খুলনা ও গাজীপুরের গণপরিবহন

স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই ভাড়া আদায় দ্বিগুণ

বণিক বার্তা প্রতিনিধি খুলনা ও গাজীপুর

নভেল করোনাভাইরাসের বিস্তাররোধে দেশে সীমিত পরিসরে গণপরিবহন চালু হয় জুন। গণপরিবহন চলাচলের ক্ষেত্রে আরোপ করা হয় কিছু বিধিনিষেধ। প্রতিটি গণপরিবহনে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচলের নির্দেশ দেয় সরকার। সেক্ষেত্রে ৬০ শতাংশ ভাড়াও বাড়ানো হয়। কিন্তু পরিবহন কর্তৃপক্ষ ৬০ শতাংশের জায়গায় দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করলেও নিশ্চিত করছে না স্বাস্থ্যবিধি। অনেক ক্ষেত্রে গাড়িভর্তি যাত্রী নিয়েও চলাচল করতে দেখা গেছে। এতে নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বণিক বার্তার খুলনা প্রতিনিধি জানান, জেলায় প্রথমে কয়েক দিন সরকারি নির্দেশনা প্রতিপালন করতে দেখা গেলেও ধীরে ধীরে সেই আগের অবস্থানে চলে গেছে পরিবহন কর্তৃপক্ষ।

খুলনা-সাতক্ষীরা, সাতক্ষীরা-কালীগঞ্জ, খুলনা বাগেরহাট, খুলনা থেকে যশোর কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ-মুন্সীগঞ্জ রুটের একাধিক বাস ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ বাসের প্রতিটি সিটে যাত্রী ওঠানো হয়েছে। আবার ভাড়া নেয়া হয় দ্বিগুণ। নিয়ে বাসের স্টাফ যাত্রীদের কথাকাটাকাটি করতে দেখা যায়।

সাতক্ষীরাগামী বাসের যাত্রী মৌসুমি ইসলাম বলেন, দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে বাধ্য হয়ে গাদাগাদি করে গাড়িতে উঠতে হচ্ছে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধির কোনো তোয়াক্কা নেই। সিট ছাড়া আগের মতো যাত্রী দাঁড়িয়েও যায়।

খুলনা জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন সভাপতি কাজী নুরুল ইসলাম বেবী বলেন, বিষয়টি ইউনিয়ন থেকে কঠোরভাবে নজরদারি করা হচ্ছে। বিধি না মানার কারণে এরই মধ্যে তিনটি গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। 

ডুমুরিয়া উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সঞ্জীব দাশ বলেন, বিদ্যমান করোনা পরিস্থিতিতে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার জন্য দুই সিটে একজন যাত্রী বসবেন, শর্তে সরকার গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি দেয়। পাশাপাশি বাস মালিকদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ভাড়াও বাড়ানো হয়। কিন্তু সম্প্রতি কিছু কিছু বাস অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের পাশাপাশি গাড়ি ভর্তি করে যাত্রী নিচ্ছে। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে তাদের জরিমানাও করা হচ্ছে। তার পরও তাদের থামানো যাচ্ছে না।

একই অবস্থা গাজীপুরেও। জেলায় আঞ্চলিক দূরপাল্লার পরিবহনগুলোয় অতিরিক্ত ভাড়া নেয়া হলেও মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। নিয়ে যাত্রী স্টাফদের মধ্যে প্রায়ই অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে।

গাজীপুরের সিটি করপোরেশন এলাকাসহ জেলাজুড়ে চক্রাকারভাবে চলাচল করে তিন শতাধিক মিনিবাস। তাকওয়া সার্ভিসের ব্যানারে পরিবহনগুলো সরকারি নির্দেশনায় ৬০ ভাগ ভাড়া বৃদ্ধি করে আদায় করছে। কিন্তু স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই। এছাড়া ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ভালুকা থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত চলাচল করে শতাধিক গণপরিবহন। এসব পরিবহনেও স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই। বিভিন্ন গন্তব্য থেকে কাপাসিয়া হয়ে ঢাকা পর্যন্ত চলাচলকারী পরিবহনের মধ্যে ভাওয়াল, সম্রাট, অনন্যা, বন্যা জলসিঁড়ি। গাজীপুর থেকে ঢাকা পর্যন্ত চলাচলকারী বলাকা, গাজীপুর পরিবহন, ভিআইপি, বসুমতি, আজমেরী পরিবহনেও স্বাস্থ্যবিধি না মেনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। একই হাল কালিয়াকৈর শ্রীপুর থেকে চলাচলকারী প্রভাতী বনশ্রী পরিবহনেরও।

আলম এশিয়ার যাত্রী কফিল উদ্দিন বলেন, স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই প্রত্যেক যাত্রীর কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। প্রতিবাদ করলেই নানাভাবে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।

গাজীপুর পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সুলতান উদ্দিন সরকার বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণরোধে আমরা প্রথম থেকেই সচেষ্ট ছিলাম। কিন্তু তার পরও শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা যায়নি।

অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়ে তিনি বলেন, করোনায় অনেক বড় ক্ষতি হয়েছে পরিবহন সেক্টরে। তার পরও সরকার নির্ধারিত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।

গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এসএম তরিকুল ইসলাম বলেন, বিষয়ে অভিযোগ পাওয়ার পর ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এছাড়া পরিবহন মালিকদের ডেকে সতর্ক করা হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন