বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় যোগাযোগে ব্যাপক উন্নয়ন হলেও যতটা প্রচার হওয়ার কথা ছিল, ততটা হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক যেকোনো দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের চেয়ে গভীর। গতকাল ভারতীয় হাইকমিশনের আয়োজনে বাংলাদেশে কর্মরত ভারতীয় শীর্ষ নির্বাহীদের সঙ্গে এক আলাপচারিতায় এ কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর এ উপদেষ্টা বলেন, দুই দেশের মধ্যে যদি যোগাযোগ ঘটে, তখন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডও বাড়ে। এটি দুই দেশের মধ্যে প্রতিযোগিতার সম্পর্ক নয়, বরং একে অন্যের সহযোগী হওয়ার বিষয়। আর ভারতের ক্ষেত্রে এ কথা আরো বেশি প্রযোজ্য।
এ সময় দুই দেশের ঐতিহাসিক সম্পর্ক বিদ্যমান উল্লেখ করে তিনি বলেন, অন্য দুটি দেশের মতো বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক কেবল ভ্রাতৃপ্রতিম বা বন্ধুত্বপূর্ণই নয়, এটি আরো গভীর একটি সম্পর্ক। বিশেষ করে বাংলাদেশ সৃষ্টিতে ভারতের ভূমিকার কারণে।
অনুষ্ঠানে ডিভিডেন্ড ভারতের মূল কোম্পানিতে পাঠাতে জটিলতা দেখা দিয়েছে মর্মে এক অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সালমান এফ রহমান বলেন, এ ধরনের বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা হয়তো আছে। তবে বাংলাদেশের যতটুকু উদারীকরণ এ পর্যায়ে দরকার, ততটুকু আমরা করে ফেলেছি। বিষয়টি তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, যেহেতু দুই দেশের মুদ্রা বিনিময়যোগ্য (কনভার্টিবল) নয়, সেহেতু কিছু জটিলতা থাকবেই।
তিনি আরো বলেন, আগে আমাদের এত বড় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল না, যার কারণে সমস্যা হতো। তবে প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় আসার পর আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অনেক বেড়েছে। বিদেশী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো এখন ঝামেলাহীনভাবে তাদের ডিভিডেন্ড দেশে পাঠাতে পারে।
ভারতীয় ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান রেখে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা বলেন, আপনারা নিজ দেশে, নিজেদের সহকর্মী ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আপনাদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করুন এবং দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগ কত নিবিড় তা প্রচার করুন।
অনুষ্ঠানে ভারতীয় ব্যবসায়ী ও কর্মকর্তারা ভারতের প্যারাদ্বীপ ও হালদা বন্দর থেকে বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জে সরাসরি মালপত্র পরিবহনের বিষয়ে কথা বলেন। এতে সময় ও অর্থ সাশ্রয় হওয়ার পাশাপাশি চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর থেকে চাপ কমবে বলে মত দেন তারা। সালমান এফ রহমান এ পরামর্শের প্রশংসা করেন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি উত্থাপনের প্রতিশ্রুতি দেন। এছাড়া ভারতীয় দূত ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের বিষয়াদি সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টিগোচরে আনবেন বলে আশ্বস্ত করেন। এ সময় তিনি রেলপথেও দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড বেগবান করতে ভারতের সংশ্লিষ্ট রেলওয়ে অবকাঠামো উন্নত করার আহ্বান জানান।
বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের বিদায়ী হাইকমিশনার রিভা গাঙ্গুলি দাসের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম। রিভা গাঙ্গুলি দাস এ সময় ভারতীয় ব্যবসায়ীদের পক্ষে বিভিন্ন বিষয় উত্থাপন করেন। বিশেষ করে নন-ট্যারিফ প্রতিবন্ধকতা, কাস্টমস সংক্রান্ত জটিলতা, ভারত থেকে আমদানীকৃত গাড়ির সিসি-সীমা, ভারতীয় ব্যবসায়ী ও নির্বাহীদের জন্য দীর্ঘমেয়াদি ভিসা ইত্যাদি প্রসঙ্গে কথা বলেন তিনি। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে কর্মরত ভারতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর এক ডজনেরও বেশি শীর্ষ নির্বাহী অংশগ্রহণ করেন।