বড় নদীতে সেতু নির্মাণ নিয়ে নীতিমালা করছে সরকার

নিজস্ব প্রতিবেদক

নাব্যতার স্বার্থে দেশের বড় নদীর পাঁচ থেকে সাত কিলোমিটারের মধ্যে কোনো সেতু নির্মাণ না করার ব্যাপারে নীতিমালা তৈরির নির্দেশনা দিয়েছেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। গতকাল স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের সম্মেলন কক্ষে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তিস্তা নদীর ওপর পিসি গার্ডার সেতু এবং চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার ডাকাতিয়া নদীর ওপর নির্মিত সেতুর ডিজাইন সংক্রান্ত আলোচনা সভায় তিনি নির্দেশনা দেন।

সভায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন, সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রে নদীর নাব্যতা, পানিপ্রবাহ ঠিক রাখা, নৌ চলাচল, কৃষি সেচ মৎস্য এবং পরিবেশের বিষয়টি নিশ্চিত করা এবং যেখানে সেখানে ব্রিজ নির্মাণ না করে অর্থাৎ আইন অনুযায়ী নির্মাণ করতে এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলীকে প্রধান করে স্থানীয় সরকার বিভাগ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, বিআইডব্লিউটিএসহ সংশ্লিষ্টদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত দেন মন্ত্রী। কমিটিতে নাব্যতার স্বার্থে বড় নদীগুলোর ন্যূনতম পাঁচ থেকে সাত কিলোমিটারের মধ্যে কোনো সেতু না করার ব্যাপারে একটি নীতিমালা করে তার খসড়া মন্ত্রণালয়ে দাখিল করতে বলেন তিনি। এছাড়া তিনি তিস্তা নদীর ওপর নির্মিতব্য পিসি গার্ডার সেতু এবং ডাকাতিয়া নদীর ওপর নির্মিতব্য সেতু নদীর নাব্যতা, পানি প্রবাহ নৌ চলাচল ইত্যাদি বিষয় ঠিক আছে কিনা তা পুনর্বিবেচনা করে কমিটিকে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন প্রদান করতে বলেন।

হাইড্রোলজিক্যাল, মরফোলজিক্যাল নেভিগেশন সমীক্ষায় নদীর বৈশিষ্ট্য, অভ্যন্তরীণ নদীগুলোয় নাব্যতা বৃদ্ধি করে পানি সরবরাহ, মৎস্য চাষ এবং কৃষি সেচ ব্যবস্থা অক্ষুণ্ন রাখার ওপর জোর দিয়ে তাজুল ইসলাম বলেন, ব্রিজ নির্মাণের সময় নদীর দুই পাশের খাল কোনো অবস্থাতেই সংকোচন করা যাবে না। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ত্রাণ মন্ত্রণালয়সহ যেসব সংস্থা ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ করছে তাদের সবাইকে প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন মেনে নেভিগেশন, নদীর নাব্যতা, ড্রেজিং এবং নৌ চলাচল ব্যবস্থা ঠিক রেখে নির্মাণ করার আহ্বান জানান তিনি।

মন্ত্রী বলেন, দেশের গ্রামগঞ্জে নতুন পাকা রাস্তা সেতু-কালভার্ট করতে হলে সংশ্লিষ্ট উপজেলা পরিষদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটিতে আলোচনার মাধ্যমে যোগ্যতা প্রমাণ সাপেক্ষে কার্যবিবরণীতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, যাতে যত্রতত্র রাস্তা, ব্রিজ নির্মাণ করে বাংলাদেশের ভূ-প্রকৃতির ক্ষতি না হয়।

উপজেলা পরিষদের জনপ্রতিনিধি, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে কমিটি গঠন করা যেতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কমিটি কর্তৃক যাচাই-বাছাই করে যে প্রতিবেদন দেয়া হবে তা বিবেচনায় নিয়ে রাস্তা ব্রিজ নির্মাণের অনুমোদন দেয়া হবে। এতে যত্রতত্র রাস্তাঘাট ব্রিজ নির্মাণ বন্ধ হবে।

তাজুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। নদী এবং জমির ওপর অর্থনীতির বড় একটি অংশ নির্ভর করে। তাই নদীর যে বহুমাত্রিক সুবিধা আছে সেগুলোকে কাজে লাগিয়ে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড জোরদার করতে হবে।

সভায় স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ, নৌ-পরিবহন সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী, স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মেজবাহ উদ্দিন, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রোকন উদ-দৌলা, এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী মো. আব্দুর রশিদ খান, বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক, পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মোতাহের হোসেন, সেতু নির্মাণের প্রকল্প পরিচালকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন