দেশের সব মানুষকে টেলিফোনের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়ার এক অসাধারণ প্রচেষ্টা হলো টেলিসেবা। কভিড-১৯ টেলিহেলথ সেন্টার একটি স্বতন্ত্র সেবাদানকারী সেন্টার; যেখানে করোনা আক্রান্ত রোগীদের স্বাস্থ্য বিষয়ক পরামর্শ, রোগীর মেডিকেল অ্যাসেসমেন্ট, কাউন্সেলিং, ফলোআপ, কেয়ার গিভার কাউন্সেলিং, বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ দেয়া হয়। এছাড়া নানা সহযোগিতামূলক সেবা দেয়া হয়, যেমন জরুরি ভিত্তিতে অ্যাম্বুলেন্স, হাসপাতালে ভর্তি, খাদ্য ও জরুরি ওষুধ সহায়তা, মরদেহ সত্কার করা। এসব বিষয়ে মানুষের আস্থা অর্জন করতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও এটুআই, আইসিটি ডিভিশনের সরাসরি পরিকল্পনা ও তত্ত্বাবধায়নে কভিড-১৯ টেলিহেলথ ইউনিট কাজ করে যাচ্ছে এবং এক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার ও সার্বিক পরিচালনায় সহযোগিতা করছে স্বাস্থ্য বাতায়ন, সিনেসিস আইটি এবং অবকাঠামোগত দিকে সহযোগিতা করছে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস তথা বেসিস।
ইতোমধ্যে ৩ লাখ ৪ হাজার ৪২টি সেবা পৌঁছে গিয়েছে মানুষের দ্বারপ্রান্তে। করোনাকালীন এই সময়ে টেলিসেবা সাধারণ মানুষের জন্য অনেকটা আস্থা ও ভরসার জায়গা তৈরি করেছে। কভিড-১৯ টেলিহেলথ সার্ভিস সেন্টার থেকে ১০০ জন ডাক্তার ও ২০ জন হেলথ ইনফরমেশন অফিসার অক্লান্ত পরিশ্রম করে সব প্রতিবন্ধকতা সামলে হাসিমুখে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত দুই শিফটে সার্বক্ষণিক সেবা দিচ্ছেন তারা। এছাড়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ১৬২৬৩ ও ৩৩৩ নম্বর ছাড়াও কভিড-১৯ টেলিহেলথ সার্ভিস সেন্টারের হটলাইন নম্বর ০৯৬৬৬৭৭৭২২ থেকে সার্বক্ষণিক সেবা পাওয়া যাচ্ছে।
এটি শুধু দেশেই না দেশের বাইরেও সেবা দিয়ে যাচ্ছে। সরাসরি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমআইএস বিভাগ হতে করোনায় আক্রান্তদের তথ্য, যেমন বয়স, লিঙ্গ, অবস্থান, পরীক্ষার তারিখ ইত্যাদি সংগ্রহ করে আলাদা আলাদা প্রোফাইল বানানো হয় এবং আক্রান্তকে কভিড-১৯ টেলিহেলথ সার্ভিস সেন্টার থেকে যোগাযোগ করে পরামর্শ, সেবা এবং প্রয়োজনে কাউন্সেলিং করা হয়। রোগের তীব্রতা ও দীর্ঘমেয়াদি রোগের উপস্থিতির ভিত্তিতে চিসিৎসক পরবর্তী ফলোআপের তারিখ নির্ধারণ করেন এবং আরোগ্য লাভের সময়কালের মধ্যে তিন থেকে পাঁচবার ফলোআপ করা হয়।
করোনা আক্রান্ত রোগীদের মেডিকেল রিস্ক অ্যাসেসমেন্টের মাধ্যমে মূলত মাইল্ড, মডারেট এবং মিডিয়াম এ তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। গত ১৮ জুন হতে ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১ লাখ ২৮ হাজার ১০৭ জনকে মেডিকেল রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট এবং প্রায় ১ লাখ ৯ হাজার ৮০৪ জনকে ফলোআপ করা হয়েছে। এদের মধ্যে ঘরে চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন ১ লাখ ১৮ হাজার ৩৯৬ জন, হাসপাতালে আছেন ৫ হাজার ৮৬৭ জন। বিভিন্ন রোগ যেমন ডায়াবেটিস, হূদরোগ, কিডনি ইত্যাদিতে আক্রান্ত আছেন ২৮ হাজার ১০৭ জন।
এছাড়া ইনকামিং কলের মাধ্যমে ৬৬ হজার ১৩১ জন ফোন করে নিয়েছেন বিভিন্ন সেবা।
এ প্রসঙ্গে এটুআই, আইসিটি ডিভিশনের চিফ ই-গভর্ন্যান্স স্ট্র্যাটিজিস্ট ও চিফ কো-অর্ডিনেটর, কভিড-১৯ টেলিহেলথ সার্ভিস ফরহাদ জাহিদ শেখ বলেন, ‘মার্চের শেষের দিকে যখন পরিস্থিতি বেশ খারাপ হয়ে যায় তখন টেলিহেলথ সার্ভিসের মাধ্যমে করোনা আক্রান্ত রোগীদের সেবা দানের বিষয়টা বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। শুধু করোনা আক্রান্তদের জন্য ডিজি হেলথের নেতৃত্বে, এটুআই এবং আইসিটি ডিভিশনের সরাসরি তত্ত্বাবধানে, স্বাস্থ্য বাতায়ন, সিনেসিস আইটি ও বেসিসের কারিগরি সহযোগিতায় কভিড-১৯ টেলিহেলথ সেন্টার করা হয়েছে, যার মাধ্যমে করোনা আক্রান্ত রোগীদের ডাক্তারের পরামর্শ, প্রেসক্রিপশন, অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসসহ নানা সেবা প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়া বাংলাদেশের বাইরে তিনটি দেশে প্রবাসীরা এ সেবা পাচ্ছেন। কভিড-১৯ কালীন সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা যখন গুরুত্বপূর্ণ, তখন টেলিহেলথ ও টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে এ সেবা প্রদান প্রক্রিয়ায় কভিড রোগীদের ঘরে বসে ও হাতের মুঠোয় ডাক্তারি পরামর্শসেবাকে প্রয়োজনমাফিক পৌঁছে দেয়া খুবই সময়োপযোগী ও কার্যকর একটি বিষয়। এর মাধ্যমে রোগীদের শুধু সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাই নয়, বরং এর মাধ্যমে রোগীদের সময়, খরচ, যাতায়াত কমার পাশাপাশি তাদের ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি অনেক কমেছে।’
সিনেসিস হেলথের সিইও ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. নিজামউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ, কারণ ইতোমধ্যে বহু মানুষ এ সেবা গ্রহণ করেছে এবং আমি মনে করি, এত অল্প সময়ে অন্য কোনো উপায়ে এত মানুষ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সেবা পেত না। প্রতিদিনই ডাক্তাররা আক্রান্ত রোগীদের ফোন করেছেন। রোগীরা ডাক্তারদের ফোন করেছেন এবং এ পর্যন্ত দুই লাখের বেশি মানুষ এ সেবা গ্রহণ করেছে।’