কম্পিউটার শিক্ষার উন্নয়ন

১ হাজার ১০০ কোটি টাকা পাচ্ছে চার বিশ্ববিদ্যালয়

সাইফ সুজন

দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় শিক্ষার্থীদের পছন্দের বিষয়গুলোর অন্যতম কম্পিউটার বিজ্ঞান প্রকৌশল। চাকরির বাজারেও বিষয়ের গ্র্যাজুয়েটদের বেশ চাহিদা রয়েছে। যদিও নিয়োগ দিতে কাঙ্ক্ষিত মানের গ্র্যাজুয়েট না পাওয়ার অভিযোগ চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে হাইটেক পার্ক প্রতিষ্ঠার পর সংকট আরো তীব্র হয়েছে। এজন্য দক্ষ কম্পিউটার গ্র্যাজুয়েট গবেষক গড়ে তুলতে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার। এর অংশ হিসেবে কম্পিউটার বিজ্ঞান প্রকৌশল শিক্ষার উন্নয়নে চারটি বিশ্ববিদ্যালয়কে দেয়া হচ্ছে হাজার ১০০ কোটি টাকা।

জানা গেছে, ইমপ্রুভিং কম্পিউটার অ্যান্ড সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং টারশিয়ারি এডুকেশন প্রজেক্ট শীর্ষক প্রকল্পটির ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে হাজার ৯৪ কোটি টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০২০-২৫ সাল পর্যন্ত। এতে অর্থায়ন করবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক উচ্চশিক্ষা বিভাগ। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) প্রকল্পে ঋণসহায়তা দেবে। প্রকল্পটির বাস্তবায়ন সমন্বয়ক প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন। প্রকল্পের অর্থ বরাদ্দ পাচ্ছে যে চারটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান তার তিনটি পাবলিক একটি বেসরকারি খাতের। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি যশোর বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি)

প্রকল্প বিষয়ে চূড়ান্ত পর্যায়ের আলোচনার জন্য  শিগগির অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সঙ্গে এডিবির একটি সভা অনুষ্ঠিত হবে। ওই সভায় আলোচনার পর সেটি অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনের পিইসি সভায় উত্থাপিত হবে। সবশেষে একনেকে অনুমোদন সাপেক্ষে প্রকল্পের বাস্তবায়ন শুরু হবে।

চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের কথা মাথায় রেখে প্রকল্পের পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন ইউজিসির সদস্য এবং খুলনা প্রকৌশল প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক . মুহাম্মদ আলমগীর। বণিক বার্তাকে তিনি বলেনতথ্যপ্রযুক্তি খাতকে এগিয়ে নিতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে হাইটেক পার্ক নির্মাণ করছে সরকার। এর মধ্যে নির্মাণকাজ শেষে ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করেছে চারটি। আর ২৪টি হাইটেক পার্ক প্রতিষ্ঠার কাজ চলমান রয়েছে। যদিও তথ্যপ্রযুক্তি খাতসংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, তারা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে কাঙ্ক্ষিত মানের দক্ষ কম্পিউটার গ্র্যাজুয়েট পাচ্ছেন না। এর বাস্তব কিছু কারণও রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পর্যাপ্ত অবকাঠামো রিসোর্স পার্সনের অভাব রয়েছে। প্রকল্পের মাধ্যমে একদিকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এসব ঘাটতি দূর করা হবে, পাশাপাশি ইন্ডাস্ট্রিও এর সুফল ভোগ করবে। প্রকল্পের আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হবে। এজন্য বিশেষ বৃত্তির ব্যবস্থাও রয়েছে।

প্রকল্পের লক্ষ্যমাত্রায় বলা হয়েছে, দেশে দক্ষ কম্পিউটার গ্র্যাজুয়েট গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি বিষয়ে জোর দেয়া হবে। উন্নত করা হবে শিক্ষা গবেষণা অবকাঠামো। এর অংশ হিসেবে গবেষণায় উৎসাহ প্রদান প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এসব বিষয়ে দক্ষ রিসোর্স পার্সন তৈরি করা হবে। ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসিউরেন্স সেলের (আইকিউএসি) মাধ্যমে সিলেবাস হালনাগাদ করা হবে। এক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেয়া হবে চাকরিদাতা শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর চাহিদাকে। বিশেষায়িত কোর্স প্রণয়নে প্রাধান্য দেয়া হবে।

প্রকল্প বিষয়ে যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক . আনোয়ার হোসেন বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষার মানোন্নয়নে প্রকল্প বড় ভূমিকা রাখবে। প্রকল্পের অধীন অবকাঠামো উন্নয়নের একটি পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে একটি ১০ তলা ভবন করা হবে। পাশাপাশি কারিকুলাম প্রণয়নের ক্ষেত্রে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যে সমন্বয়ের ধারা এরই মধ্যে শুরু হয়েছে, সেটি ত্বরান্বিত করা হবে।

কয়েক বছর ধরে কম্পিউটার বিজ্ঞান প্রকৌশল বিষয়ের শিক্ষা এবং কর্মসংস্থান নিয়ে ট্রেসার স্টাডি করে আসছে এডিবি। তার ধারাবাহিকতায় দেশের নয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার গ্র্যাজুয়েটদের ওপর সর্বশেষ জরিপটি চালিয়েছে সংস্থাটি। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজার ২১৬ জন গ্র্যাজুয়েটের পাশাপাশি কম্পিউটার বিজ্ঞান প্রকৌশল বিভাগ এবং ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজির (আইআইটি) প্রধানদের সঙ্গেও কথা বলেছেন তারা। সাক্ষাত্কার নেয়া হয়েছে চাকরিদাতাদেরও। জরিপে প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে বাংলাদেশ: কম্পিউটার অ্যান্ড সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং টারশিয়ারি এডুকেশন ইন ২০১৮ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন গত সেপ্টেম্বরে প্রকাশ করেছে এডিবি। ওই প্রতিবেদনে জরিপের তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, মাসিক মোট ২৫ হাজার ৩৪২ থেকে ৫১ হাজার ৯৩৮ টাকা বেতনে চাকরি শুরু করছেন এসব কম্পিউটার গ্র্যাজুয়েট। তবে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্নের পর অনেকটা সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে তাদের। গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্নের তিন মাসের মধ্যে চাকরি পাচ্ছেন মাত্র ২০ দশমিক শতাংশ কম্পিউটার গ্র্যাজুয়েট। চাকরি প্রাপ্তির ক্ষেত্রে আবার পুরুষদের চেয়ে পিছিয়ে নারীরা। কম্পিউটার গ্র্যাজুয়েট নারীদের ৫৮ দশমিক শতাংশ চাকরিতে প্রবেশ করছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন