লিভারপুল ও স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড দারুণ একটি জুটি

৩০ বছর পর ফের ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা পুনরুদ্ধার করেছে লিভারপুল। করোনার মহামারীকালেও যা লিভারপুলের খেলোয়াড়, কর্মকর্তা, স্পন্সর সমর্থকদের এনে দিয়েছে উৎসবের উপলক্ষ। এই ক্লাবের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই মূল স্পন্সর হিসেবে আছে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক। সম্প্রতি স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক বাংলাদেশের সিইও নাসের এজাজ বিজয় লিভারপুলের শিরোপা জয়, ভবিষ্যৎ স্বপ্ন এবং মহামারীর সময়ে ব্যাংকের উদ্যোগ নিয়ে কথা বলেছেন বণিক বার্তার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন হাসনাত শোয়েব

সাত মাসের বেশি সময় ধরে সবাই একটা মহামারীকাল পার করছি। এর মাঝে লিভারপুল দীর্ঘ ৩০ বছর পর প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা পুনরুদ্ধার করল। শিরোপা জয়ের অনুভূতি কেমন?

এখানে আসলে দুইটা অনুভূতি। একটা হচ্ছে আমাদের স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড যুক্ত আছে ১০ বছর ধরে। আরেকটা হচ্ছে, আমি নিজে ৪২ বছর ধরে লিভারপুলের ফ্যান। আমার জন্য বলা যায় দ্বিগুণ আনন্দের বিষয়। ৩০ বছর পর তো, স্বাভাবিকভাবেই এটার উদযাপনের রেশটা অনেকদিন থাকবে। গত ১৩ মাসে আমরা আসলে চারটা ট্রফি জিতেছি। প্রিমিয়ার লিগ যদিও সবচেয়ে বেশি প্রাসঙ্গিক, কারণ ৩০ বছর ধরে পাইনি। এটা ছাড়াও চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, সুপার লিগ, ক্লাব ওয়ার্ল্ড কাপ। ইংল্যান্ড, ইউরোপ, ওয়ার্ল্ড; তাই এটার রেশ অনেকদিন থাকবে। এটা তো লিভারপুলের জন্য নতুন কিছু না, বিরতি হয়ে গেছে যদিও অনেকদিন। ইংলিশ ক্লাবগুলোর মাঝে শীর্ষ লিগে শিরোপা জয়ে দ্বিতীয় স্থানে লিভারপুল। ১৯টা পেয়েছে লিগ, ছয়টা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ছাড়াও আরো অনেক  শিরোপা পেয়েছে। 

লিভারপুলকে আমরা জানিক্লাবের চেয়ে বেশি কিছুহিসেবে। তাদের নিজস্ব আদর্শ চেতনা রয়েছে। স্পন্সর হিসেবে কাজ করার সময় সেই আদর্শকে আপনারা কতটা বিবেচনা করেন? নাকি এটা স্রেফ একটা ব্যবসায়িক চুক্তি?

লিভারপুল স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড দারুণ একটি জুটি।

আমি শুধু লিভারপুলের ফ্যান স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের কর্মকর্তা বলে বলছি না। আপনি যদি দেখেন, লিভারপুলের একটা আদর্শ আছে। আমরা সব সময় বলি, ‘ইউ উইল নেভার ওয়াক অ্যালোন এটা একটা দলীয় প্রচেষ্টার ব্যাপার। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের ইতিহাস যদি দেখেন, আমাদের পারপাস হচ্ছে ড্রাইভিং কমার্স অ্যান্ড প্রোসপারিটি থ্রু আওয়ার ইউনিক ডাইভার্সিটি। আমাদের ডাইভার্স লোকেশন আছে, এটা আসলেই গ্লোবাল ব্যাংক। আমরা কমিউনিটির সঙ্গে যুক্ত, বিজনেস কমিউনিটির সঙ্গে যুক্ত। আমরা এশিয়া, আফ্রিকা মিডল ইস্ট সব জায়গায় আছি। তিনটা মার্কেটে সক্রিয় এমন ব্যাংক খুব কমই আছে। লিভারপুল যদি দেখেন, খুবই বৈচিত্র্যময় দল। কোচ জার্মান। তিনজন ফরোয়ার্ডএকজন মিসরীয়, একজন সেনেগালিজ আরেকজন ব্রাজিলীয়। ডিফেন্স যদি দেখেনগোলকিপার ব্রাজিলিয়ান, ভার্জিল ভ্যান ডাইক ইউরোপের। মূলত সব জায়গা থেকে বৈচিত্র্যময় একটা সংস্কৃতি নিয়ে আসছে। মূল্যবোধের জায়গা থেকে যদি দেখেন আমাদের তিনটা প্রধান ভ্যালুজ আছে। সেগুলো হচ্ছে ডুয়িং রাইট থিংস, নেভার সেটেল এবং বেটার টুগেদার। আপনি লিভারপুলকে দেখেন, ম্যান টু ম্যান  হিসেবে হয়তো ম্যানসিটি বা বার্সেলোনা ভালো। কিন্তু দল হিসেবে লিভারপুল অন্যদের চেয়ে ভালো। এসব মিলিয়েই আমাদের মাঝে সাদৃশ্য রয়েছে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে বার্সেলোনার কাছে - গোলে হারার পর সবাই একরকম আশা ছেড়ে দিয়েছিল। কোচ বলেছিলেন, অন্য কোনো দল হলে আমি আশাবাদী হতাম না। কিন্তু লিভারপুল বলেই আমি আশাবাদী। 

সম্প্রতি প্রথমবারের মতো নাইকি স্পন্সরশিপ নিয়ে যুক্ত হয়েছে লিভারপুলের সঙ্গে। সামনের দিনে ক্লাবের পথচলায় সেটা কেমন ভূমিকা রাখবে বলে আপনি মনে করেন?

এটা আমাদের সার্বিক যে উদ্যোগ তাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। কারণ নাইকি বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম ব্র্যান্ড। লিভারপুল বিশ্বের বৃহত্তম ক্লাব এবং স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বিশ্বের লিডিং ব্যাংক। তিনটার কম্বিনেশন খুব ভালো ভূমিকা রাখবে। অর্থনৈতিক অনেক চাহিদা থাকে। সেখানে অনেক বড় রোল প্লে করবে। ভালো খেলোয়াড় নেয়ার ব্যাপারে ভূমিকা রাখবে। লিভারপুল ক্লাব যদি দেখেন গত বছর কিন্তু খুব বেশি খেলোয়াড় কেনেনি। ওরা বিনিয়োগ করেছে বর্তমান খেলোয়াড়দের ওপর। দলের যে কোচ তার কিন্তু ব্যাপক বিশ্বাস আছে খেলোয়াড়দের ওপর। কেবল কেনার জন্য না কিনে তারা দলের খেলোয়াড়দের মূল্য দিয়েছে। তার পরও কিন্তু কিছু দুর্বলতা আছে। আপনি যদি দেখেন, বেঞ্চে কিন্তু লিভারপুলের চেয়ে ম্যানসিটি শক্তিশালী। আমি মনে করি, নাইকি স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের মধ্য দিয়ে আরো ভালো খেলোয়াড় কেনার সুযোগ পাবে। ফলে একদিকে খেলোয়াড় বাড়বে, অন্যদিকে গ্লোবাল কাভারেজ বাড়বে। নাইকির আসা আমরা মনে করি ভালো একটা সংযোজন। 

বাংলাদেশে লিভারপুলের বড় একটা সমর্থকগোষ্ঠী রয়েছে। যারা বেশ সংগঠিতও বটে। তাদের সঙ্গে আপনাদের সম্পর্ক কেমন বা তাদের নিয়ে আপনাদের কোনো পরিকল্পনা আছে কিনা?

লিভারপুলের ফ্যান ক্লাব কিন্তু ক্লাব দ্বারা স্বীকৃত। সব দেশে কিন্তু নেই। এটা বেশ বড় একটা গ্রুপ এবং সক্রিয়ও। আমরা যৌথভাবে অনেক কাজ করি। লাইভ ম্যাচ দেখানো হয়। সেখানে আমরা খেলার একটা পরিবেশ তৈরি করি। বড় স্ক্রিন স্পিকার থাকে, জার্সি দিয়ে পুরো ক্যাফেটেরিয়া ভরে যায়। লিভারপুল সাপোর্টারদের আমরা সেখানে আমন্ত্রণ জানাই। দ্বিতীয়ত, আমরা এখন পর্যন্ত তিনজন লিজেন্ডকে বাংলাদেশে এনেছি। ইয়ান রাশ, জন বার্নস রবি ফাওলার। সব ফুটবল অনুসারীই তাদের চিনবে, কারণ তারা তিনজনই নিজেদের জায়গায় প্রথিতযশা। তারা যখন আসে তখন লিভারপুল ফ্যান ক্লাবের সঙ্গে প্রোগ্রাম হয়। এছাড়া ইন্টারভিউর সময়ও ফ্ল্যান ক্লাবের অনেকেই ছিল। আমরা আসলে কন্টিনিউয়াসলি যুক্ত হচ্ছি। এছাড়া ফ্যান ক্লাবের বাইরে যারা আছে তাদেরও আমরা যুক্ত করছি। আমরা আসলে বিবেচনা করছিলাম লিভারপুল ক্রেডিট কার্ড লঞ্চ করা যায় কিনা। আমাদের অন্যান্য মার্কেটে করা হয়েছে। আমরা এখানে দেখছি ব্যাপারটা। যদি সম্ভব হয় এবং যদি রেসপন্স পাই তবে আমরা করব। 

বাংলাদেশের ফুটবলের সঙ্গে আপনাদের যুক্ত হওয়ার কোনো পকিল্পনা আছে কিনা?

লিভারপুল যেহেতু গ্লোবাল ব্র্যান্ড। আমরা চেষ্টা করছি এমন জিনিস স্পন্সর করার, যার গ্লোবাল একটা আবেদন থাকে। সেটা যে দেশেরই হোক। আমরা ব্রিটিশ ব্যাংক বলে ইংল্যান্ড করছি সেটা কিন্তু না। ওটা করা হয় গ্লোবাল আবেদন আছে বলে। বাংলাদেশেও একই। যদি বাংলাদেশে রকম একটা সুযোগ পাওয়া যায়, তবে সেটা আমরা বিবেচনা করব। একসময় আমরা স্কুল ক্রিকেটকে স্পন্সর করতাম। সেটা ভালো একটা কন্ট্রিবিউশন ছিল। ক্লাব ক্রিকেটে প্রাথমিক পর্যায় থেকে বিকাশে একটা ভূমিকা ছিল। রকম সুযোগ যদি আসে, বিশেষ করে মহিলা ক্রিকেট নিয়ে আমরা আগ্রহী, কিছু করা যায় কিনা দেখার জন্য।

বৈশ্বিক আবেদন তৈরির জন্য কোনো উদ্যোগ নেয়া যায় কিনা?

একসময় আমরা করেছি। এখন আমরা চিন্তা করছি, আমাদের মহিলা ক্রিকেট টিমটা কিন্তু ভালো দল। কিন্তু হয়তোবা সে রকম সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে না। ওখানে কিছু করা যায় কিনা সেটা নিয়ে আমরা চিন্তাভাবনা করছি। এখনো ফাইনাল হয়নি। কিন্তু আমরা মনে করছি, কেবল ঢাকাভিত্তিক না, যদি গোটা দেশজুড়ে কিছু একটা করা যায়। সেখানে আমাদের বড় এজেন্ডা হচ্ছে নারীর ক্ষমতায়ন। সেখানে একটা ভূমিকা রাখবে। ক্রিকেটের পুরুষকেন্দ্রিক যে দৃষ্টিভঙ্গি সেটা ভাঙাও সম্ভব। মেয়েরা কিন্তু ভালো করছে। পরিসর বাড়ানো গেলে ছেলেরা যেমন ভালো করছে, মেয়েরাও আরো ভালো করবে। আমরা বৈশ্বিক উদ্যোগের পাশাপাশি স্থানীয় জায়গা থেকেও একটা-দুইটা উদ্যোগ নিতে চাই। সেটার কাজ করছি।

লিভারপুল ফুটবল টিমকে বাংলাদেশে আনার কোনো পরিকল্পনা আছে কিনা?

এখন পর্যন্ত আমরা দুটো কাজ করেছি। একটা হচ্ছে লিভারপুলের খেলোয়াড়দের বাংলাদেশে এনেছি, দল না। যারা কিনা লিজেন্ড। আর আমাদের এখানে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ট্রফি হয়। সেখানে যারা জেতে তাদের লিভারপুলে নিয়ে যাই। সেখানে তারা লিভারপুল দলের খেলোয়াড়দের সঙ্গে ক্যাম্পে যায় এবং খেলা দেখে। এটা আমরা করেছি। আর ওরা যখন এশিয়া ট্যুরে আসে তখন সুযোগ খুঁজি বাংলাদেশে আনা যায় কিনা। সেটার জন্য আমাদের দরকার ফ্যানদের কাছ থেকে আরো বেশি রেসপন্স। আমরা অবশ্যই সেদিকে খেয়াল রাখছি, কারণ বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের একটা গুরুত্বপূর্ণ ফ্র্যাঞ্চাইজি। সে কারণে যদি রকম একটা ইন্টারেস্ট পাওয়া যায়, আমরা অবশ্যই চেষ্টা করব। লিভারপুল দল যখন এশিয়া ট্যুরে এসে মালয়েশিয়ায় যায়, থাইল্যান্ডে যায়, হংকংয়েও গিয়েছে, বাংলাদেশে না কেন। আমরা একবার চিন্তা করছিলাম ভারত-বাংলাদেশ একসঙ্গে করা যায় কিনা। সে রকম একটা প্লান আছে। সুযোগ-সুবিধা মিললে অবশ্যই আমরা চেষ্টা করব।

সাম্প্রতিক সময়ে লিভারপুল সব শিরোপা জিতেছে। অবস্থায় দলের মাঝে কোনো ক্লান্তি আসার সম্ভাবনা আছে কিনা?

আপনি খুবই ঠিক কথা বলেছেন। সেটা হয়। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে একই বছরে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ প্রিমিয়ার লিগ দুটোই জেতা। সেটা অনেক বড় অর্জন হবে। অনেক বছর ধরে সেটা হয়নি। আমি শুনেছি লিভারপুলের কোচ খেলোয়াড়দের কাছ থেকে, তাদের এমনটা করার একটা আগ্রহ আছে। আমরা মনে করছি, আগামী মৌসুম অনেক প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হবে। লিভারপুল এবার যেভাবে শিরোপা জিতল, সেটা আগামী মৌসুমে কঠিন হবে। ম্যানসিটি শক্তিশালী দল। ম্যানইউ অনেকদিন বাইরে আছে, ওরা চেষ্টা করবে। চেলসি, টটেনহাম সবাই চেষ্টা করবে ফিরে আসার জন্য। দুই বছর ধরে ম্যানসিটি লিভারপুল আধিপত্য দেখিয়েছে। বাকিরা অনেক পিছিয়ে ছিল। আমার মনে হয়, ২০২০-২১ ভিন্ন হবে। সেক্ষেত্রে লিভারপুলের বেঞ্চকে শক্তিশালী করতে হবে। আরো বেশি আগ্রাসী হয়ে এগিয়ে আসতে হবে। 

মহামারী ফুটবলের ভবিষ্যৎ অর্থনীতি স্পন্সরশিপকে কীভাবে প্রভাবিত করবে বলে মনে করেন?

অবশ্যই একটা প্রভাব পড়ছে। যেহেতু দর্শকরা মাঠে গিয়ে খেলা দেখছে না। তবে টিভিতে ভিউয়ারশিপ বেড়েছে। সেটা একটা ইতিবাচক ব্যাপার হয়েছে। যে প্রভাব পড়েছে সেটা হয়তো আগামী মৌসুমে থাকবে না। লিভারপুলের জন্য সুবিধা হচ্ছে নাইকির মতো একটা ভালো স্পন্সরশিপ পেয়েছে। এছাড়া লিভারপুল প্রতি বছর উন্নতি করেছে। এই সাকসেস স্টোরির কারণে আমরা মনে করছি আরো কিছু স্পন্সরশিপ পাব। লিভারপুলের দিক থেকে সমস্যা হয়তো হবে না। জেনারেলি বললে, সব ক্লাবের ওপরই প্রভাব পড়বে। ট্রান্সফার উইন্ডোতে সবাই একটু সতর্ক হয়ে খরচ করবে। যাতে ফিন্যান্সটা ঠিকঠাকমতো করতে পারে। এটা আসলে সব জায়গাতেই হয়েছে। এটা পার্ট অব জার্নি।

এতদিন আমরা যে ১৫০-২০০ মিলিয়ন ইউরোর চুক্তি দেখেছি, সেগুলোর ভবিষ্যৎ হুমকিতে পড়ল কিনা?

একদিকে চিন্তা করলে বিষয়টা কিন্তু খারাপ না। এটা কিন্তু এক ধরনের সমতা নিয়ে আসবে। আগে দুই-একটা টিম অনেক বেশি ব্যয় করে খেলোয়াড়দের নিয়ে যেত। এখন হয়তো দলে থাকা খেলোয়াড়দের ওপর বেশি মনোযোগ দেবে। নতুন খেলোয়াড় কেনার চেয়ে স্কোয়াড গঠনের দিকে সবাই বেশি ঝুঁকবে। টাকার খেলার চেয়ে হয়তোবা খেলার প্রতি মনোযোগটা বাড়বে। আমি মনে করি, এটা খুব একটা খারাপ কিছু না। আসলেই যদি টিম স্পিরিট, কোচিং দক্ষতা সমর্থন থাকে, তবে এর সমন্বয়ে একটা মিডিওকার দলও ভালো করে ফেলতে পারে। কয়েক বছর আগে লেস্টার সিটি হঠাৎ করেই চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেল। এমন না সুপারস্টার দিয়ে তারা করেছে। আবার রিয়াল মাদ্রিদ গ্যালাকটিকোস নিয়েও ভালো করেনি। সবসময় বেশি দামে খেলোয়াড় কিনলে ভালো করবে এমন কিন্তু কথা না। তাই আমি মনে করি না এটা খারাপ। এটা আসলে অনেক নেগেটিভের মাঝে একটা পজিটিভ। 

এই সময়টাতে কোচদের ভূমিকা কেমন দেখছেন?

আসলে এখন একেকজন ব্যক্তির সত্যিকারের ক্ষমতা চরিত্র পরীক্ষার মুখে পড়বে। আপনি খরচ করে অনেক কিছু করতে পারেন। কিন্তু বিল্ড করার ক্ষমতা আছে কিনা সেটা আসলে বড় ব্যাপার। এখন কারা আসলে সত্যিকার অর্থে ডিজার্ভ করে সেটা বেরিয়ে আসবে। ক্লপের মতো যারা কিনা ট্যাকটিক্যালি ভালো হওয়ার সঙ্গে একদল সুপারস্টার খেলোয়াড়কে টেনে নিতে পারেন। ধরনের কোচরাই অনেক বেশি সফল হবেন। ধরনের ক্লাবই অনেক বেশি সফল হবে। আর সমর্থকরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। আমি মনে করি এই কম্বিনেশনগুলো আসলে আগের ফুটবলের যে স্পিরিট ছিল, যেটা টাকার চেয়ে বেশি, তাকে ফিরিয়ে আনবে। 

চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা জয়ে এবার কাদের ফেভারিট মনে করছেন?

ম্যানসিটি পিএসজি শক্তিশালী দাবিদার। পিএসজি ফ্রান্সে যা যা আছে সব পেয়েছে। কিন্তু চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খুব একটা ভালো করতে পারেনি। বছর হয়তোবা ওদের সুযোগ। ম্যানসিটিও একইভাবে ভালো। 

মহামারীর এই সময়ে বৈশ্বিকভাবে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক কেমন ভূমিকা রাখছে?

আমি খুবই গর্বিত স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড যে ভূমিকা রেখেছে তা নিয়ে। গ্লোবালি ৫০ মিলিয়ন ডলারের একটা স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ফাউন্ডেশন করা হয়েছে, কভিড-১৯সহ অন্যান্য ধরনের চ্যালেঞ্জ ফেস করার জন্য। আরেকটা বিলিয়ন ডলারের কভিড-১৯ সম্পর্কিত ফিন্যান্সিং প্রোগ্রাম করা হয়েছে। আর বাংলাদেশে আমরা ১৫ লাখ মিলের ব্যবস্থা করেছি; ১০ হাজার ফ্যামিলি ৫০ হাজার ব্যক্তির জন্য। যেখানে আমরা ১৫ দিনের খাবার দিয়েছি। রান্না করা খাবার না, চাল, ডালসহ অন্যান্য শুকনো খাবার। দশমিক মিলিয়ন ডলার আমরা ইউনিসেফকে দিয়েছি। সেটা শিক্ষাসহ কভিডের অন্যান্য রেসপন্স হিসেবে করা হয়েছে। লাখ ডলার দিয়েছি রেড ক্রিসেন্টকে। আমরা হাসপাতালে কাজ করেছি, বিদ্যানন্দের সঙ্গে কাজ করেছি এবং সাজেদা ফাউন্ডেশনের সঙ্গেও কাজ করেছি। পাশাপাশি আমাদের স্টাফরাও নিজেদের বেতনের একটা অংশ দিয়েছে। ব্যাংকও দিয়েছে। সেটা ছিল তাত্ক্ষণিক প্রতিক্রিয়া। এখন কাজ করছি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করে। যেসব মানুষের চাকরি গেছে, তাদের কীভাবে অর্থনৈতিকভাবে সাহায্য করা যায় সেসব নিয়ে ভাবছি। সব মিলিয়ে আমি আসলে খুবই গর্বিত। আমরা একটা দায়িত্ববোধ থেকে কাজ করছি। 

সবশেষে পাঠকদের উদ্দেশে যদি কিছু বলেন?

ধন্যবাদ আমাকে সুযোগটা দেয়ার জন্য। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যেটা দেশের জন্য ভালো সেটা আমাদের জন্যও ভালো। কারণ যদি দেশ ভালো হয় আমাদের ব্যবসার পরিসর বাড়বে। আমরা লাভবান হব।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন