চীন-ভারতের উত্তেজনা আরো বাড়বে, শঙ্কা বিশেষজ্ঞদের

বণিক বার্তা ডেস্ক

চলতি বছরের জুনে পশ্চিমাঞ্চলীয় লাদাখ সীমান্তে পারমাণবিক অস্ত্রধারী চীনের সঙ্গে সংঘর্ষের পর এবার পূর্বাঞ্চলের অরুণাচল সীমান্তে সেনা বৃদ্ধি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে ভারতের সরকারি এক কর্মকর্তা। এক সরকারি কর্মকর্তা তথ্য নিশ্চিত করেছেন। চলমান পরিস্থিতি বিবেচনায় বেইজিং নয়াদিল্লির মধ্যে সম্পর্ক আরো জটিল হতে পারে বলে শঙ্কা ভারতের রাজনৈতিক সামরিক বিশেষজ্ঞদের। খবর রয়টার্স আনাদোলু।

ভারত সীমান্তের পশ্চিমাঞ্চলের গত জুনের ওই সংঘর্ষ ছিল গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে সহিংস। সীমান্তে উত্তেজনা প্রশমনের কোনো আলামত দেখা যাচ্ছে না। বরং কয়েক সপ্তাহ ধরে সীমান্তে দুই দেশের সামরিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পেয়েছে।

পূর্বাঞ্চলের অরুণাচল প্রদেশের আনজাও জেলায় সামরিক বাহিনীর তত্পরতায় দুই দেশের মাঝে সামরিক সংঘাতের শঙ্কা তৈরি হলেও ভারতের সরকার এবং সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তারা তা নাকচ করে দিয়েছেন।

আনজাওয়ের প্রধান বেসামরিক কর্মকর্তা আয়ুশি সুদান বলেছেন, সামরিক উপস্থিতি অবশ্যই বৃদ্ধি করা হয়েছে। তবে বহিঃশত্রুর আক্রমণ নিয়ে উদ্বেগ থাকলেও নিশ্চিত কোনো তথ্য নেই। ভারতীয় সামরিক বাহিনীর একাধিক ব্যাটালিয়ন জেলায় অবস্থান করছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

গত জুনে গালওয়ানে প্রতিবেশী চীনের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে ভারতের অন্তত ২০ সেনা নিহত হন। সেই ঘটনার কথা স্মরণ করে টেলিফোনে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে তিনি বলেন, গালওয়ানের সংঘর্ষের পর থেকে আনজাওয়ে সামরিক বাহিনী মোতায়েন বৃদ্ধি করা হয়েছে। এমনকি তার আগে থেকেও এখানে সৈন্য বৃদ্ধি করা হচ্ছিল।

ভারতের অরুণাচল প্রদেশকে চীন নিজেদের ভূখণ্ড তথা দক্ষিণ তিব্বত হিসেবে দাবি করে থাকে। ১৯৬২ সালে চীন-ভারতের পুরোমাত্রার সীমান্ত যুদ্ধে কেন্দ্রে ছিল অরুণাচল। বিশ্লেষকরা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, অঞ্চলটি নিয়ে আবারো দুই দেশের সামরিক সংঘাত হতে পারে।

ভারতের সেনাবাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল হর্ষবর্ধন পান্ডে বলেন, এখানে সেনা সমবেত করায় কোনো উদ্বেগের কিছু নেই। নিয়মিত রোটেশন কর্মসূচির আওতায় এখানে সেনা সমাবেশ করা হয়েছে।

তবে অরুণাচল প্রদেশের সংসদ সদস্য তাপির গাও বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, চীনা সেনারা নিয়মিতই ভারতীয় সীমানায় অনুপ্রবেশ করছে।

এদিকে বিদ্যমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অনেক সেনা রাজনৈতিক বিশ্লেষক। লে. জেনারেল দীপেন্দ্র সিং হুদা নামে ভারতীয় সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত এক সেনা কর্মকর্তা আনাদোলু এজেন্সিকে বলেন, আমি মনি করি চীন ভারতের মধ্যকার অচলাবস্থা আরো জটিল হয়েছে। এরই মধ্যে এলএসিতে (লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল) উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। এখন ভিন্ন একটি পয়েন্টে উভয় দেশের সেনাদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে।

হুদা আরো বলেন, যদি কূটনৈতিক আলোচনা দুদেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে সমঝোতায় সমস্যার সমাধান না আসে এবং সীমান্তে চীন তাদের আগ্রাসী নীতি বজায় রাখে, তবে সব ধরনের সম্ভাবনাই আমাদের মাথায় রাখতে হবে।

সাংহাই বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের শিক্ষক রাজীব রঞ্জন বলেন, লাদাখে সংঘর্ষের ঘটনা চীন-ভারত সম্পর্ককে তেতো করে দিয়েছে।

দুদেশের মধ্যে বিরোধপূর্ণ সীমান্ত থাকার কারণে ভবিষ্যতে আরো সংকট দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

গত সপ্তাহে ভারতের চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ বিপিন রাওয়াত হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, দুদেশের মধ্যে আলোচনা ব্যর্থ হলে সামরিক পদক্ষেপের বিষয়টি উড়িয়ে দিচ্ছে না ভারত।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন