কাজে নিরুৎসাহ একটি সংক্রামক ব্যাধিও বটে

মুত্তাকিন হাসান

সহকর্মীকে শুধুমাত্র ভয় দেখিয়ে কাজ করে নেয়া কর্মকর্তাকে কখনোই প্রতিষ্ঠানের জন্য সফল কর্মকর্তা বলা যায় না। নিজেকে শুধু বস ভাবলে চলবে না নেতাও ভাবতে হবে। প্রশংসা এবং কৃতজ্ঞতার সংস্কৃতি কর্মক্ষেত্রের পরিবেশকে অনুকূল করে তুলে। প্রশংসা মানুষের একটি মৌলিক প্রয়োজন। মানুষ মাত্রই ভুল করে। তাই সহকর্মীর ভুল না ধরে সুন্দর ভাষায় বুঝিয়ে দিয়ে নিজের গুরুত্ব রাখার পাশাপাশি সহকর্মীকে কাজে অনুপ্রাণিত করুন। শুধু ভুল ধরার জন্য বসে থাকলে সহকর্মীকে প্রশংসা করার অনুভূতি হারিয়ে যায়। কেউ যদি বিন্দুমাত্র প্রশংসিত না হয় তাহলে নিজেকে মূল্যহীনভাবে। কর্মীদের ভাল কাজের স্বীকৃতি প্রদান অর্থ তাদের কাজের মূল্য রয়েছে। যখন কর্মী এবং তাদের কাজের মূল্যায়ন করা হয়, তাদের সন্তুষ্টি এবং উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায় এবং তারা তাদের ভাল কাজ বজায় রাখতে বা উন্নত করতে উদ্বুদ্ধ হয়। তাই প্রশংসা ঘন ঘন হওয়া উচিৎ।   

বাৎসরিক পারফরম্যান্স পর্যালোচনা শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা উচিত নয়। যে সমস্ত লোকেরা প্রশংসিত হয় বা বোধ করেন তারা নিজের ক্ষমতা সম্পর্কে আরও ইতিবাচক হয় এবং ইতিবাচক আত্ম-সম্মানযুক্ত ব্যক্তিরা সব সময়ই নিজেদের সেরাটা দিতে চেষ্টা করে।    

ছোট বা বড় কোনও ব্যবসা পরিচালনার জন্য কর্মীদের সুখী ও অনুপ্রাণিত রাখা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটিকে অবহেলা করা মানে কর্মক্ষেত্রকে সামগ্রিক নেতিবাচক পরিবেশের আকারে সমস্যার দিকে পরিচালিত করে। এটি হ্রাস করতে  অনেক নিয়োগকারী পুরষ্কার এবং স্বীকৃতি প্রোগ্রাম করে।  এর উদ্দেশ্যটি হ'ল কর্মীদেরকে তাদের ভাল কাজের জন্য পুরস্কৃত করা এবং প্রশংসা প্রদর্শন করা যাতে তারা কাজে উত্সাহিত হয়। একজন কর্মীকে তার কাজের জন্য প্রশংসা এবং পুরস্কৃত করলে তার আরও ভালো কাজ করার স্পৃহা তৈরি হয়। আর এই প্রশংসা ও পুরস্কার সকলের সামনে দেওয়া হলে ওই কর্মীর কর্মোদ্যম আরও কয়েক গুণ বাড়ে। পাশাপাশি অন্যদের মাঝেও ভালো কাজ করার অনুপ্রেরণা তৈরি হয়। 

প্রশংসার অভাব কর্মীদেরকে কাজে অনুপ্রাণিত করে না। অনুপ্রেরণা এমন এক জিনিস যা অভিপ্রায়কে কর্মে রূপান্তর করে। কোনও কাজের সেটিংয়ে এটি ড্রাইভ যা লক্ষ্য-নির্দেশিত পারফরম্যান্স বজায় রাখতে সহায়তা করে। ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিজ্ঞানীরা এবং ব্যবসায়িক গবেষকরা কর্মচারীদের অনুপ্রেরণায় কী কী প্রণোদনা দেয় তা নির্ধারণ করতে অসংখ্য গবেষণা পরিচালনা করেছেন এবং বুঝতে পেরেছেন যে, ব্যক্তিদের প্রতিভা লালন করা এবং শক্তিশালী টীম গড়ে তোলার জন্য প্রশংসা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা একটি আনন্দকর এবং সুন্দর কাজের পরিবেশ গড়ে তুলতে সহায়তা করতে পারে। যাঁরা তাদের কর্মচারীদের প্রেরণা দিতে সক্ষম হয়েছেন তারা সফলভাবে উপলব্ধি করতে পারেন যে কর্মীরা অনুপ্রেরণা বোধ করলে কাজগুলি অর্জন করা কতটা সহজ।  

যাইহোক, অনেক কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি রয়েছে যা কর্মচারীদের অনুপ্রেরণাকে হত্যা করতে পারে। কর্মীদের অনুপ্রেরণা হত্যার জন্য পারফরম্যান্সের স্বীকৃতি এবং পুরষ্কার প্রদানে ব্যর্থতাই সবচেয়ে বড় বিষয়। কর্মচারীরা তাদের মূল সময় কর্মক্ষেত্রে ব্যয় করে। কর্মচারীরা কর্পোরেট নীতিমালা বা আচরণকে  যখন অন্যায় বা ভণ্ডামি হিসাবে বুঝতে পারে, তারা কেবল তাদের কার্য সম্পাদনে কম ঝুঁকছেন না, তারা কাজ থেকে নিজেকে দূরে রাখছেন।  

কাজে নিরুৎসাহ একটি  সংক্রামক ব্যাধিও বটে। একজনের নিরুৎসাহ অন্যদেরকে ঝুঁকির মধ্যে রাখে। পুরো টীম নিষ্প্রাণ হয়ে যায়। কাজের খাতিরে কাজ কিন্তু কাজে নিবিষ্টতা থাকে না। ফলে পুরো টীমের প্রোডাক্টিভিটি হ্রাস পায় এবং যার প্রভাব কোনো না কোনো  ভাবে কোম্পানি উপর পরে। সুতরাং, এটি সম্পর্কে সচেতন হওয়া এবং দেরি না করে সনাক্ত করা এবং মোকাবেলা করা গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের মনে রাখা উচিত যে ‘একটি পচা আপেল পুরো ঝুড়ি নষ্ট করতে পারে।    

কর্মচারীদের লক্ষ্য সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা দেয়ার পর তাদের তা অর্জনের সর্বশ্রেষ্ঠ উপায়টি খুঁজে নেওয়ার সুযোগ দিন। একটি সুন্দর কাজের পরিবেশ তৈরি করতে খুব বেশি অর্থের  প্রয়োজন পড়বে না, প্রয়োজন পড়বে শুধু কর্তা ব্যক্তিদের স্বচ্ছ ও উদার মানসিকতার।

ব্যবস্থাপক, মানব সম্পদ ও প্রশাসন
মুন্ডিফার্মা (বাংলাদেশ) প্রাইভেট লিমিটেড   

 


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন