নেগেটিভ ফল সেরে ওঠার নিশ্চয়তা দেয় না

নিসরেন এ. আলওয়ান

বৈশ্বিক মহামারীর আমরা এখন অষ্টম মাসে আছি। কিন্তু আমরা এখনো এটার প্রভাব পরিমাপ করছি মৃত্যুর সংখ্যা দিয়ে। হাসপাতালে ভর্তি না হওয়া কেসগুলোকে আমরা নাম দিচ্ছি মৃদু এবং সেগুলো ঠিকঠাক ফলোআপ করা হয় না। সুস্থতা বোঝাতে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়া কিংবা টেস্টে নেগেটিভ আসাকে ধরে নেয়া হয়। যারা সেরে উঠেছে তাদের মাঝে যাদের স্বাস্থ্য খারাপ তারা ব্যাপকভাবে হিসাবের বাইরে থেকে যাচ্ছে। এখন বিশ্বব্যাপী লাখ লাখ জীবিত মানুষ যারা কিনা হাসপাতালে ভর্তি না হয়ে কিংবা পরীক্ষা না করে অসুস্থ হয়ে পড়েছিল, তাদের গণনাই করা হয়নি।

আগে দীর্ঘমেয়াদি লক্ষণসম্পন্ন সুস্থ ব্যক্তিরা, যেমন বুক ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, পেশি ব্যথা, বুক ধড়ফড় এবং ক্লান্তি, যা কিনা তাদের পুনরায় কাজে যাওয়া কিংবা শারীরিক যত্নের কার্যক্রম থেকে বিরত রাখে, সেসব মানুষ এখনো মৃদু কভিড-এর লক্ষণ বয়ে বেড়াচ্ছে। উপসর্গ ট্র্যাক করার জন্য ইউকে স্মার্টফোনের ডাটা যা বলছে তা হলো, দশজনের অন্তত একজন তিন সপ্তাহের বেশি সময় অসুস্থ থাকছে। কয়েক সপ্তাহ ধরে স্থায়ী উপসর্গগুলো এবং কোনো ব্যক্তির স্বাভাবিক জীবনকে ক্ষতিগ্রস্ত করার লক্ষণগুলোকে মৃদু বলা উচিত নয়।

কভিড-১৯ থেকে সেরে ওঠাকে সংজ্ঞায়িত এবং হিসাব করার বিষয়টি হাসপাতাল ত্যাগ কিংবা টেস্টে নেগেটিভ আসা অথবা অ্যান্টিবডিতে পজিটিভ হওয়া থেকে আরো অনেক বেশি পরিশীলিত হওয়া উচিত।

মার্চের শেষ দিকে আমার কভিডের লক্ষণসম্পন্ন জ্বর, কাশি, গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টাইনাল সমস্যা, বুকে পায়ে ব্যথা ছিল। কিন্তু ওই সময় হাসপাতালে ভর্তি না হওয়া রোগীদের পরীক্ষা করা হয়নি। এর পর থেকে আমার লক্ষণ সহকারে বাজে দিন গেছে, তারপর ভালো দিন, এরপর ক্লান্তি নিয়ে আবার খারাপ দিন। এসব ভোগান্তিময় সময় আমাকে আফসোসে ভোগাল ভালো দিনগুলোতে আমি যা করেছি তা নিয়ে। যেমন কিছুদূর হাঁটা। মহামারীতে জনস্বাস্থ্য একাডেমিক হিসেবে যুক্ত থাকা একজন হিসেবে ধরনের অদ্ভুত প্যাটার্নের অসুস্থতা নিয়ে সময়টা আমার জন্য বেশ কঠিনই ছিল।

তবে একটা সান্ত্বনার ব্যাপার হচ্ছে আমি একা ছিলাম না। এমন অনেকেই আছে যারা কিনা তাদের কভিড-পূর্ব স্বাস্থ্য ফিরে পায়নি, এমনকি প্রাথমিক উপসর্গ দেখা যাওয়ার কয়েক মাস পরও। তাদের মাঝে আমার মতো উপসর্গের তারতম্য নিয়ে থাকা লোকজন বেশ সাধারণ ব্যাপার।

যদিও ক্লিনিশিয়ান গবেষকদের একটা ধারণা আছে কভিড নিয়ে মৃত্যুর ব্যাপারে কাদের ঝুঁকি বেশি। কিন্তু আমরা জানি না লক্ষণসম্পন্ন বা লক্ষণ ছাড়া কারা দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য জটিলতায় পড়তে যাচ্ছে। সমাজের মধ্যে নির্দিষ্ট স্তরের সংক্রমণকে মেনে নেয়া হয়, দুর্বলদের রক্ষা করে। তবে এসব অর্থহীন হয়ে পড়বে যখন ফলাফল হিসেবে মৃত্যুর পাশাপাশি আক্রান্তদের স্বাস্থ্যকে বিবেচনায় নেয়া না হবে।

হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়া কভিড রোগীদের নিয়ে গবেষণা শুরু হয়েছে। কিন্তু হাসপাতালে ভর্তি নয় এমন রোগীদের কভিড সম্পর্কিত অসুস্থতার পরিমাপ বৈশিষ্ট্য নির্ধারণে ফাঁক রয়ে গেছে। এটি করতে ব্যর্থ হওয়ার পরিণতিগুলো বেশ তাত্পর্যপূর্ণ। কিছু মানুষ বিশেষ করে তরুণ সুস্বাস্থ্যসম্পন্নরা প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা অনুসরণের প্রয়োজনীয়তা বোধ করে না। কারণ তারা সবচেয়ে খারাপ হিসেবে কয়েকদিন ফ্লুর মতো উপসর্গ আশা করে। অসুস্থ ব্যক্তিরা সেটুকু সহায়তা পায় না, যা তাদের প্রয়োজন এবং মহামারীর মানবিক অর্থনৈতিক যে ক্ষতি তাও সঠিকভাবে হিসাব করা হয় না।

যতদিন পর্যন্ত কভিডকে উপাখ্যান হিসেবে চিহ্নিত করা হবে, ততদিন পর্যন্ত এটা গুরুত্বের সঙ্গে নেয়া হবে না এবং গণসংযোগও এটাকে অবহেলা করবে। আমরাদের এটিকে সঠিক নির্ভুলভাবে হিসাব করা দরকার। আমাদের তাদের বিবেচনায় নিতে হবে যারা কিনা মারাত্মকভাবে অসুস্থ নয়।

সরলভাবেই শুরু করা যাক। অন্যান্য আরো ভাইরাল অসুস্থতা যেমন ফ্লু, সেক্ষেত্রে আমরা সুস্থ হওয়া বলতে বুঝি সংক্রমণ শুরুর পূর্বাবস্থায় ফিরে যাওয়া এবং সুস্থ জীবন যাপন করা। এর অর্থ আমাদের অবশ্যই সব রোগীর অসুস্থতার ব্যাপারে টেস্টের মাধ্যমে নিশ্চিত হতে হবে। কিংবা কভিডের সম্ভাব্য লক্ষণগুলো বের করে নির্দিষ্ট সময়ের ভেতর তারা আগের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে গেছে কিনা তা দেখতে হবে।

নেচার থেকে সংক্ষেপে অনূদিত

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন