শেয়ার মানি ডিপোজিট

শেয়ার ইস্যুর জন্য ১৪ মাস সময় চায় বিএসসিসিএল

নিজস্ব প্রতিবেদক

শেয়ার মানি ডিপোজিটের বিপরীতে সরকারের অনুকূলে শেয়ার ইস্যুর জন্য ১৪ মাস সময় চেয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিসিএল) বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট প্রকল্প অডিট অধিদপ্তরের (ফাপাড) কাছ থেকে অডিট আপত্তি নিষ্পত্তির পাশাপাশি কোম্পানির পর্ষদ, মন্ত্রণালয়, শেয়ারহোল্ডার, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মস (আরজেএসসি) সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি অব বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) কাছ থেকে শেয়ার ইস্যুর জন্য প্রয়োজনীয় অনুমোদন প্রস্তুতি সম্পন্নের জন্য সময় চেয়েছে কোম্পানিটি। সম্প্রতি ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের (এফআরসি) কাছে শেয়ার মানি ডিপোজিটের বিপরীতে শেয়ার ইস্যু এবং -সংক্রান্ত কিছু বিষয়ে গাইডলাইন চেয়ে চিঠি দিয়েছে বিএসসিসিএল।

চলতি বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি শেয়ার মানি ডিপোজিট সংক্রান্ত এফআরসির প্রজ্ঞাপনের পরিপ্রেক্ষিতে সাবমেরিন কেবল শেয়ার ইস্যুর বিষয়টি নিয়ে এফআরসির দ্বারস্থ হয়। বছরের ২৯ জুলাই শেয়ার মানি ডিপোজিটের বিষয়ে নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করে এফআরসির কাছে চিঠি দেয় কোম্পানিটি। চিঠিতে বলা হয়, বিএসসিসিএলইনস্টলেশন অ্যান্ড এস্টাবলিশমেন্ট অব সেকেন্ড সাবমেরিন কেবল সিস্টেম (এসএমডব্লিউ-) ফর ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইন বাংলাদেশশীর্ষক উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় সরকারের কাছ থেকে ২০১৫-১৬ ২০১৬-১৭ অর্থবছরে মোট ১৬৬ কোটি টাকা ইকুইটি মানি পায়। পরবর্তী সময়ে ফাপাড গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর সরকারি তহবিলের ৮৫ কোটি ৭২ লাখ টাকা অতিরিক্ত ব্যয় নিয়ে অডিট আপত্তি উত্থাপন করে এবং অতিরিক্ত ব্যয় করা অর্থ সরকারের তহবিলে ফেরত দেয়ার জন্য সুপারিশ করে। বিএসসিসিএলের পক্ষ থেকে অডিট আপত্তি নিষ্পত্তির জন্য যৌক্তিকতাসহ অডিট আপত্তির জবাব দেয়া হয়, যা বর্তমানে ফাপাডের বিবেচনাধীন রয়েছে। বিএসসিসিএলের জবাব ফাপাড কর্তৃক গৃহীত হলে অর্থ ফেরত দিতে হবে না এবং সরকারের কাছ থেকে পাওয়া পুরো অর্থের বিপরীতে শেয়ার ইস্যু করা সম্ভব হবে। আর যদি বিএসসিসিএলের জবাব ফাপাড কর্তৃক গৃহীত না হয় তাহলে কোম্পানিটিকে অর্থ ফেরত দিতে হবে এবং ইকুইটি হিসেবে দেয়া বাকি অর্থের বিপরীতের সরকারের অনুকূলে শেয়ার ইস্যু করতে হবে।

এর পরিপ্রেক্ষিতে বিএসসিসিএলের পক্ষ থেকে এফআরসির প্রজ্ঞাপনের বেশকিছু বিষয় পরিপালনের বিষয়ে তাদের অবস্থান তুলে ধরা হয়। শেয়ার মূলধন খাতে প্রাপ্ত অর্থ যা শেয়ার মানি ডিপোজিট বা অন্য কোনো নামে মূলধন বা ইকুইটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, তা কোনোভাবেই প্রত্যাহার বা ফেরতযোগ্য হবে না বলে এফআরসির প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে। বিষয়ে বিএসসিসিএলের অবস্থান হচ্ছে ফাপাড কর্তৃক অডিট আপত্তি নিষ্পত্তি করার পরই উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় সরকারের কাছ থেকে ইকুইটি খাতে পাওয়া অর্থের পরিমাণ চূড়ান্ত করা সম্ভব হবে। বিএসসিসিএলের পক্ষ থেকে দ্রুত অডিট আপত্তি নিষ্পত্তির জন্য ফাপাডের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে। কভিড-১৯-এর কারণে সীমিত পর্যায়ে অফিস কার্যক্রম চালু থাকায় বিষয়ে সিদ্ধান্ত পেতে কিছুটা দেরি হচ্ছে। অডিট আপত্তি নিষ্পত্তির পর পরই শেয়ার ইস্যুর জন্য বিএসইসির অনুমোদনের জন্য আবেদন করা হবে। তাছাড়া ইকুইটি মানি হিসেবে প্রাপ্ত অর্থের বিপরীতে শেয়ার ইস্যু করতে হলে তালিকাভুক্ত কোম্পানি হিসেবে বিএসসিসিএলকে নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রস্তুত, সম্পদ মূল্যায়ন, সাধারণ সভার মাধ্যমে শেয়ারহোল্ডারদের অনুমতি, সরকারের অনুমতিসহ বেশকিছু ব্যয়বহুল সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে বিএসইসির অনুমোদন সাপেক্ষে শেয়ার ইস্যু করতে হবে। কারণে কোম্পানিটি ফাপাড কর্তৃক অডিট আপত্তি নিষ্পত্তির পর শেয়ার ইস্যুর প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য এফআরসির কাছে অনুমতি চেয়েছে।

এফআরসির প্রজ্ঞাপন অনুসারে শেয়ার মানি ডিপোজিট হিসেবে প্রাপ্ত অর্থ সর্বোচ্চ ছয় মাসের মধ্যে আইনগতভাবে শেয়ার মূলধনে রূপান্তর করতে হবে। বিষয়ে বিএসইসিসিএলের অবস্থান হচ্ছে আনুষঙ্গিক সব প্রক্রিয়ার সম্পন্ন করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেয়ার ইস্যু করা সম্ভব হবে না। তাছাড়া জটিলতা এড়াতে ফাপাড কর্তৃক অডিট আপত্তি নিষ্পত্তির পর ইকুইটি মানির পরিমাণ নিশ্চিত হয়ে শেয়ার ইস্যু করতে চায় কোম্পানিটি। এজন্য অডিট আপত্তি নিষ্পত্তির তারিখ থেকে পরবর্তী ছয় মাসের মধ্যে শেয়ার ইস্যুর কার্যক্রম শুরুর জন্য এফআরসির অনুমতি চাইছে কোম্পানিটি। অবশ্য শেয়ার ইস্যুর জন্য বিএসইসির অনুমোদন নেয়ার জন্য এরই মধ্যে আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্টকে ইস্যু ব্যবস্থাপক হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিএসসিসিএল।

শেয়ার মূলধনে রূপান্তরের আগ পর্যন্ত ওই তহবিল সম্ভাব্য শেয়ার মূলধন হিসেবে বিবেচিত হবে এবং সে অনুসারে শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) গণনায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে বলে এফআরসির প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু বিষয়ে বিএসসিসিএলের অবস্থান হচ্ছে অডিট আপত্তি নিষ্পত্তির আগে তহবিলের মোট পরিমাণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। তাছাড়া উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় সরকারের কাছ থেকে ইকুইটি মানি হিসেবে পাওয়া ১৬৬ কোটি টাকা দেয়ার সময় ডিপিপিতে এর ইস্যু ভ্যালু নির্ধারিত ছিল না। অবস্থায় প্রস্তাবিত ইস্যু মূল্য নির্ধারণের জন্য নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রস্তুত করা, সম্পদ মূল্যায়ন, ইস্যুমূল্য সম্পর্কে সরকারের অনুমোদন নেয়া, বার্ষিক বা বিশেষ সাধারণ সভার মাধ্যমে শেয়ারহোল্ডারদের অনুমতি এবং বিএসইসির অনুমোদন নিয়ে ২০১৯-২০ অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদনে ইকুইটি হিসেবে প্রাপ্ত অর্থ শেয়ার মূলধনে রূপান্তরের আগ পর্যন্ত তহবিল সম্ভাব্য শেয়ার মূলধন হিসেবে বিবেচনা করা এবং সে অনুসারে ইপিএস গণনায় অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হবে না বলে মনে করছে কোম্পানিটি। তাই জটিলতা এড়াতে ফাপাড কর্তৃক অডিট আপত্তি নিষ্পত্তির পর ইকুইটি মানির পরিমাণ নিশ্চিত হয়ে কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন, সম্পদ মূল্যায়ন, শেয়ারপ্রতি গড় বাজার দর ইত্যাদি বিবেচনা করে ইস্যু মূল্য নির্ধারণ করতে চাইছে বিএসসিসিএল। তাছাড়া নির্ধারিত ইস্যু মূল্য সম্পর্কে সরকার শেয়ারহোল্ডারদের অনুমতি না নিয়ে ইপিএস গণনা করা হলে পুঁজিবাজারে বিরূপ প্রভাব পড়ার পাশাপাশি বর্তমান শেয়ারহোল্ডারদের ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছে কোম্পানিটি। অবস্থায় ফাপাড কর্তৃক অডিট আপত্তি নিষ্পত্তির পর ইস্যু ভ্যালু নির্ধারণের বিষয়ে সরকারের সম্মতি সাপেক্ষে ইকুইটি মানি শেয়ার মূলধনে রূপান্তরের আগ পর্যন্ত তহবিল সম্ভাব্য শেয়ার মূলধন হিসেবে বিবেচনা করা এবং সে অনুসারে ইপিএস গণনায় অন্তর্ভুক্ত না করার বিষয়ে এফআরসির অনুমতি চেয়েছে বিএসসিসিএল।

এসব বিষয় নিয়ে বছরের আগস্ট এফআরসির কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিএসসিসিএলের একটি অনির্ধারিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় এফআরসির পক্ষ থেকে যৌক্তিকতাসহ সময় বাড়ানোর আবেদন এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে গাইডলাইন চেয়ে আবেদন করার পরামর্শ দেয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে সভার পরদিনই বিষয়ে এফআরসিতে একটি চিঠি পাঠায় বিএসসিসিএল। চিঠিতে আনুষঙ্গিক সব প্রক্রিয়া সম্পন্নের জন্য ন্যূনতম ১৪ মাস সময় চাওয়া হয়। পাশাপাশি বাস্তবতা বিবেচনায় শেয়ার ইস্যু মূল্য নির্ধারিত না থাকা অবস্থায় ইস্যু মূল্য নির্ধারণ ইপিএস গণনার বিষয়ে এফআরসির গাইডলাইন চেয়েছে বিএসসিসিএল।

জানতে চাইলে এফআরসির নির্বাহী পরিচালক সাঈদ আহমেদ এফসিএ বণিক বার্তাকে বলেন, সাবমেরিন কেবলের আবেদন আমরা পেয়েছি। যেহেতু শেয়ার মানি ডিপোজিটের বিষয়ে কাউন্সিলের পক্ষ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে, তাই কোনো বিষয়ে ছাড় কিংবা সময় বাড়াতে হলে কাউন্সিল সভার মাধ্যমে অনুমোদন নিতে হবে। এফআরসির পরবর্তী কাউন্সিল সভায় বিষয়টি উত্থাপন করা হবে বলে জানান তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন