বাঙালির ভাষা রাষ্ট্রের পিতা

মোস্তাফা জব্বার

হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তোমাকে শততম জন্মবার্ষিকীর শুভেচ্ছা। বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম বাঙালি, বিশ্বের একমাত্র বাংলা ভাষা রাষ্ট্রের পিতা, বাংলা ভাষা আন্দোলনের জনক, চার দশকেরও বেশি সময় আগে বাংলার মাটিকে রক্ত দিয়ে পবিত্র করে যাকে সপরিবারে শহীদ হতে হয়েছিল, তার সম্পর্কে দুটি বাক্য লিখতে আর কার কী হয় জানি না, আমার তো হাত কাঁপে। এত বড় মাপের মানুষ, তাকে মূল্যায়ন করার ক্ষমতা আমার মতো নগণ্য একজনের থাকতেই পারে না। একাত্তর বছর বয়সে তাকে নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ নিবন্ধ লিখতে পারিনি। আমি তার ভক্ত-সৈনিক-যোদ্ধা। যৌবনে তাকে দূর থেকে দেখেছি। তার সৈনিক হিসেবে যুদ্ধ করে যাচ্ছি। আমার চারপাশে, ইতিহাসের পাতায় তার সঙ্গে তুলনীয় কোনো রাজনীতিককে আমি দেখি না। আমার পাঠ করা গল্প-ইতিহাসের পাতায়ও নেই। বাংলাদেশ, ভারতবর্ষ, দক্ষিণ এশিয়া, এশিয়া বা সারা দুনিয়া খুঁজে একজন শেখ মুজিবুর রহমান পাইনি আমি। তিনি কেবল হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি নন; তাকে আমি মনে করি একজনই বাঙালি, যার মাঝে একজন শ্রেষ্ঠ মানুষ খাঁটি বাঙালিত্বের পুরোটা আছে এবং সেজন্য তিনি সব বাঙালির, সব বাংলা ভাষাভাষীর একমাত্র অনুসরণীয় নেতা। সাম্প্রতিককালে আমাদের চারপাশে তাকে নিয়ে কোটি কোটি হরফ দেখি। কাগজে বা অনলাইনে তাকে নিয়ে লেখার অভাব নেই। যিনি যেভাবে চান, তাকে সেভাবেই উপস্থাপন করছেন। কেন জানি মনে হচ্ছে তার নীতি, আদর্শ বা কর্মপন্থাকে আমরা এখনো সেভাবে মূল্যায়ন করি না, যেভাবে সেটি করা দরকার। অনেক ভাবনা থেকে তার সম্পর্কে একটি অতিক্ষুদ্র নিবন্ধ লেখার সাহসও এতদিন পাইনি। এবার যখন ৭১ বছরে পা দিলাম আর মুজিব বর্ষটা চলেই এল, তখন মনে হলো এই মহামানব সম্পর্কে নিজের ভাবনাটার কিছু অংশ প্রকাশ করে যাওয়াটা নিজের কাছে জবাবদিহি করার মতো একটি বিষয়। নইলে একসময়ে মনে হবে আমি তাকে যেমনটি ভাবি, সেটি তো কাউকে বলা হয়নি।

আমি নিজে তার নাম সরাসরি শুনেছি রাজনীতির সৈনিক হয়েছি ১৯৬৬ সালে, যখন ঢাকা কলেজে পড়ার সময়ে ছাত্রলীগ করা শুরু করি। যদিও সাধারণ ছাত্র হিসেবে স্কুলের সপ্তম শ্রেণীতে পড়ার সময় শিক্ষা আন্দোলনে যুক্ত ছিলাম, তার পরও সাংগঠনিক কাঠামোয় যুক্ত হই ঢাকা কলেজে পড়ার সময়। সেখানেই ছয় দফা নামের একটি লিফলেট বণ্টন করতে গিয়ে প্রথম জেনেছি যে বাঙালিরা তাদের প্রাপ্য পায় না। কেবল তাই নয়, তত্কালীন পূর্ব পাকিস্তানের ভেতরেও সাধারণ মানুষ বৈষম্যের শিকার। গ্রাম থেকে হাওড়ের কাদামাটি পায়ে মেখে ঢাকায় এসে অনুভব করি, কিছু ধনী নগরবাসী ছাড়া আমরা সবাই শোষিত-বঞ্চিত সর্বহারা। এর আগে স্কুলের লাইনে দাঁড়িয়ে পাক ছর জমিন সাদ বাদ গেয়েছি। পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদকে পোক্ত করার জন্য স্কুলে আমাকে উর্দু পড়তে বাধ্য করা হয়েছে। এসএসসিতে আমার ফল খারাপ হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে আমি বাধ্য হয়ে পড়া উর্দুতে মাত্র ৩৩ নাম্বার (পাস নাম্বার) পেয়েছিলাম। সেই থেকে দুচোখে পাকিস্তান তো বটেই উর্দুকেও দেখতে পারি না। ঢাকা কলেজের রাজনৈতিক জ্ঞানকে আরো শাণিত করতে পারি যখন ১৯৬৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করি। তখন এগারো দফায় সেই ছয় দফা যুক্ত হয় আর রাজপথে শেখ মুজিবের মুক্তির দাবিতে মিছিল করা দিয়ে নিজের স্লোগান দেয়ার ক্ষমতাকে প্রমাণ করি। তখনই দেয়ালে চিকা মারা বা দেয়াললিখন পোস্টার লেখাও শিখি। ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নগণ্য একজন কর্মী হিসেবে তার সামনে যাওয়ার কোনো কারণই ছিল না। তবে যারা তার কাছে থাকতেন, তাদের সঙ্গে আমরা দিন-রাত কাটাতাম বলে তার ব্যক্তিগত ভাবনা-জীবনাচার বা রাজনৈতিক দর্শন জানতে পারতাম। আমরা গত ১৭ মার্চ জন্মশতবার্ষিকী ১০১তম জন্মদিন পালন করলাম। স্মরণ করতে পারি ২৩ ফেব্রুয়ারি৬৯ আজকের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আমরা তাকে বঙ্গবন্ধু উপাধি দিয়েছিলাম; যার ৫০তম বার্ষিকী ২০১৯ সালে অতিক্রান্ত হলো। চোখের সামনে সেই মহামানবকে দেখা সেই প্রথম।

নিবন্ধে তার জীবন নিয়ে ইতিহাস লেখার কোনো ইচ্ছাই আমার নেই। অনেকে লিখেছেন, লিখবেন এবং সারা বিশ্ব তাকে নিয়ে গবেষণা করবে, বর্তমানের পরিপ্রেক্ষিতে এটাই স্বাভাবিক। গত কয়েক বছরে তার কন্যা বাংলার স্বর্ণকন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে যেখানে স্থাপন করেছেন, তাতে সারা বিশ্বকে জানতেই হবে যে কে দেশের জনক এই শেখ মুজিবুর রহমান। এক সময়ে  মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জারের তলাহীন ঝুড়ির দেশ এখন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, ভারতীয় অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনসহ বিশ্বনায়কদের আদর্শ দেশ।

আমাদের দেশটির জনক প্রথম আমাকে আকৃষ্ট করেন তার অতিসাধারণ জীবনযাপন, সহজ-সরল অভিব্যক্তি, রাজনৈতিক দূরদর্শিতা, আপসহীনতা, দুঃসাহস স্পষ্টবাদিতায়। বাংলা, বাঙালি বাংলাদেশকে এবং দেশটির সর্বহারা মানুষকে অন্তর থেকে ভালোবাসার আর একটি মানুষকেও আমি তখন খুঁজে পাইনি। তত্কালে সমাজতন্ত্র, কমিউনিজম পূর্ব বাংলার জনগণের অধিকার নিয়ে বহু রাজনৈতিক দল নানাভাবে তাদের কর্মসূচি তুলে ধরেছে। তাদের কারো আদর্শ ছিল পিকিং, কারো মস্কো বা কারো ওয়াশিংটন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই একমাত্র রাজনৈতিক নেতা, যিনি তার রক্তের প্রতি ফোঁটায় এই মাটির মানুষকে ভালোবাসতেন।

ঢাকা কলেজ থেকেই বঙ্গবন্ধুর বড় ছেলে শেখ কামালকে চিনতাম। তিনি আমার এক বছর পরে ১৯৬৭ সালে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। তিনি হয়তো বঙ্গবন্ধুর রেপ্লিকা হয়ে রাজনীতি করেননি, কিন্তু আমার স্পষ্ট মনে আছে তার সক্রিয় অংশগ্রহণে ঢাকা কলেজে ছাত্রলীগের রাজনীতির আমূল

এরপর » পৃষ্ঠা 

পরিবর্তন ঘটে। যে কলেজে আমরা একটি সভা করতে পারতাম না, সেই কলেজে একসময়ে আমরা মিছিলও করতে পেরেছি।

শেখ কামাল রাজনীতিতে ভীষণ সক্রিয় থাকার পাশাপাশি খেলাধুলা সংস্কৃতির ক্ষেত্রেও অত্যন্ত সক্রিয় ছিলেন। কেবল রাজনীতি নয়, তিনি খেলাধুলার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডেও ব্যাপকভাবে যুক্ত ছিলেন। শেখ কামাল আমাদের সঙ্গে নাটক করতেন। তিনি আমার লেখা প্রথম বাংলা গণনাট্যএক নদী রক্তেঅভিনয় করেছিলেন এবং আহতও হয়েছিলেন। একাত্তর সালে তাকে দেখেও কেউ ভাবতে পারত না যে তার পিতা পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য জনগণের রায় পেয়ে আছেন। আমি স্মরণ করতে পারি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কেবল তার রাজনৈতিক দল নয়, ছাত্র বা শ্রমিক সংগঠনের নেতাকর্মীদের ব্যক্তিগতভাবে চিনতেন। এমনকি তাদের পারিবারিক তথ্যও মনে রাখতেন। সেই মানুষটির সাধারণ মূল্যায়ন যখন আমরা করি, তখন কেবল তার বাংলাদেশ সৃষ্টির বিষয়টিকে প্রাধ্যান্য দিই। তবে তার ব্যক্তিজীবন, পারিবারিক জীবনাচারসহ সামগ্রিক জীবনধারাও আলোচনার দাবি রাখে। বস্তুতপক্ষে, বঙ্গবন্ধুর সবচেয়ে বড় পরিচিতি বাংলা ভাষাকেন্দ্রিক বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জনক হিসেবেই।

শেখ কামালের মাঝে তার পারিবারিক জীবনধারার প্রতিফলন ছিল। বাঙালি মধ্যবিত্তের সব রূপের প্রতিফলন ছিল শেখ কামালের জীবনে। কেবল শেখ কামালই নন, বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক উত্তরাধিকার আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মাঝেও ছিল। ১০৭০ সালে সারা বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব যখন অবিসংবাদিত নেতা, তখন তার জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনার সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহপাঠিনী হিসেবে তাকে প্রথম চিনি। তিনি তখন বিবাহিতা। তাকে দেখে আমি আরো অভিভূত হই। যার অঙ্গুলি হেলনে পাকিস্তান কেঁপে ওঠে, সেই মানুষটির বড় মেয়ে ১০ টাকা দামের টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি পরে সহপাঠীদের সঙ্গে আর দশটা সাধারণ মেয়ের মতোই মিশে, আড্ডা দেয়, গল্পগুজব করে; এটি শেখ হাসিনাকে না দেখলে বিশ্বাস করতাম না। তিনি অতিসাধারণ পরিবারের মেয়ে রোকেয়ার সঙ্গে দারুণভাবে বন্ধুত্ব গড়ে তুলেছিলেন। তার বান্ধবীরা নিম্নমধ্যবিত্ত বা মধ্যবিত্ত পরিবারের ছিল। আমি দু-চারজনের নাম স্মরণ করতে পারিরোকসানা সুলতানা সানু, শিরি, সাইদা, হেলেন মমতাজ আপাদের পাশাপাশি আমাদের সিনিয়র বেবী মওদুদ আপার সঙ্গে তার পরম বন্ধুত্ব ছিল। আমার স্পষ্ট মনে আছে, তিনি বাংলা বিভাগের নির্বাচনে আমাকে ভিপি পদপ্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার জন্য সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিলেন।

যে সময়ে ব্রিটিশরা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ জওহরলাল নেহরুর সাম্প্রদায়িক রাজনীতি, দ্বিজাতি তত্ত্ব ব্যক্তিগত লোভের বশে পুরো উপমহাদেশটিকে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্পে কলঙ্কিত করে দুটি অদ্ভুত সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র বানিয়ে দিয়ে গিয়েছিল এবং পুরো উপমহাদেশের তাবৎ বড় বড় রাজনীতিবিদ সেই সাম্প্রদায়িকতাকেই মাথায় তুলে নিয়েছিলেন, তখন কেবল শেখ মুজিব সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গঠনের বিপরীতে একটি ভাষাভিত্তিক আধুনিক জাতিরাষ্ট্র গঠনের দূরদর্শী স্বপ্ন দেখেন। ভাষাভিত্তিক আধুনিক রাষ্ট্র গঠনের ধারণা তখন ইউরোপ, জাপান, কোরিয়া বা চীনের বাইরে প্রসারিত হয়নি। অঞ্চলে ভাষা রাষ্ট্র ধারণা তখন মোটেই গুরুত্ব পায়নি। ভারত বহুভাষিক হিন্দুপ্রধান রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে ওঠে। খুব সংগত কারণেই কাগজে-কলমে ভারতের ধর্ম রাষ্ট্র হওয়ারও খুব সুযোগ ছিল না। তবে ভারতের আত্মাটা ছিল হিন্দু রাষ্ট্রের। বস্তুত, ব্রিটিশরা ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার ব্যবস্থা করেছিল। ভারতের নেতারাও সেটি মেনে নিয়েছিলেন এবং সেই পথেই দেশটিকে গড়ে তুলেছিলেন। আজকের দিনে ভারতে কাশ্মীরসহ অন্য যেসব বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন চলছে, তার পেছনে বৈষম্য, অসাম্য, শোষণ নির্যাতনের ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। কোথাও কোথাও সাম্প্রদায়িকতা বর্ণবৈষম্যও রয়েছে। সম্প্রতি নাগরিকত্ব আইন নিয়ে যে তুমুল বিতর্ক, তার পেছনেও সাম্প্রদায়িকতাই কাজ করে। কাশ্মীরে তো সাম্প্রদায়িকতাই মূল ইস্যু। ভারতের দশা এখন এতটাই নিচে নেমেছে যে ১৯৪৭ সালের দাঙ্গা ২০২০ সালে আবার দিল্লিতে ফিরে এসেছে। অন্যদিকে পাকিস্তান হয়ে ওঠে উগ্র সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র। মৌলবাদ, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস এই রাষ্ট্রের ভিত্তি। বঙ্গবন্ধু সেই মানুষটি, যিনি বাংলাদেশের অন্তরকে অনুভব করেন এবং উগ্র সাম্প্রদায়িকতা যে অঞ্চলের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য নয় এবং বাঙালি যে তার ভাষা-সাহিত্য-সংস্কৃতিকে সবার ওপরে ঠাঁই দেয় এবং তার এই জীবনধারায় ধর্ম যে প্রধান শক্তি নয়, সেটি উপলব্ধি করতে সক্ষম হন। আমি নিজে অভিভূত হই যখন দেখি যে তিনি পাকিস্তানের কাঠামোয় থেকে তার রাজনৈতিক সংগঠনের নাম থেকেমুসলিমশব্দটি উপড়ে ফেলে দিতে পারেন। যে মানুষটি নিজেকে স্পষ্ট করে দুনিয়ার কাছে তুলে ধরতে পারেন যে তিনি মানুষ, বাঙালি মুসলমান, সেই মানুষটি পাকিস্তানের ৯০ শতাংশ মুসলমানের চোখের সামনে পাকিস্তানের কোনো রাজনৈতিক সংগঠনকে ধর্মনিরপেক্ষ করতে পারেনএটি যেন স্বপ্নের মতো! তার শততম জন্মবার্ষিকীতে আমাদের ভেবে দেখা উচিত তিনি কেবল মুসলিম শব্দ বর্জন করেননি, মুসলমানদের রাষ্ট্র পাকিস্তানকে বিভাজিত করে সেখানে মুসলিমপ্রধান জনগোষ্ঠীকে নিয়ে ভাষাভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে সেই রাষ্ট্রের সংবিধানকে অসাম্প্রদায়িক করে গেছেন। আমার জানামতে, তার হাতে তৈরি৭২ সালের সংবিধানটি হচ্ছে দুনিয়ার অন্যতম সেরা সংবিধান, যার সঙ্গে তুলনা করার মতো কোনো সংবিধান অন্তত অঞ্চলে পাওয়া যায় না। সংবিধানকে ছিন্নভিন্ন করে জিয়া এরশাদ কেবল যে সাম্প্রদায়িকতা যুক্ত করেন তাই নয়, এর গণতান্ত্রিক চরিত্রও বিনষ্ট করেন। আমাদের জন্য দুঃখজনক যে৭৫ থেকে৯৬ অবধি দেশে এমন সাম্প্রদায়িক রাজনীতি গড়ে তোলা হয় যে বঙ্গবন্ধুর কন্যার পক্ষেও এখন৭২-এর সংবিধানের মূল চরিত্রে ফেরত যাওয়া সহজ হচ্ছে না। এখন যদি তিনি সেই কাজটি করেন, তবে রাজনীতির ছকটাকে উল্টানোর অপচেষ্টা করা হবে এবং বাংলাদেশকে পাকিস্তানের মতোই সাম্প্রদায়িক, জঙ্গি একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার রাজনীতি প্রবলভাবে জোরদার করা হবে। বঙ্গবন্ধুর বাঙালিত্ব, তার প্রতি একনিষ্ঠতা জাতিসত্তা বিষয়ে অত্যন্ত স্পষ্ট নীতিমালা আমার মতো লাখো তরুণকে বাংলাদেশ নামে একটি রাষ্ট্র গঠনে জীবন দিতে উদ্বুদ্ধ করেছে। যারা এখন মনে করেন যে পাকিস্তান আমাদের ঠকিয়েছে, ন্যায্য পাওনা দেয়নি এবং বনিবনা হয়নি বলে পাকিস্তান ভেঙে বাংলাদেশ জন্ম নিয়েছে, তারা বঙ্গবন্ধুর নীতি আদর্শকে আংশিক বাহ্যিক দিকটা বোঝেন, পুরোপুরি বুঝতেই পারেন না।

 

মোস্তাফা জব্বার: মন্ত্রী, ডাক টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন