ব্রাজিল থেকে আমদানি করা হিমায়িত মুরগীতে করোনা, দাবি চীনের

বণিক বার্তা অনলাইন

ব্রাজিল থেকে আমদানি করা হিমায়িত মুরগীর ডানাগুলোর একটি নমুনায় করোনাভাইরাস পজিটিভ শনাক্ত করেছে চীন। শেনঝেন পৌর সরকার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বুধবার শেনঝেনের লংগাং জেলায় আমদানি করা হিমায়িত খাবার স্ক্রিনিংয়ের সময় মুরগীর ডানাগুলোর একটি ব্যাচ থেকে নেয়া একটি পৃষ্ঠের নমুনায় করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। তবে কর্মকর্তারা ব্র্যান্ডটির নাম উল্লেখ করেননি। 

শেনজেন স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ দ্রুত ওই পণ্যের কাছাকাছি আসা সমস্ত লোকদের পরীক্ষার আওতায় নিয়ে আসে এবং তাদের ফলাফল নেগেটিভ পেয়েছে। স্টক সম্পর্কিত সমস্ত পণ্য সিল বন্ধ রেখে পরীক্ষা করেও করোনাভাইরাস নেগেটিভ পাওয়া গেছে। কর্তৃপক্ষ এখন ওই ব্র্যান্ডের সম্পর্কিত পণ্যগুলো ইতোমধ্যে বিক্রির বিষয়টি সন্ধান করছেন এবং দূষিত মুরগীর ডানাগুলো যে জায়গায় সংরক্ষণ করা হয়েছিল, সেই জায়গাটি জীবাণুমুক্ত করেছে। 

জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব অনুযায়ী ব্রাজিল এখন পর্যন্ত ৩১ লাখেরও বেশি মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের পর বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। 

চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম সিসিটিভি জানিয়েছে, নিয়মিত পরিদর্শনকালে পূর্ব আনহুই প্রদেশের একটি রেস্তোরাঁয় দক্ষিণ আমেরিকার আরেক দেশ ইকুয়েডর থেকে আমদানি করা চিংড়ির প্যাকেজিংয়ে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়ার একদিন পরই দূষিত মুরগীর ডানাগুলোর খবর পাওয়া গেল। 

রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, জুলাইয়ের পর থেকে পূর্ব উপকূলের শানডং প্রদেশ থেকে পশ্চিমে চংকিংয়ের পৌরসভা পর্যন্ত সারাদেশে আমদানি করা সামুদ্রিক খাবারের প্যাকেজিংয়ে করোনাভাইরাস ধরা পড়ার ৭টি ঘটনা ঘটলো।

এই ঘটনাগুলো আমদানিকৃত খাবারের সুরক্ষা নিয়ে উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। দেশটির স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ বারবার জনসাধারণকে আমদানিকৃত মাংস ও সামুদ্রিক খাবার কেনার বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেউ কেউ হিমায়িত খাদ্য আমদানি স্থগিতের আহ্বান জানিয়েছে। 

তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিওএইচও) এবং যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) সহ স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ বলেছে, খাবারের মাধ্যমে ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম। ডব্লিওএইচও বলেছে, খাবার বা খাবারের প্যাকেজিং থেকে কভিড-১৯ এ আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। এখন পর্যন্ত কোনো প্রমাণ নেই যা খাদ্য বা খাদ্য প্যাকেজিংয়ের মাধ্যমে শ্বাসকষ্টজনিত অসুস্থতার সংক্রমণ ঘটায়। করোনাভাইরাসগুলো খাদ্যে বহুগুণে বাড়তে পারে না; তাদের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে একটি প্রাণী বা মানব হোস্টের প্রয়োজন হয়। 

চাইনিজ ইউনিভার্সিটি অব হংকংয়ের শ্বাস-প্রশ্বাস সম্পর্কিত ওষুধ বিশেষজ্ঞ ডেভিড হুই শু-চে বলেছেন, চীনে করোনাভাইরাস পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হওয়া আমদানিকৃত খাদ্য পণ্যগুলো প্যাকেজিংয়ের সময় দূষিত হওয়ার বিষয়টি অনেকটাই নিশ্চিত। খাদ্য সামগ্রী থেকে নেয়া ভাইরাসগুলো যদি ল্যাবে জন্মাতে পারে তবে সেগুলো সংক্রামক। করোনাভাইরাস হিমায়িত তাপমাত্রায় টিকে থাকতে পারে এবং গলে যাওয়ার পরও সেটা সক্রিয় থাকতে পারে। 

রাজধানী বেইজিংয়ের একটি করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব শহরের বৃহত্তম পাইকারি খাদ্য বাজার থেকে উদ্ভূত হওয়ার পর চীনা কর্তৃপক্ষ জুনের পর থেকে আমদানিকৃত মাংস ও সিফুড পণ্যগুলোতে স্ক্রিনিং বাড়িয়েছে। রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমগুলো সেসময় জানিয়েছিল, বাজারে আমদানি করা স্যামন মাছের জন্য ব্যবহৃত একটি চপিং বোর্ডে ভাইরাসটি শনাক্ত করা হয়েছিল। এ ঘটনা রাজধানীর সুপারমার্কেটগুলোর তাক থেকে স্যামন মাছ সরিয়ে দেয়া প্ররোচিত করে।

তবে চীনা সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের কর্মকর্তারা উদ্বেগ নিরসনের চেষ্টা করেছেন। চীনা সিডিসির প্রধান মহামারীবিদ কেন্দ্রীয় শৃঙ্খল পরিদর্শনকে বলেছিলেন, আমরা এমন সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারি না যে বিক্রেতার চপিং বোর্ডে করোনাভাইরাস শনাক্তের মানে হলো স্যামনে সংক্রমণ ছিল। চপিং বোর্ডটি সংক্রামিত বিক্রেতা, গ্রাহক বা ভাইরাস বহনকারী অন্যান্য পণ্য দ্বারাও দূষিত হতে পারে।

সিএনএন অবলম্বনে

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন