অভিনব! যত্রতত্র মূত্রবিসর্জনের বদভ্যাসেই সবুজ হচ্ছে শহর

বণিক বার্তা অনলাইন

দূর থেকে দেখলে মনে হবে সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য গাছ লাগানোর বাক্স। বাক্সগুলোর উপরে নানা ধরনের সবুজ উদ্ভিদ গজিয়ে উঠেছে। তবে ভালোভাবে দেখলে বাক্সগুলোর দেয়ালে প্রস্রাবের জন্য জায়গা দেখা যাবে। নেদারল্যান্ডের রাজধানী আমস্টারডাম শহরে মূত্র বিসর্জনের এই বাক্সগুলোকে বলা হয়  ‘গ্রিন পি’।

আমস্টারডামে শহরে জলে জঙ্গলে রাস্তার পাশে যত্রতত্র জনসমাগম স্থলে মানুষের মূত্রত্যাগের বদভ্যাস বেশ পুরনো একটি সমস্যা। এই সমস্যার বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে অভিনব কৌশল উদ্ভাবন করেছে নগর কর্তৃপক্ষ। ফলশ্রুতিতে বদভ্যাসের কল্যাণেই এখন পুরো শহর সবুজ হয়ে উঠছে।

স্থানীয় কাউন্সিল খোলা স্থানে প্রস্রাব করার হটস্পটগুলো চিহ্নিত করে আপাতত ৮টি ‘গ্রিন পি’ বাক্স স্থাপন করেছে। গত শুক্রবার এটির উদ্ভাবক রিচার্ড ডে ভ্রিজ সিএনএনকে বলেন, আমস্টারডামে এখন ডাচ সংস্থা আরবান সেনসেসের নির্মিত মোট ১২টি গ্রিন পি রয়েছে। 

পরিবেশগত মনোবিজ্ঞানী ডি ভ্রিজ ২০১৮ সালে একটি পাইলট প্রকল্পে কাজ করেছিলেন। সেটির অধীনে শহরের কেন্দ্রে চারটি জনপ্রিয় মূত্র বিসর্জনের স্থানে গ্রিন পিগুলো স্থাপন করেছিলেন। তিনি বলেন, এর ফলে খোলা জায়গায় মূত্রত্যাগ ৬০ শতাংশ কমে গিয়েছিল। এটা ছিল একটি দুর্দান্ত সাফল্য!

এমন ফলাফল দেখে উৎসাহিত হয়ে কর্মকর্তারা আরো ৮টি নতুন গ্রিন পির আদেশ দিয়েছিলেন, যা ফেব্রুয়ারিতে সরবরাহ করার কথা ছিল। কিন্তু এরই মধ্যে করোনাভাইরাস মহামারী হানা দেয়। ফলে আমস্টারডামকে লকডাউন করা হয়, এতে পাবলিক টয়লেট সুবিধার চাহিদা কমে যায়। প্রায় তিন সপ্তাহ আগে শহরটিতে আবারো অতিথিরা ফিরতে শুরু করেছেন এবং বারগুলো পুনরায় পর্যটকদের স্বাগত জানাচ্ছে।

ডে ভ্রিজ বলেন, এরকম আরো টয়লেটের প্রয়োজন ছিল। গ্রিন পির ব্যবহারে শহরের ঐতিহাসিক ভবনগুলোকে প্রস্রাবের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করা থেকে শুরু করে প্রচলিত শৌচাগারের তুলনায় পানির ব্যবহার হ্রাস করা পর্যন্ত অনেক সুবিধা রয়েছে। গ্রিন পিতে সবুজায়নের সঙ্গে জড়িতকর্মীরা কার্যকরভাবে শহরটিকে সবুজ করে তুলছেন। আর এসব সবুজ বাক্স এখন মৌমাছিসহ অন্যান্য পোকামাকড়কে আকর্ষণ করছে।

তিনি আরো যোগ করেন, গ্রিন পির সমস্ত প্রস্রাব নষ্ট হয় না। প্রস্রাব থেকে সবুজ উদ্ভিদগুলোর জন্য জৈব সার ও পানি পাওয়া যায়। এটি দেখতেও দুর্দান্ত, আবার কার্যকারিতাও চমৎকার। গ্রিন পি কখন খালি করা দরকার- অপারেটররা তা ম্যানুয়ালি পরীক্ষা করতে পারেন বা সংস্থার ওয়েবসাইট অনুযায়ী একটি স্মার্ট সেন্সরও ব্যবহার করতে পারেন। এই সেন্সর সময়মতো সেলফোনে বা কম্পিউটার ডিভাইসে সতর্কবাতা পাঠায়।

ডি ভ্রিজ এরই মধ্যে গ্রিন পিগুলো ডাচ শহর ভ্লারডিনজেন, বেগবার্গেন এবং বেলজিয়ামের শহর মেকেলেন ও জেনকে-তে স্থাপন করেছে। এরপর তিনি দেখতে চান, এ ধারণাগুলো অন্য দেশে নিয়ে যেতে পারেন কিনা। পাশাপাশি গ্রিন পি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথাও ভাবছেন তিনি।

সিএনএন অবলম্বনে

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন