গ্রাম শহরের বৈষম্য হ্রাসে প্রয়োজন দৃষ্টান্তমূলক কাঠামো পরিবর্তন

বণিক বার্তা ডেস্ক

তরুণ প্রজন্মের নীতি গবেষণামূলক প্ল্যাটফর্ম  'ইয়ুথ পলিসি ফোরাম' (ওয়াইপিএফ) এর আয়োজনে 'সবার জন্য সমান অধিকার'  শীর্ষক অনলাইন ওয়েবিনার  সিরিজের ১ম পর্ব -"গ্রাম শহরের বৈষম্য এবং স্থানীয় পর্যায়ে উন্নয়ন" অনুষ্ঠিত হয়ে গেল গত ২১ আগস্ট।

চলতি বছরের শুরুতে ইয়ুথ পলিসি ফোরামের তরফ থেকে একটি সম্মেলন আয়োজনের মধ্যে দিয়ে এই বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়। এর ধারাবাহিকতায় এই ওয়েবিনার সিরিজের  ১ম পর্বে  ওয়াইপিএফ এর নির্বাহী পরিচালক আমের মোশতাক আহমেদ এর সঞ্চালনায়  প্যানেলিস্ট হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের  উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষক ড.আসিফ এম শাহান, গ্রামীণফোনের প্রাইসিং স্ট্রাটেজিস্ট এবং ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক ফোরামের গ্লোবাল শেইপার ম্যা মো খাইং এবং  যুক্তরাজ্যের নটিংহ্যাম সিটি কাউন্সিলের প্রিন্সিপাল প্ল্যানিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ তৌফিকুল ইসলাম।

আমাদের সংবিধানে স্থানীয় সরকার ব্যাবস্থাকে বেশ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে এবং সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগ(রাষ্ট্রের মূলনীতি)  এর মধ্যে অনুচ্ছেদ আকারে তুলে ধরা হয়েছে উল্লেখ করে আমের মেশতাক জানতে চান, কেন আমাদের দেশে এখনো একটি শক্তিশালী স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি।

জবাবে ড. আসিফ এম শাহান  স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার গঠন উল্লেখ করে বলেন,আমাদের দেশে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে শক্তিশালী স্থানীয় অর্থনীতি গঠনের চালিকাশক্তি হিসেবে না দেখে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়েছে।আমরা আসলে কেন স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা তৈরি করছিলাম সেটা নিয়ে আমাদের কোন মৌলিক ধারনা ছিলনা বলে জানান তিনি। তিনি আরো বলেন, স্থানীয় সরকারের বড় পরিবর্তনগুলো কোনটাই গণতান্ত্রিক সরকারের অধীনে হয়নি, যা দুঃখজনক। 

ড.মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম বলেন, স্থানীয় পর্যায়ে দ্বৈত প্রশাসন দেখা যায় যেখানে উপজেলা চেয়ারম্যান এবং এমপি একই ধরনের কাজ করে থাকেন। স্থানীয় সরকারের প্রধান কাজ হচ্ছে চাহিদার ভিত্তিতে অর্থবছরের শুরুতেই বাজেট প্রণয়ন করা।আমাদের মনোনয়ন প্রক্রিয়াতে সমস্যা থাকায় আমরা যোগ্য প্রার্থী পাচ্ছি না বলেও মনে করেন তিনি।

তিনি বলেন, অঞ্চলভিত্তিক বৈষম্যের প্রধান কারণ রাজনৈতিক। একটি দল ক্ষমতায় গেলে অনেক সময়ই তারা সে সকল এলাকার উন্নয়নে বেশি মনোনিবেশ করে যে সকল এলাকা থেকে তারা বেশি ভোট পেয়েছে ।

তিনি সরকারের নীতির  প্রশংসা করে বলেন, বিগত নিবার্চনী ইশতেহারে প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ পর্যায়ে নাগরিক অধিকার নিশ্চিতের কথা বলেছিলেন যা প্রশংসনীয়। কিন্তু বাস্তবায়নে নজর দেয়া সময়ের দাবি। স্থানীয় উন্নয়নমূলক উদ্যোগের সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়াতে সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণ বাড়ানো এবং পাশাপাশি অন্তর্ভুক্তিমূলক স্থানীয় প্রশাসনের জন্য শিক্ষাবিদ ও নীতিনির্ধারকদের মধ্যে আন্তঃসংযোগের একটি চ্যানেল স্থাপন জরুরি বলে অভিমত ব্যক্ত করেন তিনি। 

যুক্তরাজ্যে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা কিভাবে চলে এবং এর থেকে আমাদের শিক্ষা নেয়ার কিছু আছে কি না জানতে চাইলে তৌফিকুল ইসলাম বলেন, যুক্তরাজ্যে স্থানীয় সরকারের কাজে এমপিদের কোন প্রভাব নাই।যুক্তরাজ্যেও স্থানীয় অঞ্চল ও শহরের মধ্যে বৈষম্য রয়েছে উল্লেখ করে তিনি জানান বিগত দশকে যুক্তরাজ্য সরকার তুলনামূলকভাবে কম উন্নত এলাকাগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।বাংলাদেশ সরকারেরও এক্ষত্রে একেবারেই অনুন্নত এলাকাগুলোকে নজরে নিয়ে বাজেটা বাড়ানোর তাগিদ দেন তিনি।

স্থানীয় স্ট্যান্ডিং কমিটিগুলোকে  আরও বেশি সক্রিয় করা জরুরি বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।

নটিংহ্যামে প্রশিক্ষণের ওপর বিশেষ নজর দেয়া হয় এবং এই ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাথে সমন্বিতভাবে কাজ করার ক্ষেত্রও আছে বলে জানান তিনি।

এসময় গ্রাম ও শহরের শিক্ষা ব্যবস্থার বৈষম্য এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগোষ্ঠী কেন উন্নয়নের স্রোতধারা থেকে বঞ্চিত এ  নিয়ে জানতে চাওয়া হয়  ম্যা মো খাইং এর কাছে। তিনি বলেন,আমরা শিক্ষার মান উন্নয়নে ভাল শিক্ষকের চেয়ে আবকাঠামোগত উন্নয়নকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছি।সম্পদের অপ্রতুলতাকে কারণ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি শিক্ষক প্রশিক্ষনের উপর বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করেন।

প্রযুক্তিভিত্তিক শিক্ষা গ্রামাঞ্চলে এখনো অনেকটা স্বপ্নের মত, বলে মনে করেন তিনি।তিনি আরও বলেন পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগোষ্ঠীসমূহের মধ্যে বৈচিত্র্য রয়েছে এবং তাদের সবার ক্ষমতা সমান নয়। 

যে সকল জাতিসত্তার জনসংখ্যা বেশি, তারাই ক্ষমতার দিক থেকে উপরে একারণে এরকম এলাকায় তহবিল পাঠানোর সময় কোন জনগোষ্ঠীসমূহের কাছে তা যাচ্ছে সেদিকে নজর দেয়া প্রয়োজন।

স্থানীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলির প্রকল্প পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়ন ক্ষমতা বৃদ্ধি করা গুরুত্বপূর্ণ। যা তাদেরকে আরও বিনিয়োগ আমন্ত্রনের সুযোগ করে দিবে এমনটাই  ভিশন ২০৪১এর একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হওয়া উচিত  উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, স্থানীয় সরকারের বাজেট ছাড়াও অন্যান্য সংস্থান দরকার।

সুষ্ঠু  স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা গড়ে তুলতে  টেকনিক্যাল দক্ষতা সম্পন্ন কর্মকর্তা,কর্মদক্ষতা বাড়ানোর জন্য কর্মচারী পর্যায়ে আরো প্রশিক্ষণ,স্ট্যান্ডিং কমিটিতে জবাবদিহিতা বাড়ানো,এলাকা ভিত্তিক তুলনামূলক অর্থনৈতিক সুবিধার ক্ষেত্রগুলো খুঁজে বের করা এবং যথাযথ কাজে লাগানো,বাস্তবসম্মত  প্রয়োগবাদী পরিকল্পনা প্রণয়ন, অর্থায়ন ব্যবস্থাপনা করার  সক্ষমতা জরুরি। 

সর্বোপরি এরকম অবস্থা থেকে উত্তরণে একটা দৃষ্টান্তমূলক পরিবর্তন প্রয়োজন বলে মনে করেন বক্তারা।

প্রদ্যুৎ পাল, 

শিক্ষার্থ, আইবিএ রাবি

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন