পানি নামার সঙ্গে তীব্র হচ্ছে বরিশালে পাঁচ নদীর ভাঙন

বণিক বার্তা প্রতিনিধি বরিশাল

বরিশালের বুক চিরে বয়ে গেছে মেঘনা, কীর্তনখোলা, আড়িয়াল খাঁ, সুগন্ধা, সন্ধ্যাসহ অসংখ্য নদ-নদী। তাই বছরজুড়ে ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটে তীরবর্তী মানুষের। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে আতঙ্ক বেড়ে যায় কয়েক গুণ। টানা বৃষ্টির কারণে গত মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে জেলার সব নদ-নদীর পানি বাড়তে থাকে। এক সপ্তাহ ধরে নামতে শুরু করেছে পানি। পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে তীব্র হচ্ছে ভাঙনও। মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে ভাঙনঝুঁকিতে রয়েছে পাঁচ নদীতীরবর্তী হাজার ৩০০ মিটার এলাকা। ভাঙনরোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া না হলে অসংখ্য মানুষ ভিটামাটি হারিয়ে নিঃস্ব হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্য অনুযায়ী, সম্প্রতি বৃষ্টি এবং পানিবৃদ্ধির প্রভাবে নদীর ভাঙন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। এরই মধ্যে জেলার ছয়টি উপজেলার ১২টি পয়েন্টে হাজার ৩০০ মিটারজুড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি পয়েন্টে শুরু হয়েছে জরুরি প্রটেকশনের কাজও।

পাউবো বলছে, বর্তমানে যেসব পয়েন্ট ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে সেসব এলাকায় ভাঙনরোধে কয়েকটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। তবে সেগুলো অনুমোদন না হওয়ায় জরুরি প্রটেকশনের নামে কোটি টাকা গচ্চা দিতে হচ্ছে সরকারকে।

বরিশাল পাউবো সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি উত্তরবঙ্গে বন্যার পানি নামার পর বরিশালের নদ-নদীতে পানি বেড়ে যায়। তাছাড়া চলতি বর্ষা মৌসুমে বরিশালের অধিকাংশ নদীই উত্তাল হয়ে ওঠে। তার ওপর কয়েক দিন ধরে পূর্ণিমার প্রভাব উজানের চাপে কীর্তনখোলা, কালাবদর, সন্ধ্যা, নয়াভাঙ্গলি, তেঁতুলিয়া এবং মেঘনা-সুরমা নদীর পানি বিপত্সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে যায় ভাঙনের তীব্রতা।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী জাবেদ ইকবাল বলেন, পানি নামার পর জেলার অধিকাংশ নদ-নদীতে ভাঙন তীব্র হচ্ছে। জেলার ছয়টি উপজেলাসংলগ্ন নদীর ১২টি পয়েন্টের হাজার ৩০০ মিটারজুড়ে ভাঙনের ঝুঁকি রয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলাধীন কীর্তনখোলা নদীর চরকাউয়া এলাকায় ১৫০ মিটার, চরমোনাই দরবারসংলগ্ন ৭০ মিটার, সদর উপজেলার সাহেবের হাট কড়াই তলানদীর রাজারহাট পয়েন্টে ২১৫ মিটার, হিজলা উপজেলার বদরটুনি স্কুল পয়েন্টে ৫০ মিটার, একই উপজেলার দক্ষিণ বাউশিয়া পয়েন্টে ১০০ মিটার, মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার চরবগি স্কুল পয়েন্টে ১০০ মিটার, বাবুগঞ্জ উপজেলার চোট মীরগঞ্জ বাজারসংলগ্ন ১০০ মিটার, চাঁদপাশা সিকদারবাড়ী পয়েন্টে ৫০ মিটার, মুলাদী উপজেলার নাজিরপুর লঞ্চঘাট পুলিশ ফাঁড়িসংলগ্ন ৭০ মিটার বাকেরগঞ্জ উপজেলাধীন তেঁতুলিয়া নদীর দুর্গাপুর পয়েন্টে ২০০ মিটারজুড়ে ভাঙন শুরু হয়েছে।

তিনি বলেন, এরই মধ্যে হিজলার বদরটুনি স্কুল, দক্ষিণ বাউশিয়া, মেহেন্দীগঞ্জের চরবগি স্কুল বাবুগঞ্জ উপজেলার চাঁদপাশা সিকদারবাড়ী পয়েন্টে নদীভাঙন রোধে জিও ব্যাগ ফেলে জরুরি ভিত্তিতে আপত্কালীন প্রতিরোধমূলক কাজ চলমান রয়েছে। এতে প্রায় কোটি টাকার মতো ব্যয় হচ্ছে। তবে সব পয়েন্টের ভাঙনরোধে কাজ শুরু করতে জরুরি ভিত্তিতে আড়াই-তিন কোটি টাকা বরাদ্দের প্রয়োজন।

স্থানীয় একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, কীর্তনখোলা নদীতীরবর্তী চরকাউয়া এলাকার ভাঙনরোধে ৩৪৩ কোটি টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতিমূলক প্রকল্প বর্তমানে মন্ত্রণালয়ে আটকে আছে। এছাড়া চরমোনাই লামছড়ির ভাঙনরোধে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় দুটি নদীর মোহনায় ড্রেজিংয়ের পাশাপাশি চর কেটে নদী শাসন করা হবে। ওই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে লামছড়ি, চরবাড়িয়া এবং চরমোনাই ভাঙন থেকে রক্ষা পাবে বলে আশাবাদী পাউবো।

উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. জাবেদ ইকবাল বলেন, ভাঙনরোধে গৃহীত প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে বরিশাল অঞ্চলকে নদীভাঙনের থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে। এজন্য বরিশাল সদর আসনের সংসদ সদস্য ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম নিজেই জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন