সপ্তাহ দুয়েক ধরেই ইতিবাচক প্রবণতা দেখা যাচ্ছে দেশের পুঁজিবাজারে। গত ১৩ কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্সে সাড়ে ৫০০ পয়েন্ট যোগ হয়েছে। এ সময়ে লেনদেনের পরিমাণ বেড়ে হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। পুঁজিবাজারের এ ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় উৎপাদন বন্ধ ও লোকসানে থাকা বেশকিছু মন্দ কোম্পানির শেয়ারদর বাড়ছে। স্বল্পমূলধনি এসব কোম্পানির শেয়ার সংখ্যা কম থাকায় এগুলো নিয়ে অশুভ চক্র সহজেই কারসাজি করতে পারে। বিনিয়োগকারীদের অশুভ চক্র ও মন্দ কোম্পানির শেয়ারের প্রলোভন থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বিশ্লেষকরা।
গতকাল ডিএসইতে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে থাকা ৫৩টি কোম্পানির মধ্যে ৪৪টির শেয়ারদর বেড়েছে। এর মধ্যে এমারেল্ড অয়েল, বিডি ওয়েল্ডিং, ঢাকা ডায়িং, ফ্যামিলিটেক্স, ইউনাইটেড এয়ার, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক, সিএনএ টেক্সটাইলে শেয়ারদর ১০ থেকে ৫ শতাংশের মতো বেড়েছে। শুধু গতকালই নয়, কয়েক দিন ধরেই এসব মন্দ কোম্পানির শেয়ারদর ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। অথচ এ কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর বাড়ার মতো এমন কোনো দৃশ্যমান কারণ নেই। এমনকি স্টক এক্সচেঞ্জেও এ সময়ের মধ্যে কোম্পানিগুলোর কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশিত হয়নি।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) প্রেসিডেন্ট মো. ছায়েদুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, সূচকে যখন ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা থাকে তখন ভালো-মন্দ সব ধরনের কোম্পানির শেয়ার দরই বাড়তে থাকে। একশ্রেণীর বিনিয়োগকারী না বুঝে সস্তায় মন্দ কোম্পানির শেয়ার কিনে ক্ষতিগ্রস্ত হন। শেয়ার সংখ্যা কম থাকায় মন্দ কোম্পানি নিয়ে অশুভ চক্র সহজেই কারসাজি করতে পারে। এক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের সচেতন হতে হবে। কোনোভাবেই অশুভ চক্রের ফাঁদে পা দেয়া যাবে না। পাশাপাশি এসব কোম্পানির শেয়ারদর কেন বাড়ছে, সেদিকে নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকেও নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করছেন তিনি।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, গতকাল ডিএসইএক্স ১০০ পয়েন্ট বেড়ে ৪ হাজার ৬৩৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে, যা আগের দিন ছিল ৪ হাজার ৫৩৩ পয়েন্টে। ডিএসইর শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস গতকাল ২৪ পয়েন্ট বেড়ে দিন শেষে ১ হাজার ৮৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে, যা আগের দিন ছিল ১ হাজার ৬৪ পয়েন্টে। ব্লু-চিপ সূচক ডিএস-৩০ দিনের ব্যবধানে ৩৭ পয়েন্ট বেড়ে গতকাল ১ হাজার ৫৮১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে, আগের দিন শেষে যা ছিল ১ হাজার ৫৪৪ পয়েন্টে।
গতকাল ডিএসইতে মোট ১ হাজার ১২০ কোটি ৩৮ লাখ টাকার সিকিউরিটিজ হাতবদল হয়েছে, আগের কার্যদিবসে যা ছিল ১ হাজার ৪৮ কোটি ৮ লাখ টাকা। এদিন ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩৫৫টি কোম্পানি, মিউচুয়াল ফান্ড ও করপোরেট বন্ডের মধ্যে দিন শেষে দর বেড়েছে ১৯৯টির, কমেছে ১১৫টির ও অপরিবর্তিত ছিল ৪১টি সিকিউরিটিজের বাজার দর।
খাতভিত্তিক লেনদেনচিত্রে দেখা যায়, গতকাল ডিএসইর মোট লেনদেনের প্রায় ১৮ শতাংশ দখলে নিয়ে শীর্ষে অবস্থান করছে ওষুধ খাত। ১৩ শতাংশ লেনদেনের ভিত্তিতে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল প্রকৌশল খাত। তৃতীয় সর্বোচ্চ ১২ শতাংশ দখলে নিয়েছে ব্যাংক খাত। সাধারণ বীমা খাতের দখলে ছিল প্রায় ১০ শতাংশ।
গতকাল ডিএসইতে লেনদেনের ভিত্তিতে শীর্ষ সিকিউরিটিজ ছিল বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস, ব্র্যাক ব্যাংক, বেক্সিমকো লিমিটেড, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানি লিমিটেড (বিএটিবিসি), নাহী অ্যালুমিনিয়াম, গ্রামীণফোন, ফু-ওয়াং ফুড, লাফার্জহোলসিম সিমেন্ট ও নিটল ইন্স্যুরেন্স।
দর বাড়ার শীর্ষ কোম্পানির তালিকায় ছিল স্টাইল ক্র্যাফট, নাহী অ্যালুমিনিয়াম, পিপলস ইন্স্যুরেন্স, ইসলামী ব্যাংক, আফতাব অটো, ইফাদ অটোস, বিএসআরএম লিমিটেড, বেক্সিমকো লিমিটেড, লংকাবাংলা ফিন্যান্স ও অলিম্পিক অ্যাকসেসরিজ।
অন্যদিকে গতকাল এক্সচেঞ্জটিতে দরপতনের শীর্ষে থাকা কোম্পানিগুলো হচ্ছে সাভার রিফ্র্যাক্টরীজ, বিআইএফসি, রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্স, এনসিসি ব্যাংক, এসইএমএল আইবিবিএল শরীয়াহ ফান্ড, এসইএমএল লেকচার ইকুইটি ম্যানেজমেন্ট ফান্ড, সিএপিএম বিডিবিএল মিউচুয়াল ফান্ড ওয়ান, পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্স, প্রাইম ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স ও রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স।
দেশের আরেক পুঁজিবাজার সিএসইতে গতকাল সিএসসিএক্স সূচক দিনের ব্যবধানে ১৬১ পয়েন্ট বেড়ে ৭ হাজার ৯৬২ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আগের কার্যদিবসে সূচকটির অবস্থান ছিল ৭ হাজার ৮০১ পয়েন্টে। এদিন এক্সচেঞ্জটিতে লেনদেন হওয়া ২৮৪টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৬৪টির, কমেছে ৯০টির আর অপরিবর্তিত ছিল ৩০টির বাজার দর। গতকাল সিএসইতে মোট ৩৫ কোটি ১০ লাখ টাকার সিকিউরিটিজ হাতবদল হয়েছে, আগের কার্যদিবসে যা ছিল ৫৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা।
