‘ভবিষ্যতের জন্য চাই সময়োপযোগী প্রয়োগবাদী শিক্ষা ব্যবস্থা’

বণিক বার্তা ডেস্ক

তরুণ প্রজন্মের নীতি গবেষণামূলক প্ল্যাটফর্ম  ‘ইয়ুথ পলিসি ফোরাম’ (ওয়াইপিএফ) আয়োজিত ‘ওয়াইপিএফ ইয়ুথ ইনসাইটস’  শীর্ষক অনলাইন ওয়েবিনার  সিরিজের ১ম পর্ব -‘ডিগ্রি না দক্ষতাঃ আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়ে গেল, গত ২০ আগস্ট।

‘ইয়ুথ পলিসি ফোরাম’-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা কাজী আশফাকুল হকের সঞ্চালনায় এতে উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিন্ন ভিন্ন পাঠক্রমের বেশ ক'জন মেধাবী  শিক্ষার্থী।

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্জিত জ্ঞান আসলে কর্মজীবনে কতটুকু কাজে লাগানো সম্ভব হয়েছে কিংবা আদৌ আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে যা শিখি তার কোন প্রভাব কর্মজীবনে আছে কিনা?- কাজী আশফাকুল হকের এমন প্রশ্নের জবাবে-  বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের  শিক্ষার্থী বাহাউদ্দীন আবির  বলেন,  আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয় কার্যক্রমে যেসব বই পড়ানো হয় তা গতানুগতিক। 

এসব বই থেকে আমরা বর্তমান সময়ের  শিল্পজ্ঞান অর্জন করতে পারি না। উপরন্তু রাজধানী কেন্দ্রিক শিল্পায়নের ফলে  দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পক্ষে ছাত্রাবস্থায় শিল্পজ্ঞান লাভ একেবারেই সম্ভব হয় না,  যা পরবর্তীতে অধিকাংশকে বাস্তব দক্ষতাহীন শিক্ষিত বেকারে রূপান্তর করে।

এসময় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী এবং বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে  কর্মরত সাজ্জাদুর রাফি বলেন, আমাদেরকে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে যা পড়ানো হয় তা পরবর্তীতে কী  কাজে লাগবে, এসব  বলে বা শিখিয়ে দেয়া হয় না। ফলে অনেক শিক্ষার্থীই পড়াশোনায় আগ্রহ হারায়। সিজিপিএ চাকরির জন্য কেবল একটি মাপকাঠি বরং শিক্ষার্থীর পাঠ্যক্রম বহির্ভূত কার্যক্রম, বিভিন্ন সফট-স্কিল  চাকরি পাওয়ার জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ,বলে উল্লেখ করেন তিনি। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষার্থী লামিয়া মহসিন উচ্চশিক্ষা অর্জনে ইংরেজী মাধ্যমের শিক্ষার্থীরা বিদেশমুখী উল্লেখ করে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ইংরেজী মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের জন্য সুযোগ পাওয়া বাংলা মাধ্যমের শিক্ষার্থীর তুলনায় দুই থেকে তিনগুন কঠিন বলে দাবি করেন। তবে ভালো যোগাযোগ দক্ষতা থাকার কারণে পরবর্তী চাকরির ক্ষেত্রে ইংরেজী মাধ্যমের  শিক্ষার্থীরা বেশ ভালো করে থাকেন। 

চাকরিদাতারা চাকরিপ্রার্থীকে কর্মীর বিপরীতে একজন পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে দেখতে চান উল্লেখ করে কুইন্স ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী আফসানুল হাসিব বলেন, এর জন্য শুধু সিজিপিএ কাউকে চাকরি পাইয়ে দিতে পারে না। এটি বড়জোর তার ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের একটি ফলাফল। বরং আপনি অন্য যে কাজ করতে পারেন তা কীভাবে চাকরির  ক্ষেত্রে সাহায্য করবে, সেটাই নিয়োগকর্তার কাছে মুখ্য।

মাদ্রাসা শিক্ষা সম্পন্ন করে আসা আইনজীবী তৌহিদুল ইসলাম তুলে ধরেন বাংলাদেশের মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের দুরাবস্থার কথা।  এক্ষেত্রে বাস্তবিক প্রতিযেগিতা কিংবা চাকরির জন্য দক্ষতা অজর্নের জায়গা থেকে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা অনেক বেশি দূরে অবস্থান করে।  একটা সময় পর আর পড়াশোনা  চালিয়ে যাওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না।

এ সময় শিক্ষার্থীরা সরকারি নীতির সমালোচনা করে বলেন  আমাদের দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান বা গবেষণায় যতো অর্থায়ন হয় তার চেয়ে অনেক বেশি অর্থায়ন করা হয় নতুন অবকাঠামো আর  নতুন বিশ্ববিদ্যালয় তৈরিতে।

রাজধানী ও তার বাইরে মফস্বলের কিছু স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় বাদ দিলে বাকি সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের রঙটা একই রকম, বিবর্ণ।ইংরেজি ভাষার প্রতি আমাদের অনীহাও পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ে রেজাল্ট ভালো করা কিংবা ভালো কোনো সহপাঠ্যক্রম থেকে অনেক সময় আমাদেরকে  দূরে ঠেলে দেয় বলে যোগ করেন তারা।

চাকরি আর আমাদের বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে বিস্তর পার্থক্য বিদ্যমান উল্লেখ করে আলোচনায় বক্তারা সময় উপযোগী পাঠ্যক্রম প্রণয়নের উপর গুরুত্বারোপ করেন। তারা বলেন, প্রযুক্তির এই বিশ্বে টিকে থাকার জন্য শিক্ষা অর্জনের বিকল্প নেই । কিন্তু সেই শিক্ষা অবশ্যই হতে হবে ভবিষ্যৎ এর জন্য ফলদায়ক।

এজন্য শিক্ষার্থীদের তাদের শিক্ষার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ জ্ঞান আহরণ করা, শিক্ষাবস্থায় শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রকল্পে কাজের সুযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন বিভিন্ন সহপাঠ্য কার্যক্রমে অংশগ্রহণের মাধ্যমে সফট স্কিলস অর্জন, নিজের দক্ষতা বাড়াতে ইন্টারনেট ব্যবহার করে বিনামূল্যে কিংবা পেইড ফ্রিল্যান্সিং করার উপর তাগিদ দেন আলোচকরা।

প্রদ্যুৎ পাল

শিক্ষার্থী আইবিএ, রাবি

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন