জানুয়ারি-মে ২০২০ : পোশাক রফতানিতে বাংলাদেশকে টপকে গেছে ভিয়েতনাম

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) সর্বশেষ প্রতিবেদন বলছে ২০১৯ সালে বিশ্বে পোশাক রফতানিতে বাংলাদেশের অবস্থান ছিলো দ্বিতীয়। এদিকে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প মালিক সংগঠন বিজিএমইএ’র হিসাব বলছে সর্বশেষ পাঁচ মাসে বাংলাদেশকে টপকে গেছে প্রতিদ্বন্দ্বী ভিয়েতনাম। 

খাতসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চলতি ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে মে মাসে বিশ্ব বাজারে বাংলাদেশ ৯৬৮ কোটি ৪৯ লাখ ১০ হাজার ডলারের পোশাক রফতানি করেছে বাংলাদেশ। অন্যদিকে ভিয়েতনাম রফতানি করেছে ১ হাজার ৫০ কোটি ৯১ লাখ ২০ হাজার ডলারের পোশাক। এ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ৫ মাসে পোশাক রফতানিতে বাংলাদেশকে টপকে গেছে ভিয়েতনাম। ৪৬৮ কোটি ডলারের পোশাক রফতানির মাধ্যমে বাংলাদেশের পরেই অবস্থান ভারতের। এরপর যথাক্রমে কম্বোডিয়া, পাকিস্তান ও শ্রীলংকা।

এদিকে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রকাশিত ডব্লিউটিও’র ওয়ার্ল্ড স্ট্যাটিসটিকাল রিভিউ ২০২০ অনুযায়ী, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বাদে একক দেশ হিসেবে তৈরি পোশাক রফতানিতে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। বাংলাদেশের উপরে এক নম্বর অবস্থানে যথারীতি চীন। তবে এখাতে বাংলাদেশকে প্রতিনিয়ত চ্যালেঞ্জ করছে এশিয়ার আরেক দেশ ভিয়েতনাম। দেশটির অবস্থান তিন নম্বরে। 

প্রতিবেদনের প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, গত বছর বাংলাদেশ ৩৪ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রফতানি করেছে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ওই প্রতিবেদন বলছে, ২০১৯ সালে গ্লোবাল ক্লোথিং এক্সপোর্টে বাংলাদেশের বাজার অংশিদারিত্ব (মার্কেট শেয়ার) ছিল ৬ দশমিক ৮ শতাংশ। এর আগের বছর ২০১৮ সালে যেটা ছিল ৬ দশমিক ৪ শতাংশ।

এক বছর ব্যবধানে আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের অংশিদারিত্ব বেড়েছে দশমিক ২ শতাংশ। একক দেশ হিসেবে ২০১৯ সালে তৈরি পোশাকের রফতানি বাজারে শীর্ষ পাঁচ দেশের প্রথমে আছে চীন। তাদের বাজার অংশিদারিত্ব ছিল ৩ দশমিক ৮ শতাংশ। ঠিক এর পরের অবস্থানে বাংলাদেশ ৬ দশমিক ৮ শতাংশ বাজার অংশিদারিত্ব নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। 

তবে বাংলাদেশের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে এশিয়ার আরেক দেশ ভিয়েতনাম। ৬ দশমিক  ২ শতাংশ বাজার অংশিদারিত্ব নিয়ে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে তাদের গতিশীলতা অব্যাহত রেখেছে। এদিকে বৈশ্বিক বাজারে ভারত ৩ দশমিক ৫ শতাংশ এবং তুরস্ক ৩ দশমিক ২ শতাংশের রফতানি যোগান দিয়ে তাদের প্রথম পাঁচের মধ্যে অবস্থান করে নিয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রফতানি প্রবৃদ্ধি এখন যে তৈরি পোশাকের পণ্যগুলোতে রয়েছে, সেখানে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। তাছাড়া অন্যান্য দেশে যেসব পণ্য উৎপাদিত হয়, সে সব পণ্যের সক্ষমতা যদি আমাদেরও তৈরি হয়, তাহলে সেই পণ্যের ক্রেতারাও বাংলাদেশে আসবে বলে ধারণা তাদের। 

সংশিষ্ট সুত্রগুলো বলছে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে পোশাক খাতের অবদান ২ শতাংশ। আর বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, চীন-আমেরিকা বাণিজ্য যুদ্ধের ফলে চীন থেকে অনেক ক্রেতা তাদের বাজার সরিয়ে নিচ্ছে। আর এরই ইতিবাচক সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে বাংলাদেশ ও ভিয়েতনাম। তবে এখাতে ক্রমেই বাংলাদেশের সঙ্গে ভিয়েতনামের প্রতিদ্বন্দিতা তীব্র হয়ে উঠছে।

যেটার আলোকে পরিকল্পনা সাজানো এবং বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করার কথা বলছেন দেশীয় বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, শুধু দেশী বিনিয়োগকারীদের ওপর নির্ভর না করে চীন থেকে যারা বিনিয়োগ তুলে নিতে চান তাদের আকর্ষণ করতে পারলে এ খাতের আরো উন্নয়ন হবে। সেই সঙ্গে ভিয়েতনামকে চ্যালেঞ্জ করাও সম্ভব হবে।

উল্লেখ্য, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে আরও কয়েকটি গভীর সমুদ্রবন্দরের মালিক হচ্ছে বাংলাদেশ। এর ফলে পণ্য রফতানিতে কমে যাবে ‘লিড টাইমের’ পরিমাণ। এতে রফতানির গতি আরও বাড়বে বলেও মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন