এসডিজি অর্জনে ১৬৬টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশ ১০৯তম

নিজস্ব প্রতিবেদক

জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) অর্জনে বিশ্বের ১৬৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১০৯তম। বেশ কয়েকটি অভীষ্টে কাঙ্ক্ষিত অর্জন না হলেও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারত পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ। এসডিজির ১৭টি অভীষ্টের মধ্যে চারটি টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে সঠিক পথে ছয়টি অভীষ্ট অর্জনে বাংলাদেশ পরিমিত রূপে উন্নতি করেছে। এসডিজির তিনটি অভীষ্ট অর্জনে বাংলাদেশের অবস্থান অপরিবর্তিত দুটির মূল্যায়নের জন্য উপাত্তে ঘাটতি রয়েছে।

গতকাল শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত চলমান টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি): বাংলাদেশ দ্বিতীয় অগ্রগতি প্রতিবেদন-২০২০ শীর্ষক জনঅবহিতকরণ সভায় এসব তথ্য জানানো হয়। এসডিজি অগ্রগতির ওপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য (সিনিয়র সচিব) অধ্যাপক . শামসুল আলম। অনুষ্ঠানে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) আবাসিক প্রতিনিধি সুদীপ্ত মুখার্জি, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক প্রধান সমন্বয়ক জুয়েনা আজিজ, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন পরিকল্পনা সচিব আসাদুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

জাতিসংঘ ঘোষিত এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা দেশগুলোর অগ্রগতি যাচাইয়ে সম্প্রতি সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সলিউশন নেটওয়ার্ক কর্তৃক প্রতিবেদনের তথ্য উপস্থাপন করে জুয়েনা আজিজ বলেন, ২০১৭ সালে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টের স্বাধীন মূল্যায়নে বৈশ্বিক র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশ ছিল ১২০তম ইনডেক্স স্কোর ৫৬ দশমিক ২। তবে ২০২০ সালে চার বছরে র্যাংকিং ইনডেক্স স্কোর উভয় দিকে বাংলাদেশের অবস্থার উন্নতি হয়েছে। বর্তমানে বৈশ্বিক র্যাংকিংয়ে ১৬৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১০৯তম এবং ইনডেক্স স্কোরে বর্তমান অবস্থান ৬৭ দশমিক ২। এসডিজির ১৭টি অভীষ্টের মধ্যে দারিদ্র্য বিলোপ, গুণগত শিক্ষা, শোভন কাজ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং জলবায়ু পরিবর্তন কার্যক্রম চারটি এসডিজি অর্জনে সঠিক পথেই রয়েছে বাংলাদেশ। এছাড়া ছয়টি অভীষ্ট অর্জনে বাংলাদেশ পরিমিত রূপে উন্নতি করেছে। সেগুলো হচ্ছে ক্ষুধামুক্তি, সুস্বাস্থ্য কল্যাণ, নিরাপদ পানি স্যানিটেশনসাশ্রয়ী দূষণমুক্ত জ্বালানি, শিল্প, উদ্ভাবন অবকাঠামো এবং টেকসই নগর জনপদ। তবে জেন্ডার সমতা, জলজ জীবন এবং শান্তি ন্যায়বিচার কার্যকর প্রতিষ্ঠা তিনটি অভীষ্ট অর্জনে বাংলাদেশ অপরিবর্তিত অবস্থায় রয়েছে, যা উন্নয়ন ঘটানোর অনেক সুযোগ ছিল। যথাযথ পদক্ষেপের অভাবে অভীষ্ট অর্জন অপরিবর্তিত রয়েছে। এদিকে অসমতার হ্রাস, পরিমিত ভোগ টেকসই উৎপাদন দুটি অভীষ্ট মূল্যায়নের জন্য উপাত্ত পাওয়ার ঘাটতি রয়েছে। যে কারণে অভীষ্টগুলো লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কোন অবস্থানে রয়েছে, তা পরিমাণ করা সম্ভব হয়নি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোকে এসডিজি বাস্তবায়নসংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত নিয়মিত হালনাগাদকরণের ওপর আরো জোর দিতে হবে। তাহলে বৈশ্বিক র্যাংকিংয়ে আরো ভালো অবস্থান তৈরি করা সম্ভব হতো।

অধ্যাপক . শামসুল আলম বলেন, অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের তথ্য-উপাত্তের অভাবে মূল্যায়ন কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। পরিমিত ভোগ টেকসই উৎপাদনেও অপ্রতুলতা রয়েছে। এছাড়াও অসমতা হ্রাসে উপাত্ত না থাকায় মূল্যায়ন করা সম্ভব হয়নি। নিরাপদ পানি স্যানিটেশনের লক্ষ্যে অপ্রতুল উপাত্তের কারণে মূল্যায়ন সম্ভব হয়নি। এসডিজির লক্ষ্য অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে দেশ থেকে সম্পূর্ণভাবে দারিদ্র্য নির্মূল করতে সম্পদ সংগ্রহ, মধ্যম আয়ের ফাঁদ, এসডিজির জন্য অর্থায়ন, মানসম্পন্ন তথ্য-উপাত্ত এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে লক্ষ্যমাত্রার তথ্যগুলোতে সম্প্রতি সময়ের মহামারী কভিডের প্রভাব হিসেবে আনা হয়নি।

তিনি বলেন, দারিদ্র্যের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দেশের সব প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সরকার পরিচালিত সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর ভেতরে নিয়ে আসতে হবে। অর্থনৈতিক সম্পদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। মৌলিক সেবায় তাদের অভিগম্যতা নিশ্চিত করতে হবে। শোভন কাজ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি খাতেও কিছুটা উন্নতি হলেও যথেষ্ট নয়। পূর্ণাঙ্গ কর্মসংস্থানের অভাব রয়েছে। শিল্পে উদ্ভাবন অবকাঠামোর লক্ষ্যে কিছুটা উন্নতি হলেও তা যথেষ্ট নয়। ব্যবসা পরিচালনায় উচ্চ ব্যয় গুণগত অবকাঠামোর অভাব, ভূমি ব্যবস্থাপনা সংকট, দক্ষ মানব সম্পদের অভাব বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণে সীমাবদ্ধতা এক্ষেত্রে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে। টেকসই নগর জনবসতির ক্ষেত্রে দুর্বল স্থবির অবস্থা বিরাজ করছে। পর্যাপ্ত নিরাপদ সাশ্রয়ী আবাসন, সাশ্রয়ী সহজলভ্য এবং টেকসই নগর পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন তেমন একটা হয়নি। শান্তি, ন্যায়বিচার কার্যকর প্রতিষ্ঠান অভীষ্ট অর্জনে অংশীদারিত্ব লক্ষ্য বাস্তবায়নে দুর্বল স্থবির অবস্থা বিরাজ করছে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, উন্নয়নের যেমন ঘাটতি আছে, তেমনি আয়ের ঘাটতি আছে আবার তথ্যের ঘাটতি রয়েছে। কিন্তু এসডিজি মূল্যায়নে পরিসংখ্যানের অপ্রতুলতার কথা শুনতে চাই না।

বিদেশী বিনিয়োগের বিষয়ে তিনি বলেন, বৈদেশিক বিনিয়োগটার ক্ষেত্রে গ্ল্যামার আছে, তবে বিনিয়োগ হূদয়কে ছোঁয়া দেয় না। আমাদের দেশের বিনিয়োগ বেশি প্রয়োজন। ঐতিহাসিকভাবে দেশে বেশকিছু বৈষম্য রয়েছে, সেগুলোকে মেনে নিয়েই আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি। তবে আরোপিত কোনো বৈষম্য গ্রহণ করব না, এটা অবৈধ অন্যায়।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন