আমানত ফেরত পেতে প্রতারকের খপ্পরে পিপলস লিজিংয়ের গ্রাহকরা

নিহাল হাসনাইন

নভেল করোনাভাইরাসের কারণে তীব্র আর্থিক সংকটে পড়ে আমানতের অর্থ উত্তোলনের জন্য দ্বারে দ্বারে ধর্ণা দিচ্ছেন পিপলস লিজিংয়ের গ্রাহকরা তাদের অনেকেই আবার আর্থিকভাবেও প্রতারণার শিকার হচ্ছেন সর্বশেষ ধরনের প্রতারণার শিকার হয়ে মামলা করেছেন মোহাম্মদ আতিকুর রহমান নামে এক আবাসন ব্যবসায়ী

জানা গেছে, গত ৩১ জুলাই গুলশান থানায় মামলা করেন আবাসন প্রতিষ্ঠান প্রিন্স রিয়েল এস্টেট (প্রা.) লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আতিকুর রহমান আতিক তিনি পিপলস লিজিংয়ে ব্যক্তি ক্ষুদ্র আমানতকারী পরিষদেরও প্রধান সমন্বয়কারী

এজাহারে আতিকুর রহমান উল্লেখ করেন, ২০১৭ সালে তিনি নিজের মালিকানাধীন আবাসন প্রতিষ্ঠানের মূলধনের অর্থ পিপলস লিজিংয়ে এফডিআর করেন কিন্তু আর্থিক খাতের প্রতিষ্ঠানটি সময়মতো এফডিআরের অর্থ ফেরত না দেয়ায় আবাসন প্রতিষ্ঠানটি বিরাট আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে বর্তমান করোনা মহামারীর কারণে তিনি অন্য আমানতকারীরা তীব্র আর্থিক সংকটের সম্মুখীন হয়ে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে অর্থছাড়ের অনুরোধ জানিয়ে আবেদন করেন গত জুন আবেদনটি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে গ্রহণ করা হয়

প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পিপলস লিজিংয়ের ক্ষতিগ্রস্ত আমানতকারীদের আবেদন গ্রহণ করার পর গত জুলাই তোফাজ্জল হোসেন মিয়া নামের এক ব্যক্তি নিজেকে সচিব পরিচয় দিয়ে ফোন করেন ওই ব্যক্তি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পিপলস লিজিংয়ের ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের পক্ষ থেকে জমা দেয়া আবেদনসহ ফাইলটি তার দায়িত্বে রয়েছে ফাইলের বিস্তারিত তথ্য জানিয়ে সহযোগিতার ইচ্ছাও প্রকাশ করেন তোফাজ্জল হোসেন এর দুইদিন পর ফোন করে জানান, আবেদনের ফাইলটি দ্রুত সম্পূর্ণ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাঠিয়ে দেবেন এতে করে ক্ষতিগ্রস্ত আমানতকারীরা দ্রুত তাদের অর্থ ফেরত পাবেন এরপর কথা প্রসঙ্গে তোফাজ্জল হোসেন জানান, তার গ্রামের বাড়ি পিরোজপুরে একটি মসজিদ মাদ্রাসা নির্মাণ করছেন সেখানে অর্থ সহায়তা করলে তিনি খুশি হবেন 

আতিকুর রহমান জানান, তোফাজ্জল হোসেন মসজিদ মাদ্রাসার নির্মাণকাজে সহায়তার জন্য দুটি বিকাশ নম্বর পাঠান নম্বর দুটিতে ৫০ হাজার টাকা পাঠানোর পর তিনি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের প্যাডে সিলসহ লিখিতভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে পত্র পাঠান পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন প্রয়োজনের কথা বলে তোফাজ্জল হোসেন তার কাছ থেকে বিকাশ এসএ পরিবহনের মাধ্যমে মোট লাখ ৭৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন

মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করে গুলশান থানার ওসি এসএম কামরুজ্জামান বণিক বার্তাকে বলেন, আর্থিক প্রতারণার শিকার হয়ে আবাসন ব্যবসায়ী আতিকুর রহমান একটি মামলা দায়ের করেছেন পিপলস লিজিংয়ে তার আমানত ছিল আমানতের অর্থ ফেরত পেতে তিনি বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেছিলেন সেখান থেকেই প্রতারক চক্র তাকে টার্গেট করে এবং পরবর্তী সময়ে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে তার কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে

তবে শুধু আতিকুর রহমানই নন, আমানতের টাকা ফিরে পেতে এভাবে আর্থিক প্রতারণা হয়রানির শিকার হয়েছেন পিপলস লিজিংয়ের আরো অনেক গ্রাহক এমনই একজন মো. গিয়াস উদ্দিন তিনি জানান, আমানতের অর্থ ফিরে পেতে প্রথমে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে যাই সেখান থেকে বলা হয় অর্থ মন্ত্রণালয়ে যেতে অর্থ মন্ত্রণালয়ে ফাইল জমা দিতে গেলে তারা জানান, সেখানে নয়, আবেদন করতে হবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পুরো প্রক্রিয়ার প্রতিটি ধাপে টাকা দিতে হয়েছে কিন্তু তার পরও আমানতের অর্থ এখনো ফিরে পেলাম না 

সর্বশেষ নিরীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী, পিপলসের কাছে বিভিন্ন গ্রাহকদের পাওনার পরিমাণ হাজার ৯৯৬ কোটি টাকা বিপরীতে বিভিন্ন ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের কাছে পিপলস লিজিংয়ের পাওনা হাজার ৮১২ কোটি টাকা

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন