বাংলাদেশে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্তের ছয় মাস পূর্ণ হচ্ছে আজ। এ দীর্ঘ সময় পরও রোগী শনাক্ত কিংবা মৃত্যুর সংখ্যায় নিয়ন্ত্রণ আনতে পারেনি বাংলাদেশ। এর মধ্যে মোট সংক্রমণ শনাক্তের অর্ধেকই হয়েছে দুই মাসের মধ্যে। তবে কয়েক সপ্তাহ ধরে সংক্রমণ শনাক্তের হার কিছুটা নিম্নমুখী। বিষয়টিকে ভালো লক্ষণ হিসেবে দেখলেও সংক্রমণ কমতে শুরু করেছে, এ কথা এখনই বলতে নারাজ বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, এ প্রবণতা আরো কয়েক সপ্তাহ টানা নিম্নমুখী থাকলে সংক্রমণ কমছে বলে ধরে নেয়া যেতে পারে। তার আগ পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মানা থেকে শুরু করে সব পদক্ষেপে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, দেশে গতকাল পর্যন্ত নভেল করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হিসেবে শনাক্ত হয়েছে ৩ লাখ ২৭ হাজার ৩৫৯ জন। মৃত্যু হয়েছে ৪ হাজার ৫১৬ জনের। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছে ২ লাখ ২৪ হাজার ৫৭৩ জন।
পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশে সংক্রমণ শনাক্তের সংখ্যা প্রথম ১ লাখ অতিক্রম করে ১৮ জুন। এরপর শনাক্তের সংখ্যা দুই লাখ অতিক্রম করতে সময় নেয় মাত্র ৩০ দিন। এর ৩৯ দিনের মাথায় ২৬ আগস্ট দেশে সংক্রমণ শনাক্তের সংখ্যা তিন লাখ অতিক্রম করে।
দেশে প্রথম এক লাখ সংক্রমণ শনাক্ত হতে সময় বেশি লাগলেও পরের দুই লাখ রোগী শনাক্ত করতে সময় লেগেছিল যথাক্রমে ৩০ ও ৩৯ দিন। তিন লাখ সংক্রমণ শনাক্তের মধ্যে প্রথম অর্ধেক অর্থাৎ দেড় লাখ অতিক্রম করতে সময় নিয়েছিল ১১৭ দিন। পরের দেড় লাখ অতিক্রমে সময় নিয়েছিল ৫৪ দিন। অন্যদিকে এখন পর্যন্ত মোট শনাক্তকৃতের মধ্যে অর্ধেক রোগী শনাক্ত হয়েছে সর্বশেষ ৬২ দিনে।
দেশে গতকালও ৩৭ জনের করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। একই সঙ্গে কভিড-১৯ পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হয়েছে ২ হাজার ২০২ জন। পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, এখনো দেশে প্রতিদিন রোগী শনাক্ত হচ্ছে দুই হাজারের বেশি। অনেক সময় তা আড়াই থেকে তিন হাজারও অতিক্রম করে যায়। অন্যদিকে মৃত্যুর সংখ্যা ওঠানামা করছে ৪০-এর আশপাশে।
এক মাস আগেও দেশে মোট নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণ শনাক্তের হার ছিল ২৫ শতাংশের কাছাকাছি। বর্তমানে তা ২০ শতাংশর নিচে নেমে এসেছে। গতকাল সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণ শনাক্তের হার ছিল ১৪ দশমিক ২৯ শতাংশ। অন্যদিকে মোট নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণ শনাক্তের হার নেমে এসেছে ১৯ দশমিক ৯০ শতাংশে।
বিষয়টিতে আশার আলো দেখতে পেলেও বাংলাদেশে সংক্রমণ কমেছে, এ কথা বলার সময় এখনো আসেনি বলে মনে করছেন রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও বর্তমান উপদেষ্টা ড. মোশতাক হোসেন। বাংলাদেশে সংক্রমণ এখনো বিপত্সীমার ওপরেই রয়ে গিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, এ অবস্থা আরো কয়েক সপ্তাহ চলমান না থাকলে সেটাকে খুব বেশি ইতিবাচক বলাও যাবে না। আপাতত কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া না হলে সংক্রমণ এভাবে চলতে থাকবে। অনেক ক্ষেত্রে সেটা বেড়েও যেতে পারে। সেক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মানা এবং নমুনা পরীক্ষায় কার্পণ্য না করে রোগী চিহ্নিত করে আইসোলেশন-কোয়ারেন্টিনের বিকল্প নেই।
