বিনম্র শ্রদ্ধায় বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিনম্র শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ফুলেল শ্রদ্ধার্ঘ্যে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৫তম শাহাদতবার্ষিকীতে তাকে স্মরণ করল বাঙালি জাতি। গতকাল রাজধানীর ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে বাংলাদেশের স্থপতি, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি বনানী কবরস্থানে ১৫ আগস্টে শহীদদের কবরে বিভন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে।

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে এবারের শোক দিবসের গুরুত্ব অনেক বেশি ছিল। নানা প্রস্তুতি থাকলেও নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে অনেকটা সংক্ষিপ্ত পরিসরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পালন করা হয়েছে এবারের শোক দিবস। আর করোনা পরিস্থিতির মধ্যে দেশব্যাপী বন্যায় বিপর্যস্ত জনজীবনের কারণেও কর্মসূচি সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। প্রতিবার ১৪ আগস্ট মধ্যরাত থেকেই নানা আয়োজন চোখে পড়ত। ১৫ আগস্ট সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধু ভবনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের ভিড় থাকত। তবে করোনার কারণে সেটা কম দেখা গিয়েছে। রাজধানীসহ সারা দেশে কাঙালিভোজের আয়োজন করা হতো। এবার সেটাও কম দেখা গিয়েছে। তবে রাজধানীর বিভিন্ন উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন ছিল উল্লেখযোগ্য। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠান সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে।

গতকাল সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে দেশের সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ভবন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোয় জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করার মধ্য দিয়ে শুরু হয় জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচি। ভোর সাড়ে ৫টার দিকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণের পর মহান নেতার প্রতি সম্মান জানিয়ে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন প্রধানমন্ত্রী। সময় সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রীয় সালাম জানায়। বিউগলে বেজে ওঠে করুণ সুর। পরে ১৫ আগস্টে শহীদদের রুহের মাগফিরাত শান্তি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। শ্রদ্ধা নিবেদনের পর প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু ভবনের ভেতরে যান। সেখানে বেশ কিছুক্ষণ অবস্থান করেন। সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন তার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ হোসেন পুতুল।

এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বনানী কবরস্থানে যান। সেখানে তিনি তার মা বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, ভাই শেখ কামাল, শেখ জামাল শেখ রাসেলসহ ১৫ আগস্টের অন্য শহীদদের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। সময় ১৫ আগস্টের শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া মোনাজাত করেন প্রধানমন্ত্রী।

পরে সকাল ৮টায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। পরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বনানী কবরস্থানে ১৫ আগস্টে শহীদদের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ছাড়াও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ উত্তর, কৃষক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, যুব মহিলা লীগ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে বনানী কবরস্থানে শহীদদের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। 

গতকাল দিনটি ছিল সরকারি ছুটি। বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ সরকারি-বেসরকারি রেডিও টিভি চ্যানেলগুলো দিবসের তাত্পর্য তুলে ধরে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করে।

এদিকে শোক দিবস উপলক্ষে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ ইকোনমিক জোন অথরিটি (বেজা), ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই), কলকারখানা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর (ডাইফ), বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই), বঙ্গবন্ধু গবেষণা পরিষদ, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড ইউনিভার্সিটি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৫তম শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এসব অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক . হাছান মাহমুদ, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ, মত্স্য প্রাণিসম্পদমন্ত্রী রেজাউল করিম, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, পরিবেশ, বন জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক, শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন