বাজারে ফিরছেন সাইডলাইনে থাকা বিনিয়োগকারীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

সার্বিক সুশাসনের ঘাটতি আর ক্রমাগত সূচক শেয়ারের দরপতনের কারণে বাজারবিমুখ হয়ে পড়েছিলেন অনেক বিনিয়োগকারী। নভেল করোনাভাইরাসের প্রভাবে পুঁজিবাজারের সংকট আরো তীব্র হয়ে ওঠে। তবে তিন সপ্তাহ ধরেই পুঁজিবাজারে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। বাজারবিমুখ হয়ে পড়া সাইডলাইনে থাকা বিনিয়োগকারীরাও আবার ফিরে আসতে শুরু করেছেন। পাশাপাশি সক্রিয় হয়ে উঠছেন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা। এতে ধারাবাহিকভাবে সূচক লেনদেন বাড়ছে পুঁজিবাজারে।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নতুন নেতৃত্ব দায়িত্ব নেয়ার পর বাজার বিনিয়োগবান্ধব বেশকিছু উদ্যোগ নেন। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফিরে আসতে শুরু করে। তাছাড়া করোনাভীতি কাটিয়ে ধীরে ধীরে অর্থনীতি স্বাভাবিক অবস্থার দিকে যাচ্ছে। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থাও ফিরে আসছে। সূচক কমতে কমতে এমন অবস্থায় গিয়ে দাঁড়িয়েছিল যে অনেক ভালো কোম্পানির শেয়ারের দামও যৌক্তিক মূল্যের অনেক নিচে নেমে যায়। ফলে এক শ্রেণীর সুযোগসন্ধানী বিনিয়োগকারী ভালো মুনাফার প্রত্যাশায় কম দামে এসব শেয়ারে বিনিয়োগ করছেন। আর এসব কিছুর ইতিবাচক প্রভাব দেখা যাচ্ছে বাজারে।

বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, গতকাল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১৫৬ পয়েন্ট বেড়ে হাজার ৮৫৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে, যা এর আগের দিন ছিল হাজার ৭০৩ পয়েন্টে। ডিএসইর শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস গতকাল ২১ পয়েন্ট বেড়ে দিন শেষে হাজার ১১০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে, যা আগের দিন ছিল হাজার ৮৮ পয়েন্টে। ব্লু-চিপ সূচক ডিএস-৩০ দিনের ব্যবধানে ৪৬ পয়েন্ট বেড়ে গতকাল হাজার ৬৪০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে, আগের দিন শেষে যা ছিল হাজার ৫৯৪ পয়েন্টে।

গতকাল ডিএসইতে মোট হাজার ৩৫১ কোটি ৩০ লাখ টাকার সিকিউরিটিজ হাতবদল হয়েছে, আগের কার্যদিবসে যা ছিল হাজার ২০৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এদিন ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩৫৫টি কোম্পানি, মিউচুয়াল ফান্ড করপোরেট বন্ডের মধ্যে দিন শেষে দর বেড়েছে ৩০১টির, কমেছে ৪২টির আর অপরিবর্তিত ছিল ১১টি সিকিউরিটিজের বাজারদর।

খাতভিত্তিক লেনদেনচিত্রে দেখা যায়, গতকাল ডিএসইর মোট লেনদেনের ১৭ শতাংশ দখলে নিয়ে শীর্ষে অবস্থান করছে ওষুধ খাত। ১৪ শতাংশ লেনদেনের ভিত্তিতে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল ব্যাংক খাত। তৃতীয় সর্বোচ্চ ১৩ শতাংশ দখলে নিয়েছে সাধারণ বীমা খাত। ১০ শতাংশ করে দখলে ছিল প্রকৌশল খাতের।

গতকাল ডিএসইতে লেনদেনের ভিত্তিতে শীর্ষ সিকিউরিটিজ ছিল বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসবেক্সিমকো লিমিটেড, ব্র্যাক ব্যাংক, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্স, সামিট পাওয়ার, নাহি অ্যালুমিনিয়াম, এসকে ট্রিমস, বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্স।

দর বাড়ার শীর্ষ কোম্পানির তালিকায় ছিল পিএইচপি ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, এবি ব্যাংক ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, ওরিয়ন ফার্মাসিউটিক্যালস, প্রিমিয়ার লিজিং, এসইএমএল এফবিএলএসএল গ্রোথ ফান্ড, ব্র্যাক ব্যাংক, প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স, সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্স, ফাইন ফুডস রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স।

অন্যদিকে গতকাল এক্সচেঞ্জটিতে দর পতনের শীর্ষে থাকা কোম্পানিগুলো হচ্ছে ইস্টার্ন কেবলস, ন্যাশনাল টি, ফু-ওয়াং ফুড, ইফাদ অটোজ, নিটল ইন্স্যুরেন্স, রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, সোনালী আঁশ, ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স, নাভানা সিএনজি ঢাকা ইন্স্যুরেন্স।

দেশের আরেক পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) গতকাল সিএসসিএক্স সূচক দিনের ব্যবধানে ২৮৯ পয়েন্ট বেড়ে হাজার ৩৬২ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আগের কার্যদিবসে সূচকটির অবস্থান ছিল হাজার ৭৩ পয়েন্টে। এদিন এক্সচেঞ্জটিতে লেনদেন হওয়া ২৯৬টি কোম্পানি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ২৫১টির, কমেছে ২৫টির আর অপরিবর্তিত ছিল ২০টির বাজারদর। গতকাল সিএসইতে মোট ৪৬ কোটি টাকার সিকিউরিটিজ হাতবদল হয়েছে, আগের কার্যদিবসে যা ছিল ৩৫ কোটি ১০ লাখ টাকা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন