তরুণদের ক্যারিয়ার ভাবনা

মুত্তাকিন হাসান

শিক্ষা মানুষের চিন্তা চেতনার প্রতিপালক। শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য কিন্তু সার্টিফিকেট অর্জন নয়। শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হলো কোনো ব্যক্তির অন্তর্নিহিত গুণাবলির পূর্ণ বিকাশ করে মানুষকে সত্যিকারের মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা। চাকরি পাওয়া বা না পাওয়ার সাথে এটা সম্পর্কিত হলেও মুখ্য বিষয় নয়। এ বিষয়টি আমরা অনেকেই অনুধাবন করতে পারি না বিধায় দেশে এত শিক্ষিত বেকার। অনেকে আবার উচ্চশিক্ষিত বেকার। তবে বেকারত্বে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাও কম দায়ী নয়।

প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা সমাপ্তির কালে সকলেই চাকরি নিয়ে খানিকটা চিন্তায় থাকে। মনে প্রশ্ন জাগে অনেক। নতুনদের এমন ভাবনা দিন দিন বেড়েই চলছে। কারণ প্রতিষ্ঠানে বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান একজন প্রার্থীকে বেশিরভাগ সময় চাকরির পরীক্ষায় খুব বেশি সাহায্য করে না। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা সমাপ্তির প্রাক্কালে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের উচিৎ চাকরি সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান বিতরণ করা। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা দিয়ে আসলে জ্ঞান মাপা যায় না। চাকরির প্রতিযোগিতায় নিজেকে কিভাবে তুলে ধরবে সে বিষয়ে তাদের ধারণা খুবই স্বল্প। আর এ কারণেই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা সমাপ্তির পর তারা অনেকেই চাকরি না পেয়ে হতাশায় ভোগে। তাই যারা স্নাতক অধ্যয়নরত তাদের জন্য আমার কিছু ক্ষুদ্র উপদেশ-

১। বিসিএসের জন্য চেষ্টা করছেন ভালো কথা। বিসিএস এর প্রস্ততি এমনভাবে গ্রহণ করুন যাতে বিষয়গুলো আপনার অন্যসব চাকরির পরীক্ষায় কাজে লাগে। দেখবেন বিসিএস না হলেও আপনার একটা ভালো চাকরি হয়ে গেছে।
২। আপনি যে বিষয়ে পড়ছেন সে বিষয়ে বেশী পণ্ডিত না হয়ে অন্য বিষয় সম্পর্কেও স্ট্যান্ডার্ড ধরে রাখুন।
৩। চেষ্টা করুন জ্যাক অফ অল ট্রেড হতে কিন্তু সাথে সাথে মাস্টার অফ নান কথাটা মাথায় রাখুন।
৪। নিয়োগ কর্তারা সর্বদাই লিখে থাকে- অভিজ্ঞ প্রার্থীকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে। আপনি ফ্রেস। আপনার অভিজ্ঞতা নাই। তাই এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিস বাড়ান বা নিজের স্কিল বাড়ান, যা অভিজ্ঞতার পরিপূরক হিসেবে কাজ করবে। কারণ কেউ অভিজ্ঞতা নিয়ে জন্ম গ্রহণ করে না।
৫। একাডেমিক লেখাপড়ার পাশাপাশি নিচের দক্ষতার প্রতি খেয়াল করুন-

    ক) নেটওয়ার্কিং বা যোগাযোগের দক্ষতা

    খ) ভাষাগত দক্ষতা, বিশেষ করে মোটামুটিভাবে ইংরেজীতে কথাবলার দক্ষতা।

    গ) সাংগঠনিক দক্ষতা, যার পোশাকি নাম অরগানাইজিং স্কিল।

    ঘ) যে বিষয়ে কাজ করতে ইচ্ছুক সে বিষয়ে দক্ষতা।

    ঙ) দেশ প্রযুক্তি নির্ভর হতে যাচ্ছে। তাই প্রযুক্তিগত জ্ঞান অর্জন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। 

৬। আপনার স্বপ্নের ক্যারিয়ারের সাথে সংযুক্ত এমন চাকরি চয়ন করুন। ক্যারিয়ারের শুরুতে  কত টাকা বেতন হবে বা এত টাকা ছাড়া আমি চাকরি করবো না এমন রিজিটনেস থেকে নিজেকে মুক্ত রাখুন। এক লাফে গাছে না উঠে নিজেকে দক্ষ করে আস্তে আস্তে কাঙ্ক্ষিত স্থানে পৌঁছানোর চেষ্টা করুন। 
৭। যত বেশী সম্ভব বিভিন্ন লোকের সাথে মিশতে চেষ্টা করুন। কার দ্বারা কখন উপকার হবে  বিধাতা ছাড়া কেউ জানে না।
৮। যত পারেন প্রশিক্ষণ এবং সেমিনারে অংশগ্রহণ করুন। এতে জ্ঞান আহরণের পাশাপাশি নেটওয়ার্ক তৈরি হবে।
৯। প্রতিযোগী মনোভাব নয়। সহযোগী মনোভাব এর উপর গুরুত্ব দিন। 
১০। হতাশ হওয়ার পরিবর্তে খুব অনুগ্রহের সাথে আপনার ভুলগুলি পরিচালনা করুন এবং সেগুলোকে নিষ্ক্রিয় না করে নিজের সফলতার জন্য সক্রিয় রাখুন।
১১। আপনি সোশ্যাল মিডিয়ায় যা পোস্ট করেন সে সম্পর্কে সাবধান হন।
    আপনার সামাজিক নেটওয়ার্ক অ্যাকাউন্টগুলি ব্যক্তিগত হতে পারে তবে তবুও তা আপনার বিশ্বাসযোগ্যতার উপর প্রভাব ফেলতে পারে। কিছু কোম্পানি তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড চেকিংয়ের অংশ হিসেবে     চাকরির আবেদনকারী বা অন-প্রোবেশন কর্মীদের সামাজিক মিডিয়া অ্যাকাউন্টগুলি পরীক্ষা করে। এই কারণে, আপনার অ্যাকাউন্টগুলি যথাসম্ভব পেশাদার হিসাবে প্রদর্শিত করুন।
১২। মা এবং বাবাকে নয়, আপনার ক্যারিয়ারের যাত্রায় গাইড করার জন্য বিশেষজ্ঞদের সন্ধান করুন।
    কিছু কিছু  গবেষণা করুন, লিংকডইন এর সাথে যুক্ত থাকুন এবং নেটওয়ার্কিং শুরু করুন। আপনার ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ এবং চিন্তিত নেতাদের সন্ধান করুন এবং জিজ্ঞাসা করুন তারা কীভাবে তাদের     সাফল্য অর্জন করেছে। তারা আপনাকে দিক নির্দেশনা দেবে এবং আপনাকে আপনার পেশাদার নেটওয়ার্ক বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।
১৪। আপনাকে প্রতিনিয়ত নতুন সব সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় এবং সেগুলোর সাথে মোকাবিলা করতে হয়। আপনার যদি সমস্যার ব্যাপারে অভিযোগ করার অভ্যাস থেকে থাকে, তাহলে আপনার উচিত নিজের মনকে সমস্যা সমাধানের দিকে ধাবিত করা এবং সেগুলো নিয়ে ভাবা। অভিযোগ করার সময় আমরা আমাদের চিন্তা ভাবনার মধ্যে হারিয়ে যাই আর সম্ভাব্য সমাধান গুলো দেখতে পাই না।
১৫। নিজের প্রত্যাশা অনুযায়ী অনেক কিছু হয় না। তাই নিজেকে বিভিন্ন প্রতিকূল পরিবেশ, পরিস্থিতি কিংবা জরুরি অবস্থার সাথে খাপ খাইয়ে নেয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা দরকার।
১৬। প্রতিটা সময় উপভোগ করুন। জীবন কেবল ভাল বেতনের চাকরি পাওয়া এবং আপনার অবসর গ্রহণের বিষয়ে নয়। আপনি যদি নিজের কাজটি নিয়ে খুশি না হন; আপনার বেতনটি যত বেশিই হোক তাতে আপনার জীবনের অর্ধেক মিস করবেন। আপনার কলিংটি আবিষ্কার করুন, আপনি কোনটিতে আনন্দ পান তা সন্ধান করুন এবং তাতে আপনি একটি পরিপূর্ণ জীবনযাপন করবেন।

লেখক: ব্যবস্থাপক, মানব সম্পদ ও প্রশাসন
মুন্ডিফার্মা (বাংলাদেশ) প্রাইভেট লিমিটেড

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন