বিশ্বে সবার আগে রাশিয়া গত মঙ্গলবার নভেল করোনাভাইরাসের টিকা আবিষ্কারের ঘোষণা দেয়। প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন নিজেই এ খবর দিয়ে জানান, তার মেয়ে এই টিকা নিয়েছেন। যদিও রাশিয়ার এ টিকা নিরাপদ কিনা কিংবা এর কার্যকারিতা কতটুকু, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ড. অ্যান্থনি ফাউসি। খবর নিউইয়র্ক টাইমস।
ফাউসি বলেন, ‘আমি আশা করব, রাশিয়ানরা সত্যিই এবং নিশ্চিতভাবে প্রমাণ করেছে যে টিকাটি নিরাপদ ও কার্যকর। আমি আসলেই সংশয়ে রয়েছি যে তারা এটা করতে পেরেছে কিনা।’
দ্য ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসের পরিচালক ফাউসি বলেন, একটি টিকা পাওয়া আর প্রমাণ করা যে এটি নিরাপদ ও কার্যকর—দুটি আসলে ভিন্ন বিষয়। তার কথায়, ‘আমাদের অর্ধডজন কিংবা তারও বেশি টিকা রয়েছে। আমরা যদি অনেক মানুষের ক্ষতি করতে চাই কিংবা যা কাজ করে না তা তাদের দিতে চাই, তবে আমরা এটি শুরু করতে পারি। এমনকি আপনারা জানেন, চাইলে আগামী সপ্তাহ থেকেই তা হতে পারে। কিন্তু এটা কাজ সম্পন্ন করার উপায় হতে পারে না।’
ফাউসি জানান, রাশিয়া কিংবা চীনের মতো টিকা নিয়ে সাফল্যের ঘোষণা দেয়ার আগে তাদের অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্রে বলবৎ নির্দিষ্ট নিরাপত্তা আর কার্যকারিতার মান অনুসরণের বিষয়টি মনে রাখতে হবে। এছাড়া চূড়ান্ত ধাপে মানব পরীক্ষা নিয়ে এখনো কোনো ধরনের তথ্যও প্রকাশ করেনি রাশিয়ানরা।
দ্য ইউএস ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) বলছে, কোনো টিকার কার্যকারিতা ৫০ শতাংশের কম হলে তারা সেটির অনুমোদন দেবে না।
মঙ্গলবার এক ই-মেইল বার্তায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানায়, টিকার ট্রায়ালের তথ্যাদি খতিয়ে দেখতে তারা রাশিয়ান বিজ্ঞানী ও কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্যমন্ত্রী অ্যালেক্স অ্যাজার বলেছেন, বিশ্বের ‘প্রথম টিকা’ তৈরি নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে কোনো ধরনের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লিপ্ত নন তারা। তার কথায়, ‘যুক্তরাষ্ট্রে যেকোনো টিকাই যেন এফডিএর মান পূরণ করে নিরাপদ ও কার্যকর হয় সেটি চাইব আমরা।’
টিকা তৈরির মিশন ‘অপারেশন ওয়ার্প স্পিড’কে অ্যাপোলো কর্তৃক চাঁদে মানুষ অবতরণের মিশনের সঙ্গে তুলনা করে অ্যাজার বলেন, বছর শেষে নিরাপদ আর কার্যকর টিকা পেতে আশাবাদী তারা। তিনি বলেন, ‘নজিরবিহীন ও ঐতিহাসিক গতিতে চলছে কর্মযজ্ঞ, অতীতে কখনই ধাপ-১ থেকে ধাপ-৩ এতটা কম সময়ে হয়নি, যতটা কম সময়ে করছে মডার্না। যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গীকার হলো, মানুষকে যে টিকা দেয়া হবে তা যেন নিরাপদ আর কার্যকর হয়।’
অপারেশন ওয়ার্প স্পিডের অধীনে যুক্তরাষ্ট্রে ছয়টি টিকা তৈরির কাজ এগিয়ে চলেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে মডার্না। ১০ কোটি ডোজ পেতে মডার্নার সঙ্গে ১৫২ কোটি ডলারের চুক্তি সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার।