সরকারের পতন: লেবাননের সামনে কী অপেক্ষা করছে

বণিক বার্তা ডেস্ক

গত সপ্তাহে বৈরুতের ভয়াবহ বিস্ফোরণ লেবাননকে এক নতুন সংকট রাজনৈতিক বাস্তবতার সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। বিস্ফোরণের মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে নিজেদের ব্যর্থতা স্বীকার করে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে সরকার। এখন নতুন করে জাতীয় ঐকমত্যের সরকার গঠনের আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছে লেবাননের সংবাদ মাধ্যমগুলো। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, লেবাননের শাসন ব্যবস্থায় একটি সত্যিকার রূপান্তর বা বদল দরকার। খবর আরব নিউজ রয়টার্স।

সোমবার রাতে পদত্যাগের ঘোষণা দেয় প্রধানমন্ত্রী হাসান দিয়াব নেতৃত্বাধীন সরকার। এক সপ্তাহ আগের বিস্ফোরণের জেরে সৃষ্ট বিক্ষোভে হাসান দিয়াব, হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নসরুল্লাহ অন্য নেতাদের কড়া সমালোচনা করা হয়। এখন বিক্ষোভকারীদের দাবি অনুযায়ী ব্যর্থ সরকারের পদত্যাগে লেবাননে কী ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে? এমন প্রশ্নে অবশ্য আশার বাণী শোনাচ্ছেন না বিশ্লেষকরা।

যতক্ষণ দুর্নীতিগ্রস্ত একই এলিট শাসক শ্রেণীর হাতেই ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ থাকবে, ততক্ষণ একটার পর একটা সরকার এলেও এমনকি সেটা জাতীয় ঐকমত্যের সরকার হলেও শেষ পর্যন্ত কোনো সমাধান আসবে না।

লেবাননের জনগণ দীর্ঘদিন ধরে সরকারের যথার্থ দায়বদ্ধতা জবাবদিহিতা এবং তাদের রাজনৈতিক অর্থনৈতিক এলিট শ্রেণীর বদল দাবি করে আসছে। একই দাবিতে গত বছরও বৈরুতের রাস্তায় বড় ধরনের বিক্ষোভ দেখায় লেবানিজরা। পতন ঘটে সাবেক প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরির সরকারের।

কয়েক মাসের রাজনৈতিক টানাপড়েনের পর চলতি বছরের জানুয়ারিতে সরকার গঠিত হয়। অর্থনৈতিক সংকট উত্তরণ, দুর্নীতির মূলোৎপাটন আর সরকার ব্যবস্থায় পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় বসেন প্রধানমন্ত্রী হাসান দিয়াব।

দুর্নীতি, সরকারি অব্যবস্থাপনা মুদ্রাস্ফীতি আগে থেকেই লেবাননের জনগণের ধৈর্যের পরীক্ষা নিচ্ছিল। গত সপ্তাহে বৈরুতের বন্দরে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের বিস্ফোরণে মানুষের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যায়।

পরিবর্তনের আশায় ফের রাজপথে নামে তারা। এর ফলে সরকারের পতন হয়েছে ঠিক, জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা এখনো পূরণ হয়নি। সেই একই সমস্যা নিয়ে এক ধরনের সরকার পেতে যাচ্ছে দেশবাসী। লেবাননের সব দলের মধ্যে ঐকমত্যের জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে ফ্রান্স যুক্তরাষ্ট্র। এতে সমর্থন দিচ্ছে আরব দেশগুলোও। এর ফলে শিগগিরই একটি ঐকমত্যের সরকার দেখতে যাচ্ছে লেবাননের জনগণ।

লেবাননে নতুন ভূমিকা নেয়ার ক্ষেত্রে ফ্রান্সকেই অগ্রণী মনে হচ্ছে। বিস্ফোরণের দুদিন পরই ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁর বৈরুত সফরের মধ্য দিয়ে তা স্পষ্ট হয়েছে। এছাড়া লেবাননের সহযোগিতায় গত রোববার দাতাগোষ্ঠীগুলো নিয়ে একটি সম্মেলনও করেছেন তিনি, যাতে দাতাগোষ্ঠীগুলো বৈরুতের পুনর্গঠনে ২৫ কোটি ইউরো সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তা লেবাননের দরকার এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু দেশের ওপরের স্তরের কর্তাব্যক্তিরা, যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মর্মান্তিক ঘটনার জন্য দায়ী, তারা যেন সহায়তাকে জনরোষ থেকে নিজেদের বাঁচানোর হাতিয়ার না বানান, তা নিশ্চিত করতে হবে।

যদিও দৃশ্যত মনে হচ্ছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিস্ফোরণকে নিতান্তই বৈরুতের এক মানবিক সংকট হিসেবে দেখছে। বর্তমান সংকটের পেছনে লেবাননের রাজনীতিবিদদের ভূমিকা নিয়ে কোনো প্রশ্ন না তুলে সহায়তা করলে তাতে জনগণের উপকার নয়, প্রকারান্তরে ক্ষতিই হবে। এতে দুর্নীতিবাজ প্রভাবশালী শ্রেণীর মানুষ জবাবদিহি দায়দায়িত্ব এড়ানো, দেশে অবকাঠামোগত সংস্কারকাজ বাস্তবায়ন না করার আরেক সুযোগ পাবে।

কারণে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যদি লেবাননবাসীকে প্রকৃতই সহায়তা করতে চায়, তবে শুধু সহায়তা পাঠালেই হবে না। তাদের স্বীকার করে নিতে হবে যে বৈরুতে আগস্ট যা ঘটেছে, তা সরকারের অবহেলা, অযোগ্যতা দুর্নীতির কারণেই হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন