২০১৯-২০ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ

অর্থনীতি পুনরুজ্জীবনে জোর দেয়া হোক

টানা কয়েক বছর ঊর্ধ্বমুখী থাকার পর দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার শতাংশের ঘরে নেমে এসেছে। এজন্য করোনার প্রভাবই দায়ী। ২০০৩ সালের পর বাংলাদেশে কখনই শতাংশের নিচে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়নি। কয়েক বছর ধরেই তা পর্যায়ক্রমে শতাংশের ঘর অতিক্রম করে সর্বশেষ গত অর্থবছর দশমিক শতাংশে পৌঁছে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার। দুই-তিন বছরের মধ্যেই দুই অংকের ঘরে পৌঁছানোর পরিকল্পনা ছিল সরকারের। গত কয়েক শতকের তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, হয় চাহিদা নয় সরবরাহ দুর্বলতার কারণে বৈশ্বিক মহামন্দাগুলো হয়েছে। কিন্তু নভেল করোনাভাইরাসের কারণে চাহিদা সরবরাহ দুটোতেই ব্যাঘাত ঘটেছে। বাংলাদেশের উৎপাদন ব্যবস্থায় বৈশ্বিক জোগান, বিশেষ করে আমদানি যেমন বিঘ্নিত হয়েছে, তেমনি দেশীয় জোগানও ব্যাহত হচ্ছে। দেশের উৎপাদনশীল খাত অনেকটাই ম্রিয়মাণ। যত দ্রুত সম্ভব কভিড-১৯ টেস্টিং, ট্রেসিং ট্রিটমেন্টের আওতায় আনতে হবে। পিছিয়ে পড়া মানুষের ক্ষুধা নিবারণ করতে হবে দ্রুত দক্ষতার সঙ্গে। উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে ক্ষুদ্র মাঝারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। আর সামনের কৃষি মৌসুমে উৎপাদন ঠিক রাখতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

অর্থনীতির বেশকিছু দুর্বলতা এরই মধ্যে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। স্বাভাবিক সময়েই ক্ষুদ্র মাঝারি শিল্পের প্রধান সমস্যাই হচ্ছে অর্থায়নের, অর্থাৎ ব্যাংক থেকে ঋণ না পাওয়া। আর এখন ব্যাংকঋণনির্ভর প্রণোদনার ভাগ তারা কীভাবে পাবেন, তাও জানা নেই। সরকার বা অর্থমন্ত্রী সবচেয়ে বেশি ভরসা করে আছেন ব্যাংক ব্যবস্থার ওপর। খেলাপি ঋণসহ সুশাসনের অভাবের কারণে দেশের ব্যাংক খাতের দুর্বলতা সবারই জানা। ৪০ বছরেও দেশের প্রধান রফতানি খাত তৈরি পোশাকের ভিত সবল হয়নি। এক দশকের উচ্চ প্রবৃদ্ধির মধ্যেও অর্থনীতির আরেকটি বড় দুর্বলতার নামকর্মসংস্থানহীন প্রবৃদ্ধি করোনায় বেকারত্বের সংখ্যা আরো বেড়েছে। ফলে সৃষ্টি করতে হবে নতুন কর্মসংস্থান। আর এজন্য লাগবে নতুন বিনিয়োগ। কিন্তু চাহিদা না থাকলে নতুন বিনিয়োগ তো হবে না, বিদ্যমান বিনিয়োগও অলস বসে থাকবে। চাহিদা বাড়ানো হবে অর্থনীতির জন্য সামনের দিনের প্রধানতম কাজ। আর চাহিদা তখনই বাড়বে, যখন মানুষের হাতে টাকা থাকবে। একই সঙ্গে নতুন বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য পরিবেশও উন্নত করতে হবে। প্রবাসী শ্রমিকদের কাজ কমে গেলে বা ফিরে আসতে হলে গ্রামাঞ্চলে চাহিদার ওপর বিশাল আঘাত নেমে আসবে। এটিও ঘটবে। সব মিলিয়ে সংকট বহুমাত্রিক। ফলে সামগ্রিকভাবেই মানুষের হাতে অর্থ থাকার কাজটি সরকারের পরিকল্পনার একটি বড় অংশ জুড়েই থাকতে হবে।

কভিড-১৯ মোকাবেলার পর সার্বভৌম ঋণ ব্যবস্থাপনা টেকসই করতে হবে। এজন্য কার্যকর রাজস্ব নীতি এবং ঋণ পরিত্রাণের উদ্যোগ নিতে হবে। বর্তমান সংকটের বাইরের দৃষ্টিভঙ্গি দিতে হবে। এছাড়া সম্ভাব্য সুযোগগুলো বিশেষ করে লেনদেন পরিশোধে ডিজিটাল প্রযুক্তির সম্প্রসারণ করতে হবে। জনগণ, বিশেষ করে দরিদ্রতম হতদরিদ্র মানুষকে রক্ষা করতে উদ্যোগ নিতে হবে। দক্ষিণ এশিয়ায় আটটি দেশের সবগুলোরই অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ হয়ে যাওয়া, বাণিজ্যিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়া এবং আর্থিক ব্যাংকিং খাতে আরো বেশি চাপের মধ্যে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। সরকার করোনার অর্থনৈতিক ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। অর্থনীতির ভবিষ্যৎ অগ্রগতি প্রণোদনার সুষ্ঠু ব্যবহারের ওপরও অনেকাংশে নির্ভর করছে।

করোনা মহামারীর সময়ে সরকারের মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত দরিদ্র ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে কীভাবে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেয়া যায়, সেদিকে গুরুত্ব দেয়া, অর্থনীতি পুনরুদ্ধার এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে আবারো গতি ফিরিয়ে আনা। করোনায় আক্রান্ত বিশ্বের উন্নত, উন্নয়নশীল স্বল্পোন্নত সব দেশ, যারা অর্থনৈতিকভাবে চাপে রয়েছে, তারা জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে চিন্তিত নয়। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান জিডিপির যে পূর্বাভাস দিয়েছে, তাতে দেখা গেছে অনেক বড় অর্থনীতির দেশও নেতিবাচক প্রবৃদ্ধির দিকে যাচ্ছে। একই অবস্থা আমাদের প্রতিবেশী ভারত বড় অর্থনীতির দেশ চীনে। ফলে প্রবৃদ্ধির হার নিয়ে চিন্তার চেয়ে এখন সবচেয়ে বেশি জরুরি মানুষের জীবন ধারণ আয় বাড়ানোর পদক্ষেপ নেয়া। এখন আমাদের ক্ষয়ক্ষতি কমানো এবং অর্থনীতি পুনরুজ্জীবনে নজর দেয়া উচিত।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন