নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণে ব্রাজিলকে ছাড়িয়ে বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে ভারত। গতকাল দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২৪ ঘণ্টায় সেখানে নতুন করে ৯০ হাজার ৮০২ জনের দেহে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে। খবর রয়টার্স।
এ নিয়ে ভারতে শনাক্ত হওয়া মোট কভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪২ লাখ ৪ হাজার ৬১৩-তে। অন্যদিকে ব্রাজিলে মোট রোগীর সংখ্যা ৪১ লাখ ৩৭ হাজার ৫২১ জন বলে জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে। এ হিসাবে ব্রাজিলের চেয়ে প্রায় ৭০ হাজার বেশি সংক্রমণ নিয়ে এগিয়ে আছে ভারত।
বিশ্বে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি কভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটিতে মোট রোগীর সংখ্যা ৬২ লাখ ৭৬ হাজার ৩৬৫।
এ নিয়ে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো ভারতে একদিনে ৯০ হাজারের বেশি কভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হলো। রোববার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে ৯০ হাজার ৬৩২ জন রোগী শনাক্ত হয়েছিল। মহামারী শুরুর পর থেকে ভারত ছাড়া অন্য কোনো দেশে ২৪ ঘণ্টায় এত বেশি কভিড- ১৯ রোগী শনাক্ত হয়নি। রোববার শনাক্ত রোগীর সংখ্যার নতুন রেকর্ড করার একদিন পরই তা ভেঙে আরেকটি রেকর্ড গড়ল ভারত।
ভারতের আগে ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি সংক্রমণের রেকর্ড ছিল যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটিতে জুলাইয়ের মাঝামাঝি একদিনে ৭৭ হাজার ২৯৯ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছিল। একদিনে ৭৮ হাজারের বেশি শনাক্ত রোগী নিয়ে গত সপ্তাহেই ভারত যুক্তরাষ্ট্রের ওই রেকর্ড ভেঙে দিয়েছিল।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, প্রায় এক মাস ধরে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি দৈনিক শনাক্তের খবর জানিয়ে আসছে ভারত। সংক্রমণে দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে আসা দেশটি ভাইরাসটির কারণে প্রাণহানির দিক থেকে বিশ্বে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। গতকাল ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কভিড-১৯-এর কারণে আরো ১ হাজার ১৬ জনের মৃত্যুর কথা জানিয়েছে। এ নিয়ে দেশটিতে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৭১ হাজার ৬৪২। পাঁচদিন ধরে ভারতে প্রতিদিন এক হাজারের বেশি কভিড-১৯ রোগী প্রাণ হারিয়েছে।
মোট মৃতের সংখ্যায় সবার ওপরে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত দেশটিতে মহামারীতে প্রাণ হারিয়েছে ১ লাখ ৮৮ হাজার ৯৮১ জন। তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ব্রাজিলে মোট মৃতের সংখ্যা ১ লাখ ২৬ হাজার ৬৫০।
মেট্রোরেল চালু: নভেল করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে পাঁচ মাসের বেশি সময় বন্ধ রাখার পর ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিসহ কয়েকটি শহরে ফের মেট্রোরেল চালু করা হয়েছে। এটি ভারতের সর্ববৃহৎ দ্রুতগামী পরিবহন ব্যবস্থা। গত ২৫ মার্চ ভারতজুড়ে লকডাউন শুরুর আগে দিল্লির মেট্রোরেলে দৈনিক গড়ে ২৭ লাখ যাত্রী চলাচল করত।
বিবিসি জানিয়েছে, করোনাভাইরাস প্রতিরোধী কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেই এ সেবা চালু করা হয়েছে। এসব বিধিনিষেধের মধ্যে রয়েছে মাস্ক পরিধান, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও বাধ্যতামূলকভাবে যাত্রীদের শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করা। সংক্রমণ প্রতিরোধে স্টেশন ও ট্রেনের মধ্যে বেশকিছু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। লকডাউনের আগের সময়ের তুলনায় যাত্রী সংখ্যা ২০ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। স্টেশনে প্রবেশের আগে যাত্রীদের দেহের তাপমাত্রা পরীক্ষা করা হচ্ছে।
গতকাল স্থানীয় সময় সকাল ৭টা থেকে নয়াদিল্লিতে দুটি লাইনে মেট্রোরেল চলাচল শুরু হয়। পরবর্তী পাঁচদিনে ধাপে ধাপে অন্যান্য লাইনেও মেট্রো চলাচল শুরু হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
এদিকে ধাপে ধাপে লকডাউনের বিধিনিষেধ প্রত্যাহার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ‘আনলক-ফোর’ নির্দেশনা মেনে গতকাল রাজধানী নয়াদিল্লির পাশাপাশি বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদ, চেন্নাই, লক্ষৌ, কোচি ও নয়ডাতেও মেট্রো পরিষেবা চালু হয়েছে। কলকাতাসহ ভারতের অন্য শহরগুলোয়ও অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই এ সেবা চালুর প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।