গ্রেস কিরম্যানের জন্য এ-লেভেলের ফলাফলের দিনটি ভয়ানকভাবে শুরু হয়েছিল। নরউইচের কিরম্যান তার স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য প্রয়োজনীয় গ্রেড পাবেন কিনা, তা শোনার জন্য উদগ্রীব হয়ে অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু খুব খারাপ সংবাদ নিয়ে ই-মেইল এসেছিল। অ্যালগরিদম দ্বারা উৎপাদিত গ্রেডগুলো তার শিক্ষকদের পূর্বাভাসের চেয়ে কম ছিল এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বায়োকেমিস্ট্রিতে পড়ার অফারটি তার চোখের সামনে অদৃশ্য হয়ে গেল।
নটর ডেম উচ্চ বিদ্যালয়ের এ শিক্ষার্থী বলেন, ‘এখানে আমার কোনো দোষ ছিল না এবং এটা সত্যিই আমার সঙ্গে অন্যায় হয়েছিল।’ তিনি তার স্বপ্ন পূরণের জন্য এ-লেভেলে অত্যন্ত কঠোর পরিশ্রম করেছিলেন এবং তিনি প্রয়োজনীয় এ-প্লাস ও দুটি এ-গ্রেডের বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী ছিলেন।
কিন্তু নভেল করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে ব্রিটেনের গ্রীষ্মের পরীক্ষাগুলো বাতিল করা হয়েছিল এবং শিক্ষকের অনুমাননির্ভর গ্রেড প্রদান করা হবে বলে জানানো হয়েছিল। তবে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক সংস্থা অফকুয়াল অ্যালগরিদম ব্যবহার করে পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করে। সেখানে শিক্ষকদের দেয়া অনুমাননির্ভর গ্রেডের চেয়ে প্রায় ৪০ শতাংশ গ্রেড কম দেয়া হয়।
এ গ্রীষ্মে যুক্তরাজ্যজুড়ে এমন ফলাফল সমস্যা দেখা দিয়েছিল। ফলাফলে শিক্ষকদের অনুমাননির্ভর ফলের পরিবর্তে বরং আগের বছরের ফলাফলগুলোর দিকে বেশি মনোযোগ দেয়া হয়েছিল। এতে আগে কম গ্রেড পাওয়া শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
অফকুয়ালের জেনারেল কোয়ালিফিকেশনের নির্বাহী পরিচালক জুলি সোয়ান জানান, ৭ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে আউটলাইয়ার শিক্ষার্থীদের ঝুঁকির কথা তুলে ধরা হয়েছিল।
চলতি সপ্তাহে হাউজ অব কমন্সে ফলাফলটি নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী নিক গিবকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। উত্তরে গিব বলেন, সতর্কতাগুলো উপেক্ষা করা হয়নি। অফকাল আমাদের আশ্বাস দিয়েছিল যে সামগ্রিক মডেলটি সুষ্ঠু ছিল। তবে ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পর অসংগতি স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
১৩ আগস্ট এ-লেভেলের ফলাফলের দিনটি চরম বিভ্রান্তিকর ছিল। শিক্ষকদের পূর্বাভাসের তুলনায় গ্রেড কমিয়ে দেয়ায় চারদিক থেকে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। আইনজীবীরা একাধিক চ্যালেঞ্জের বিষয়ে সতর্ক করছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো জানত যে আপিলে গ্রেডগুলো পরিবর্তন হবে এবং আন্দোলনকারীরা প্ল্যাকার্ড নিয়ে ফলাফল ইউ-টার্নের দাবি করছিল। পরে ১৫ আগস্ট ফলাফলটি ওয়েবসাইট থেকে সরিয়ে দেয়া হয়।
অফকুয়ালের চেয়ারম্যান রজার টেইলরের মতে, পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল এবং ১৬ আগস্ট তারা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। সেদিন শিক্ষকদের অনুমাননির্ভর ফলই দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
গ্রীষ্মের এ বৃহত্তম ইউ-টার্নটি পরের দিনে জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয়েছিল এবং শিক্ষা সচিব গেভিন উইলিয়ামসন শিক্ষার্থীদের কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন। এ ঘটনায় শিক্ষা অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ বেসামরিক কর্মচারী জোনাথন স্লেটার চাকরি হারান।
ডববিসি
