সশস্ত্র বাহিনীতে উপযুক্ত কর্মকর্তা যেন পদোন্নতি পান : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

যেসব অফিসার সামরিক জীবনে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে যোগ্য নেতৃত্ব প্রদানে সফল হয়েছেন পদোন্নতির ক্ষেত্রে তাদেরই বিবেচনা করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল সশস্ত্র বাহিনী নির্বাচনী পর্ষদ, ২০২০-এর প্রথম পর্বের বৈঠকে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে আহ্বান জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে সশস্ত্র বাহিনীর অফিসারদের পদোন্নতির জন্য আধুনিক পদ্ধতি অর্থাৎ ট্রেস ট্যাবুলেটেড রেকর্ড অ্যান্ড কম্পারেটিভ ইভ্যালুয়েশনের মাধ্যমে তুলনামূলক মূল্যায়ন করে সিদ্ধান্ত নেন আপনারা। আমি চাই এর পাশাপাশি আপনারা এমন অফিসারদের বিবেচনায় আনেন, যিনি খাতাকলমে বেশি নম্বর না পেলেও ফিল্ডে ভালো কাজ করতে পারেন, কমান্ড করতে পারেন বা তাত্ক্ষণিক সিদ্ধান্ত নেয়ার মতো ক্ষমতা রাখেন। যেসব অফিসার সামরিক জীবনে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে যোগ্য নেতৃত্ব প্রদানে সফল হয়েছেন পদোন্নতির ক্ষেত্রে তাদের অবশ্যই বিবেচনা করবেন। আর যেকোনো কর্মকর্তাকে পদোন্নতির ক্ষেত্রে অবশ্যই তার পেশাগত মান, যোগ্যতা দক্ষতা বিবেচনা অগ্রাধিকার দেবেন।

শেখ হাসিনা বলেন, যেহেতু সশস্ত্র বাহিনী একটা সুশৃঙ্খল বাহিনী, সুশৃঙ্খল বাহিনীতে যারা পদোন্নতি পাবেন তারা সব সময় একটা শৃঙ্খলা রক্ষা করে চলতে পারবেন। কারণ শৃঙ্খলাটা আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের জন্য মেরুদণ্ড হিসেবে কাজ করে। কাজেই শৃঙ্খলা সম্পর্কে যারা যথেষ্ট সচেতন তারা যেমন ঊর্ধ্বতনদের প্রতি অনুগত থাকবেন, তেমনি অধস্তনদের ব্যাপারেও দায়িত্ববান হবেন। সেই ধরনের অফিসার আপনারা নিয়ে আসবেন যারা সৎ, বিশ্বস্ত অনুগত। কারণ সততা, বিশ্বস্ততা আনুগত্য না থাকলে কেউ ভালো নেতৃত্ব দিতে পারে না, ভালো দক্ষতার পরিচয় দিতে পারে না। কাজেই সেটা অত্যন্ত জরুরি। সেদিকে আপনারা বিশেষ দৃষ্টি দেবেন।

সরকারপ্রধান বলেন, আপনারা বোর্ডে বসে উপযুক্তদের নিয়ে আসবেন, যাতে আগামী দিনে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী আরো সুদক্ষ আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন হয়। আমরা যেন সব সময় আমাদের সশস্ত্র বাহিনী নিয়ে গর্ববোধ করতে পারি।

উপস্থিত কর্মকর্তাদের উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সশস্ত্র বাহিনী নির্বাচনী পর্ষদে আপনারা সব জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা একত্রিত হয়েছেন। আপনাদের প্রজ্ঞা, বিচার-বুদ্ধি ন্যায়পরায়ণতার ওপর আমার যথেষ্ট আস্থা আছে। আমি শুধু এটুকু অনুরোধ করব যে ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের ঊর্ধ্বে উঠে উপযুক্ত কর্মকর্তারা যেন প্রমোশনটা পায়। আপনারা ন্যায়নীতির ভিত্তিতে নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে প্রমোশন দেবেন, যাতে সবার ভেতরে একটা আস্থা আসে। আমি জানি, অনেকেই উপযুক্ত থাকেন, তাই সবাইকে দেয়া যায় না। কারণ পদটা সীমিত। তার পরও আপনারা অবশ্যই দেখবেন, যারা সত্যিকার উপযুক্ত তারা যেন প্রমোশন পায়।

সব দিকে নজর রেখে সশস্ত্র বাহিনীকে ঢেলে সাজানো হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা বিশেষায়িত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও গড়ে তুলেছি, যাতে সব ধরনের ট্রেনিংটা সবাই পায়। আধুনিক জ্ঞানসম্পন্ন একটা সশস্ত্র বাহিনী আমরা গড়ে তুলতে চাই। আর সেটাই আমাদের লক্ষ্য। জাতির পিতা দেশ স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি আর্থসামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে আমরা দেশটাকে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমরা আমাদের নীতিমালাও নিয়েছি। 

তিনি বলেন, দেশ স্বাধীন করেছি লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে। শহীদের রক্ত বৃথা যেতে দিতে পারি না। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় যারা বিশ্বাসী, বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বে যারা বিশ্বাসী, যারা বাংলাদেশের উন্নয়নে বিশ্বাসী নিশ্চয়ই তাদের আদর্শ নিয়েই চলতে হবে। দেশপ্রেমিক মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় যারা বিশ্বাসী হবে, তারাই যেন দায়িত্ব পায়। যাতে তারা সঠিক পথে বাংলাদেশকে ভবিষ্যতে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।

অনুষ্ঠানে গণভবন প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব . আহমদ কায়কাউস, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. মাহফুজুর রহমান প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম। সেনা সদর দপ্তর থেকে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ, নৌবাহিনী সদর দপ্তর থেকে নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল এম শাহীন ইকবাল বিমান বাহিনী সদর দপ্তর থেকে বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন সময়।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন