজনেরই নৈতিক, আধ্যাত্মিক জার্নি আছে। আমি মনে করি অবাধ্যতা নিয়ে কথা বলার জন্য পিনোকিও একটা দারুণ চরিত্র। আমার মনে হয় আনুগত্য কোনো গুণ নয় বরং বোঝা। অবাধ্যতা হচ্ছে রিজনের (কারণ) বীজ। এটা হচ্ছে নিজের আত্মাকে উপলব্ধি করার দরকারি উপায়। আমার মনে হয় এটা পিনোকিওর জন্য একটা দারুণ ব্যাকগ্রাউন্ড হতে পারে। আমরা পিনোকিওকে মুসোলিনির উত্থানের কালপর্বে হাজির করতে পারি, আজ্ঞা পালনে অস্বীকৃতি জানানো পাপেটের জন্য এটা একটা চিন্তা উদ্রেককারী কালপর্ব।

সংক্ষিপ্ত ভাষান্তর: শানজিদ অর্ণব

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন