মৌলভীবাজারের কুলাউড়া-রবিরবাজার-টিলাগাঁও বাজার সড়ক সংস্কারে ধীরগতির কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।
এরই মধ্যে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও অর্ধেক সংস্কারকাজ বাকি রয়েছে।
বর্ষায় সংস্কারাধীন সড়কে পানি জমে চলাচল মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সংশিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের খামখেয়ালি আর সড়ক বিভাগের নিষ্ক্রিয়তার কারণে দীর্ঘদিন থেকে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
বিশেষ করে রোগী পরিবহনের ক্ষেত্রে ভোগান্তির মাত্রা বেড়ে যায় দ্বিগুণ।
মৌলভীবাজার সড়ক ও জনপথ (সওজ) সূত্র জানায়, সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় কুলাউড়া উপজেলা সদরের নবীন চন্দ্র মডেল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে পৃথিমপাশা ইউনিয়নের রবিরবাজার হয়ে ঢিলেরপার বাজার পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার এবং রবিরবাজার-টিলাগাঁও বাজার সড়কের চার কিলোমিটার সড়ক দীর্ঘদিন থেকে ভাঙাচোরা।
সড়ক মেরামত ও প্রশস্তকরণের জন্য ৩৮ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প পাস হয়।
দেড় বছর মেয়াদের এ প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায় ঢাকার ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশন নামক একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
২০১৯ সালের জানুয়ারিতে তারা সড়কের কাজ শুরু করে।
চলতি বছরের ৩০ জুন প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও এখন পর্যন্ত সড়কের ৪০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি।
সরেজমিন দেখা যায়, বৃষ্টির পানিতে রাস্তাটি জল-কাদায় মাখামাখি।
বিভিন্ন স্থানে তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্ত।
এর মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে চলছে ছোট-বড় যানবাহন।
দুর্ভোগ রয়েছে যাত্রী ও মালামাল পরিবহনেও।
যাত্রী, চালক ও স্থানীয়রা জানান, সীমান্তবর্তী এ এলাকার রাউত্গাঁও, পৃথিমপাশা, কর্মধা, টিলাগাঁও ও হাজীপুর ইউনিয়নের মানুষের জেলা ও উপজেলার সঙ্গে যোগাযোগের প্রধান রাস্তা এটি।
প্রতিদিন লক্ষাধিক মানুষ যাতায়াত করে এ সড়কে।
কিন্তু দীর্ঘদিন থেকে রাস্তা সংস্কারের নামে মানুষকে ভোগান্তিতে ফেলেছে সংশ্লিষ্টরা।
গত বছরই রাস্তার কাজ শেষ করা সম্ভব ছিল কিন্তু ঠিকাদারের খামখেয়ালি আর অবহেলায় বিলম্বিত হচ্ছে রাস্তার কাজ।
বাড়তি সময় ব্যয়ের পাশাপাশি বেড়েছে পরিবহন ভাড়াও।
সড়কে প্রতিদিন চলাচলকারী হাজীপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মোক্তাদির চৌধুরী ও লংলা আধুনিক ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক গায়ত্রী চক্রবর্ত্তী জানান, ১০ কিলোমিটার সড়ক অতিক্রম করে প্রতিষ্ঠানে যেতে সময় লাগে দেড় ঘণ্টা।
একবার গেলে আর ফিরে আসতে মন চায় না।
তবুও প্রাতিষ্ঠানিক কাজে প্রতিদিন যেতে হয়।
পৃথিমপাশা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নবাব আলী বাকর খান জানান, আমাদের ইউনিয়নসহ আশপাশের পাঁচ ইউনিয়নের লোকজন এ সড়ক ব্যবহার করেন।
কাজের ধীরগতির কারণে এ সড়কে চলাচলকারীরা প্রতিনিয়ত পোহাচ্ছেন দুর্ভোগ।
দ্রুত কাজ শেষ করার জন্য মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছেন স্থানীয়রা।
কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকল্প ম্যানেজার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, করোনাকালীন কাজে ধীরগতি হয়েছে এটা স্বীকার করছি।
কুলাউড়া-পৃথিমপাশা সড়কের তিন কিলোমিটার জায়গা পাকার কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
এছাড়া কুলাউড়া-পৃথিমপাশা ও রবিরবাজার-টিলাগাঁও বাজার সড়কের কাজ ৪০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে।
সড়কগুলোর কাজে প্রচুর পাথর লাগে।
কিন্তু এলসির মাধ্যমে পাথর সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।
কোথাও পাথর পাওয়া যাচ্ছে না।
ফলে সড়কগুলোর অবশিষ্ট অংশে পাথরের স্তর দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
আশা করছি, আগামী দুই মাসের মধ্যে সড়কের কাজ সম্পন্ন হবে।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের মৌলভীবাজার কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউন থাকার কারণে সড়কগুলোর কাজে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটেছে।
বর্তমানে বর্ষা শুরু হওয়ায় সড়কে বিটুমিনের কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না।
তাছাড়া করোনা পরিস্থিতিতে সরকার এখন চলমান সব কাজের মেয়াদ বাড়িয়ে দিয়েছে।
তারপরও কাজ দ্রুত শেষ করতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বলা হয়েছে।