লন্ডনের প্রথম ছত্রধর পুরুষ, গঞ্জনা ও হত্যার হুমকিও পেয়েছিলেন তিনি!

বণিক বার্তা অনলাইন

চীন, ভারত, গ্রিস ও মিশরে বহু প্রাচীনকাল থেকে ছাতা বা ছাতার মতো জিনিসের ব্যবহারের চল থাকলেও ইউরোপে এটির প্রচলন হয়েছে বেশ পরে। যদিও তারা একসময় বাঁশ ও পাতা দিয়ে তৈরি মাথালের মতো একটা জিনিস ব্যবহার করতেন। তবে সেটি ছিল শুধু নারীদের জন্য। ১৭০৫ সাল থেকে লন্ডনে নারীরা ছাতা ব্যবহার করতেন। পুরুষদের এমন মাথাল ব্যবহার করা ছিল লজ্জার, পৌরুষের জন্য অপমানজনক।

লন্ডনের এই প্রথা ভাঙেন জোনাস হ্যানওয়ে। তিনিই ইংল্যান্ডের প্রথম পুরুষ ‘‌ছত্রধর’। অবশ্য ইংল্যান্ডের আগে ফ্রান্সে ছাতার ব্যবহার শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু যেহেতু ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের মধ্যে রাজনৈতিক ও সংস্কৃতিক বিরোধ মজ্জাগত সে কারনে লন্ডনের মানুষ ফরাসিদের ছাতার ব্যবহারকে ছোটলোকদের আচার বলে মনে করতেন।

ব্যবসার কাছে জোনাস বহুবার ফ্রান্সে গেছেন। বলতে গেলে ফ্রান্স থেকেই তিনি ইংল্যান্ডের রাস্তায় ছাতা মাথায় বেরিয়ে পড়েন। সেই দৃশ্য মেনে নিতে পারেনি পথচারীরা। তাকে টিটকারি করতো সবাই। নানাভাবে হয়রানি করা হতো। 

সেই সময়ে ইংল্যান্ডের রাস্তায় চলতো ছাদবিশিষ্ট টমটম। বৃষ্টি বা তুষারপাতের সময় মানুষ এই ছাদবিশিষ্ট ঘোড়ার গাড়িতে চলাচল করতো। ফলে এটি মোটামুটি পেশা হিসেবে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। কিন্তু জোনাসের ছাতার ব্যবহার দেখে এই টমটমওলাদের ব্যবসা লাটে ওঠার শঙ্কায় পড়লেন। শোনা যায়, তাই লন্ডনের রাস্তায় জোনাসের ওপর চড়াও হয়েছিলেন ঘোড়ার গাড়ির ব্যবসাদাররা। একদিন তার দিকে ঢিল ছুড়ে মারে ঘোড়ার গাড়ির চালক। এছাড়া তিন দিক থেকে তিনটি গাড়ি দিয়ে চাপা দিয়ে হত্যার চেষ্টাও হয়েছিল। 

কিন্তু জোনাস তাতেও ছাড়া ছাড়েননি। তিনি পণ করেছিলেন এই ছাতা কতো উপকারী তা মানুষকে বুঝিয়েই ছাড়বেন। শুধু একটা রক্ষণশীল মনোভাব থেকে এই জিনিস ব্রাত্য করে রাখা ঠিক হচ্ছে না।

ফলে বলতে গেলে, জোনাসই প্রথম আধুনিক ছাতার ব্যবহার শুরু করেন এবং জনপ্রিয় করেন। 

জোনাস হ্যানওয়ের বাবা ছিলেন জাহাজের জোগালদার। তার জন্ম ১৭১২ সালের ১২ আগস্ট ইংল্যান্ডের দক্ষিণ উপকূলের পোর্টসমাউথে। অল্প বয়সেই বাবাকে হারান। এরপর তার পরিবার লন্ডনে চলে আসে। ১৭২৯ সালে লিসবনে এক বণিকের শিক্ষানবীশ হোন। ১৭৪৩ সালে তিনি লন্ডনে ফিরে ব্যবসা বাণিজ্য শুরু করেন। ক্রমেই দক্ষণ ও ধনী বণিকে পরিণত হন। ব্যবসার কাজে প্রায় তিনি রাশিয়া ও পারসিয়াতে থাকতেন।  ১৭৪৩ সালের ১০ সেপ্টেম্বর সেন্ট পিটার্সবার্গ ছেড়ে দীর্ঘ ভ্রমণের পর ১৮ ডিসেম্বর তিনি পারস্যের আস্তারাবাদে উপস্থিত হন। সেখানে মোহাম্মদ হাসান বেগ তার মালসামান জব্দ করে। বহুকষ্টে তিনি নাদির শাহর কাছে যান। তার সহায়তায় ৮৫ শতাংশ সম্পদ ফিরে পান।

রাশিয়া থেকে ফেরার পথটা ছিল খুব কষ্টের। দীর্ঘ সমুদ্রযাত্রায় একাধিকবার জলদস্যুর কবলে পড়েছেন, রোগে ভুগেছেন। সেসব গল্প তিনি তার ভ্রমণকাহিনীমূলক বইতে লিখেছেন। সেটি প্রকাশ পায় ১৭৫৩ সালে। এর পরপরই তিনি বণিক জীবনের অবসান ঘটিয়ে মানবসেবায় নিজেকে উৎসর্গ করেন। তার হাতেই তৈরি হয় হাসপাতাল। লন্ডনের প্রশাসনিক ব্যবস্থারও গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার করেন তিনি।

তিনি মারা যান ১৭৮৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর। তাকে সমাহিত করা হয়েছে হ্যানওয়েলের সেন্ট মেরি চার্চের ভূগর্ভস্থ সমাধিক্ষেত্রে। ১৭৮৬ সালে ওয়েস্টমিনিস্টার অ্যাবিতে তার একটি ভাস্কর্য নির্মাণ করেন জন ফ্রান্সিস মুর।

জোনাস বেশ কিছু সংস্কারমূলক কাজ করেছিলেন। লন্ডনের শিশু চিমনি পরিষ্কারককের অধিকারের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। যদিও কারাবন্দিদের নির্জনবাস এবং অব্রিটিশ  ইহুদিতের ব্রিটেনের নাগরিকত্ব দেয়ার বিপক্ষে ছিলেন।

তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন