স্মার্টফোন হাতে হাঁটা নিষিদ্ধ যে শহরে!

বণিক বার্তা অনলাইন

জাপানের রাজধানী টোকিও থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরের জনপ্রিয় একটি শহর ইয়ামাতো। ভ্রমণকারীরা যখন ট্রেন থেকে শহরটিতে নামেন তখন একটি বিষয় কারো নজর এড়ায় না। সাদা কাপড়ের উপর জাপানি ভাষায় লেখা ‘হাঁটার সময় পথচারীদের ফোন ব্যবহার করা নিষিদ্ধ’ নির্দেশনাটি বিশ্বজুড়ে মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। 

স্থানীয় কর্মকর্তারা নির্দেশনাটির সুস্পষ্ট প্রয়োগের অভাব সত্ত্বেও সফল হওয়ার প্রত্যাশা করেন। নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত করতে হাঁটা বা চলাচলের সময় ফোন ব্যবহার বন্ধ করতে বিশ্বের অনেক শহরই লড়াই করছে। এমন পরিস্থিতিতে ইয়ামাতো কেন শুধু নির্দেশনা দিয়ে শহরটির বাসিন্দাদের আচরণ পরিবর্তনের প্রত্যাশা করে এবং কেন এটি বাস্তবে কার্যকর হতে পারে? 

জানুয়ারিতে ইয়ামাতো সিটি দুইটি স্থানে একটি গবেষণা চালিয়েছিল। গবেষণাটিতে দেখা গেছে, নগরীর ৬ হাজার পথচারীদের মধ্যে প্রায় ১২ শতাংশ হাঁটার সময় ফোন ব্যবহার করছে। নতুন উদ্যোগটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক ইয়ামাতো সিটি মেয়র স্যাতোরু ওহকি বলেন, এটা কেবল বিপজ্জনক। ওহকি প্রথমে স্থানীয় আইনজীবীদের সঙ্গে এই ধারণাটি নিয়ে আলোচনা করেছিলেন এবং জনগণের পরামর্শ নেয়ার পর দেখতে পান ১০ জনের মধ্যে ৮ জনই এই ধারণাকে সমর্থন করছেন। তাই জুনে পৌর অধ্যাদেশের মাধ্যমে হাঁটার সময় স্মার্টফোন ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা হয়। 

নিষেধাজ্ঞা জারির প্রথম কয়েকদিনের জন্য নতুন অধ্যাদেশটি ব্যাখ্যা করার জন্য রেকর্ড করা বার্তা প্রচার এবং ব্যানারগুলো টানাতে কিছু কর্মী নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। 

তবে কভিড-১৯ মহামারীর কারণে মেয়র ওহকি নিষেধাজ্ঞা কার্যকরে রাস্তায় টহলের জন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের নিয়োগ দিতে দ্বিধা করছেন। তাই স্টেশন থেকে বের হওয়ার সময় কয়েকটি ফ্যাব্রিক চিহ্নই এখন পরিবর্তনের একমাত্র সূচক। তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি, ইয়ামাতোর জনগণ সঠিক কাজটিই করবেন। 

দুর্ঘটনা রোধে এমন উদ্যোগ এটাই প্রথম নয়। দক্ষিণ কোরিয়ার শহর ইলসান ফোন ব্যবহার করা পথচারীদের সতর্ক করতে ঝলকানো লাইট ও লেজার বিম স্থাপন করেছিল, চীনা শহর চঙকিংয়ের কর্তৃপক্ষ ফোনে ব্যস্ত পথচারীদের জন্য রাস্তায় সেলফোন লেন খুলেছিল এবং হাওয়াইয়ের হনুলুলুতে হাঁটার সময় ফোন ব্যবহার করলে জরিমানা করার বিধান রয়েছে। 

তবে ইয়ামাতোতে নির্দেশ মানার জন্য কোনো জেল-জরিমানা নেই। বরং কর্তৃপক্ষ নগরীর বাসিন্দাদের আচরণে আরো স্বেচ্ছা ও স্বাভাবিক পরিবর্তনের আশা করছে। 

জাপানকে প্রায়শই একটি সমষ্টিবাদী সংস্কৃতি হিসেবে বর্ণনা করা হয়। সেখানে পৃথক মতামত প্রকাশের চেয়ে একটি দলে ওয়া (সাদৃশ্য) ধারণাটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হয়। এ কারণেই বিশ্বজুড়ে মহামারী চলাকালীন বাধ্যতামূলক না হওয়া সত্ত্বেও দেশটির নাগরিকদের মাস্ক ছাড়া বাইরে দেখা যায় না। 

একটা বিষয় পরিষ্কার যে, জাপানি নাগরিকরা হাঁটার সময় স্মার্টফোন ব্যবহারে নিজের এবং অন্যদের জন্য বিপদ সম্পর্কে বেশ সচেতন। ২০১৯ সালে দেশটির ৫৬২ জন স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর ওপর পরিচালিত একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৯৬ দশমিক ৬ শতাংশ ব্যবহারকারী জানিয়েছেন তারা বিপদ সম্পর্কে সচেতন ছিলেন, ১৩ দশমিক ২ শতাংশ ব্যবহারকারী প্রথমদিকে সংঘর্ষের মুখোমুখি হয়েছিলেন এবং ৯ দশমিক ৫ শতাংশ ব্যবহারকারী হাঁটার সময় স্মার্টফোন ব্যবহারে আহত হয়েছেন। 

কিন্তু আইন অমান্য করলেও বাস্তবসম্মত কোনো জরিমানা ছাড়া কোনো নিষেধাজ্ঞা কি সত্যই কার্যকর হতে পারে? টোকিওর একজন আইনজীবী নওতা সুজুকি বলেন, এমন কিছু আইন রয়েছে, যেগুলোতে শাস্তির বিধান না থাকলেও কিন্তু কার্যকর রয়েছে।

ইয়ামাতোর মেয়র বলেন, এই আইনটি রাতারাতি পরিবর্তনের জন্য ডিজাইন করা হয়নি। আমার পরিকল্পনাটি পাঁচ বছরের বেশি সময়ের মধ্যে গ্রহণ করা হবে। ১০ বছর আগে আমরা হাঁটার সময় ধূমপানের বিরুদ্ধে আইন তৈরি করেছিলাম। এটা গ্রহণ করতে কিছুটা সময় লেগেছে, তবে ১০ বছর পরে এটি ঠিকই কার্যকর হয়েছে। ইয়ামাতোর অ্যান্টি-স্মার্টফোন আইনের সফল ভবিষ্যত মূলত জাপানিদের সামজিক নিয়ম-আদর্শের ওপর নির্ভর করছে।

বিবিসি অবলম্বনে শিহাবুল ইসলাম

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন