১ হাজার ৯৩০ ডলারের নিচে নামল স্বর্ণের আউন্স

বণিক বার্তা ডেস্ক

ইতিহাসের সর্বোচ্চ অবস্থান থেকে কমতে শুরু করেছে স্বর্ণের দাম। ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ কার্যদিবসে কমতে কমতে মূল্যবান ধাতুটির দাম আউন্সপ্রতি হাজার ৯৩০ ডলারের নিচে নেমে এসেছে। এর আগে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম হাজার ডলারের মাইলফলক ছাড়িয়ে গিয়েছিল। খবর মাইনিংডটকম মার্কেট ওয়াচ।

যুক্তরাষ্ট্রের স্পট মার্কেটে মঙ্গলবার প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম দাঁড়ায় হাজার ৯৪৭ ডলার ৪০ সেন্টে, যা আগের দিনের তুলনায় দশমিক শতাংশ কম। একদিনে মূল্যবান ধাতুটির দাম আউন্সপ্রতি ৯২ ডলার ৩০ সেন্টে কমেছে।

নিকট অতীতে একদিনে এটাই স্বর্ণের দরপতনের সর্বোচ্চ রেকর্ড। মূল্যহ্রাসের ধারাবাহিকতায় গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের স্পট মার্কেটে স্বর্ণের দাম আরো কমে হাজার ৯২৯ ডলার সেন্টে নেমে এসেছে।

চলতি বছরটা স্বর্ণের বাজারে রেকর্ডের বছর। বছরের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের স্পট মার্কেটে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ছিল হাজার ৫৭৫ ডলারের নিচে। তবে নভেল করোনাভাইরাসের মহামারী স্বর্ণের চাহিদা বাড়িয়ে দিলে দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে শুরু করে। মার্চে যুক্তরাষ্ট্রের স্পট মার্কেটে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম হাজার ৬০০ ডলার ছাড়িয়ে যায়। এপ্রিলে তা আরো বেড়ে আইন্সপ্রতি হাজার ৭০০ ডলার ছাড়ায়।

ওই সময় বিশ্লেষকরা বলেছিলেন, স্বর্ণের আউন্স হাজার ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে। সম্ভাবনা সত্য হয়েছে।  আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের স্পট মার্কেটে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম উঠেছে হাজার ৬৭ ডলার ২০ সেন্টে। ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিল (ডব্লিউজিসি) বলছে, ইতিহাসে এটাই স্বর্ণের সবচেয়ে বেশি দাম। সেই হিসাবে এক দশকে মূল্যবান ধাতুটির দাম বেড়েছে আউন্সপ্রতি প্রায় ৮৬০ ডলার।

সাধারণত বিশ্ব অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা কিংবা ভূরাজনৈতিক উত্তেজনাদুই কারণে স্বর্ণের বাজার চাঙ্গা হয়। বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে দুটো উপাদান বিদ্যমান। করোনা মহামারীতে চরম অনিশ্চিত অবস্থার মধ্য দিয়ে সময় পার করছে বিশ্ব অর্থনীতি। আশঙ্কা করা হচ্ছে ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ অথনৈতিক মন্দার। অন্যদিকে চীন-ভারত, উত্তর-দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যকার সীমান্ত উত্তেজনা, চীন-মার্কিন বাণিজ্যিক বিরোধ আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের রেকর্ড মূল্যবৃদ্ধিতে প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে।

বিষয়ে বাণিজ্যিক তথ্য বিশ্লেষকারী প্রতিষ্ঠান স্টোনএক্সের বিশ্লেষক রোনা কর্নওয়েল বলেন, করোনা মহামারীর মধ্যে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ভূরাজনৈতিক বিরোধ স্বর্ণের বাজার চাঙ্গা করেছে। ইতিহাসের সর্বোচ্চ অবস্থানে উঠেছে মূল্যবান ধাতুটির দাম। তবে গত দুদিনে স্বর্ণের দরপতন সাময়িক প্রবণতা। দীর্ঘমেয়াদে স্বর্ণের দাম চাঙ্গা থাকতে পারে।

একই সম্ভাবনার কথা বলছেন ওনাডা করপোরেশনের জ্যেষ্ঠ বাজার বিশ্লেষক জেফরি হ্যালি। তিনি বলেন, অর্থনীতিতে অনিশ্চিত পরিস্থিতি স্বর্ণে বিনিয়োগের সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। করোনা মহামারীতে চরম অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। তাই বিনিয়োগকারীরা তুলনামূলক নিরাপদ বিবেচনা করে স্বর্ণে বিনিয়োগ বাড়িয়েছেন। পরিস্থিতি আগামী দিনগুলোয় স্বর্ণের বাজার আরো চাঙ্গা করতে পারে।

করোনাকালে স্বর্ণে বিনিয়োগে নতুন রেকর্ড হয়েছে। ডব্লিউজিসির তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি-জুলাই সময়ে বিশ্বজুড়ে এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড (ইটিএফ) খাতে সব মিলিয়ে হাজার ৭৮৫ টন স্বর্ণ কেনা হয়েছে। ইতিহাসে এটাই ইটিএফ হিসেবে স্বর্ণ কেনার সর্বোচ্চ পরিমাণ। এর মধ্যে শুধু জুলাইতেই ইটিএফ খাতে মূল্যবান ধাতুটির চাহিদা দাঁড়িয়েছে ১৬৬ টনে, যার বাজারমূল্য ৯৭০ কোটি ডলার। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১১৭ দশমিক টন স্বর্ণ যুক্ত হয়েছে উত্তর আমেরিকার দেশগুলোর ইটিএফ খাতে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন