এসসিবি গ্লোবাল রিসার্চ ব্রিফিং-২০২০

দ্রুতগতিতে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার হবে বাংলাদেশে

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশের অর্থনীতি বৈশ্বিক মহামারী কভিড-১৯-এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছে চলতি বছরের মার্চের শেষ থেকে মে মাসের শেষ পর্যন্ত সময়ে। ওই সময় রফতানি রেমিট্যান্স কমে যায়। তবে সম্প্রতি রফতানিতে গতি ফিরতে শুরু করেছে। অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানো নিয়ে ইতিবাচক মানসিকতা দেখা যাচ্ছে ব্যবসায়ীদের মধ্যে। অবস্থায় বাংলাদেশে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার দ্রুত গতিতে হবে বলে মনে করছেন স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের (এসসিবি) গবেষকরা।

গতকাল অনুষ্ঠিত স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক গ্লোবাল রিসার্চ ব্রিফিং বাংলাদেশ-২০২০- বলা হয়েছে, অন্য অনেক দেশের তুলনায় দ্রুতগতিতে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার হবে বাংলাদেশে। বছরের বাকি সময়ে অর্থনৈতিক কার্যক্রম আরো ত্বরান্বিত হবে।

গ্লোবাল রিসার্চ ব্রিফিং সংক্রান্ত এক ভার্চুয়াল মিডিয়া রাউন্ড টেবিল গতকাল আয়োজন করে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড। ব্যাংকটির হেড অব করপোরেট অ্যাফেয়ার্স বিটপী দাস চৌধুরীর সঞ্চালনায় আয়োজনে অংশ নেন স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক বাংলাদেশের ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং হেড অব ফিন্যান্সিয়াল মার্কেটস মুহিত রহমান, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের আসিয়ান দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক প্রধান অর্থনীতিবিদ এডওয়ার্ড লি, দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতিবিদ সৌরভ আনন্দ, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের এএসএ এফএক্স রিসার্চের প্রধান দিব্য দেবেশ।

ব্রিফিংয়ে বলা হয়, কভিড-১৯ মোকাবেলায় মার্চের শেষদিকে সাধারণ ছুটি শুরু হয় বাংলাদেশে। রফতানি পণ্যের ক্রেতাদেশগুলোয় অনিশ্চয়তা ক্রয়াদেশ বাতিলের কারণে এপ্রিল থেকে মে সময়ে রফতানি কমে যায়। এদিকে অভ্যন্তরীণ পর্যায়ে দোকানপাট বন্ধ থাকায় বেচাকেনাও ছিল বন্ধ। তবে সাধারণ ছুটি শেষ হওয়ার পর এখন বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা পুনরায় ঘুরতে শুরু করেছে। সচল হয়েছে সরবরাহ চেইন। মানুষও ধীরে ধীরে আস্থা ফিরে পেতে শুরু করেছে। অগ্রসর হতে শুরু করেছে অর্থনীতি। ব্রিফিংয়ে করোনার প্রভাব মোকাবেলায় সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের প্রশংসাও করেন স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের প্রতিনিধিরা।

মুদ্রানীতি রাজস্ব নীতি নিয়ে কাজ করার তাগিদ জানিয়ে ব্রিফিংয়ে বলা হয়, রাজস্ব বৃদ্ধিতে জোর দেয়া দরকার। মহামারী মোকাবেলায় প্রচুর টাকা প্রয়োজন। বাংলাদেশকে এখন বিভিন্ন দেশ বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ঋণ নিতে হতে পারে জানিয়ে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের প্রতিনিধিরা বলছেন, অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ অনেক কম, যা বাংলাদেশের জন্য স্বস্তির। তবে বৈশ্বিক পরিস্থিতি, বিশেষ করে ইউরোপ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরিস্থিতির ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে বলে মনে করে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড। বহুজাতিক ব্যাংকটির প্রতিনিধিদের মতে, সামগ্রিকভাবে বিশ্ব অর্থনীতি সবচেয়ে খারাপ অবস্থা কাটিয়ে উঠেছে। তার পরও অনিশ্চয়তা থেকে যায়।

স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতিবিদ সৌরভ আনন্দ বলেন, যদিও কভিড-১৯-এর কারণে এপ্রিল থেকে জুন সময়কালে বাংলাদেশের অর্থনীতি এক বিরাট চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিল। কিন্তু জুনে কিছু জায়গায় অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে এবং অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।

বাংলাদেশে কীভাবে দ্রুতগতিতে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার হবে সে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা এখনই সুনির্দিষ্টভাবে বলা যাবে না। তবে ক্রেতা-বিক্রেতার আত্মবিশ্বাস পাওয়া ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

অনুষ্ঠানে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের আসিয়ান দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক প্রধান অর্থনীতিবিদ এডওয়ার্ড লি বলেন, বিশ্বব্যাপী ঐতিহাসিক মন্দার কারণে আসিয়ান দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে ২০২০ সালে দুটি দেশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারবে, যার মধ্যে বাংলাদেশ একটি।

ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশ বিভিন্ন অর্থনৈতিক সূচকে ভালো অবস্থানে আছে জানিয়ে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের এএসএ এফএক্স রিসার্চের প্রধান দিব্য দেবেশ বলেন, রেমিট্যান্স বৃদ্ধির কারণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়েছে। ফলে আমদানির ব্যয় মেটানো নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ নীতি সুদ হার শূন্যের কাছাকাছি নামিয়ে আনায় আন্তর্জাতিক বাজারে ডলার দুর্বল হচ্ছে। দেশের বাজারে ডলারের মান স্থিতিশীল থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন